৯ লাখ টাকার সালামি আর মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাড়ায় বান্দরবান শহরের লালমোহন বাহাদুর বাগান এলাকায় ছোট একটি রিসোর্টের ব্যবসা শুরু করেন সোহেল কান্তি নাথ। তবে দু’বছর ধরে বান্দরবানে সন্ত্রাসী তৎপরতা আর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটক কমে গেছে তার ‘স্বপ্ন বিলাসে’। তাই ব্যবসায় লাভের মুখ দেখা দূরের কথা- ভাড়ার টাকা উঠাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে এই তরুণ উদ্যোক্তাকে।
শুধু সোহেল কান্তি নাথ নন- বান্দরবান শহরের প্রায় সব রিসোর্টের মালিকের অবস্থা এখন এমনই। এ কারণে অনেক উদ্যোক্তা রিসোর্ট বন্ধ করে দিচ্ছেন। খরচ কমাতে কেউ কেউ কর্মচারী ছাঁটাই করে অর্ধেকে নামিয়ে আনছেন। রিসোর্ট ব্যবসায় নতুন নতুন বিনিয়োগও বন্ধ হয়ে গেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থান, রাজস্ব আহরণসহ সামগ্রিক পর্যটন খাতে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- বিশে^র বৃহত্তম সৈকতের শহর কক্সবাজারের কাছে হওয়ায় পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে বান্দরবান। বিশেষ করে দুর্গম এলাকার ঝর্ণা, নদী, পাহাড়ি গ্রাম ও প্রাণ-প্রকৃতি দেখতে প্রতিবছর লাখের বেশি পর্যটক ছুটে আসেন এখানে। গত এক যুগ ধরে কেবল পর্যটন ব্যবসার উপর ভর করেই ঘুরে দাঁড়ায় এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য। জেলা প্রশাসনের হিসাবে বান্দরবানে গড়ে উঠা পর্যটনকেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। এখানকার হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, পর্যটন পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়ি, ট্যুর গাইডসহ সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে কাজ করেন প্রায় ৫ হাজার লোক। ব্যবসা ভালো হওয়া নতুন নতুন উদ্যোক্তারা এখানে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করা শুরু করেন। তবে এখন সেখানে ছন্দপতন ঘটেছে।
পাহাড়ে গজিয়ে ওঠা সশস্ত্র সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ’র সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে দুই বছর ধরে বান্দরবানে পর্যটন ব্যবসায় মন্দা চলছে। এরমধ্যে সাম্প্রতিক কোটা বিরোধী আন্দোলনের কারণে দেশের সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ নেমে আসে এখানকার পর্যটন শিল্পে। সবদিক মিলিয়ে অস্থির হয়ে উঠে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক জীবনধারা। জেলার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, বান্দরবান শহরের আবাসিক হোটেলগুলোতে পাঁচ শতাধিক পর্যটক থাকতে পারে। এর বাইরে শতাধিক ছোট-বড় পর্যটন রিসোর্ট রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক অস্থিরতায় পুরো পর্যটন শিল্প এখন লোকসানে পড়েছে। শহরের কাছে পর্যটন মোটেলের তত্ত¡াবধায়ক মোহাম্মদ সোয়েব জানান, পর্যটকশূন্য থাকায় প্রতিমাসে কেবল পর্যটন শিল্পেই কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। শুধু পর্যটন মোটেলেই গত দু মাসে প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বান্দরবানের পর্যটন শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে।
সাজেকের মতো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বিশেষ প্রণোদনা বা সহজ শর্তে ঋণ, পর্যটক ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা সব জায়গা থেকে তুলে নিলে বান্দরবানে পর্যটক আবার ফিরবে বলে মনে করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। এতে এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা। জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, বান্দরবানের পর্যটন শিল্পকে আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে বেশ কিছু পরিকল্পনা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, সরকার এ বিষয়ে খুব দ্রুত উদ্যোগ নেবে। এর বাইরে যেসব পর্যটক বান্দরবানে ভ্রমণে আসছেন তাদের নিরাপত্তায় ও সার্বিক সহযোগিতায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পূর্বকোণ/এএইচ