চট্টগ্রাম বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

কক্সবাজারের পর্যটন খাত : ঘুরে দাঁড়ানোয় ৪ চ্যালেঞ্জ

এরফান হোছাইন, কক্সবাজার

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

সংকটের মুখে পড়েছে সৈকতের শহর কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প। রাজনৈতিক অস্থিরতা, জলাবদ্ধতা, পরিবেশ দূষণ এবং পর্যটকদের পর্যাপ্ত সুবিধার অভাব এই সংকট তৈরি করেছে। কেবল সংঘাতময় জুলাই-আগস্টেই ৮০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে নীতি সহায়তা পেলে আগামী শীতের মৌসুমে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।

 

 

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের কারণে কক্সবাজারে পর্যটনসহ মোট ১৫টি খাতে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ৩৫০টি রেস্তোরাঁয় দুই কোটি ৮০ লাখ, ৪৫০টি আবাসিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসে ৭৪ কোটি ৭০ লাখ, দূরপাল্লায় চলাচলকারী ৯০টি বাসে তিন কোটি ৮৯ লাখ, জেলার ভেতরে চলাচলকারী ১৬০টি বাসে ৭৭ লাখ, ভোগ্যপণ্যের এক হাজার দোকানে ৪০ কোটি দুই হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। এরবাইরে অন্যান্য দোকানে চার কোটি ৮০ লাখ, নির্মাণসামগ্রীর ৭০০ দোকানে ৩৫ কোটি, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ১৪৮ কোটি, উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানের চার কোটি আট লাখ, বার্মিজ মার্কেটের ৮০০ দোকানে ২০ কোটি, নগদ, বিকাশসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আট হাজার প্রতিষ্ঠানে ৩২০ কোটি, মৎস্য খাতে ২৫ কোটি ২০ লাখ, ৫০০ মোবাইলের দোকানে আট কোটি, পোল্ট্রি ফার্মে পাঁচ কোটি ২০ লাখ এবং ৩২টি জ্বালানি তেল ও ৫৫টি এলপিজি পাম্পে ৩ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

 

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে পর্যটক টানতে নানামুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পর্যটন দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে ৫০-৬০% ছাড়ের অফার চালু করে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন তারা। হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম এ তথ্য জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, পর্যটক টানতে পর্যটন দিবসে উপলক্ষে শহরের বিচ সংলগ্ন লাবণী পয়েন্টে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।অক্টোবরে একটি পর্যটন মেলা করার পরিকল্পনাও আমাদের আছে। মেলায় পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থা বিশেষ ছাড়সহ নানা আকর্ষণীয় অফার ঘোষণা করবে।

 

 

তবে কক্সবাজারের পর্যটন বিকাশে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি ও সঠিক পরিকল্পনা দরকার বলে মনে করেন মো. মুজিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, পর্যটন মানে শুধু হোটেল-রেস্তোরাঁ নয়, এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং একটি অঞ্চলের সম্ভাবনা তুলে ধরার একটি মাধ্যম। কক্সবাজারের পর্যটন বিকাশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন।পরিবেশবাদী নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর জানান, কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সম্পদ অপচয় ও অবহেলার কারণে বিপন্ন হচ্ছে। প্রতিদিন উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে সমুদ্র দূষিত হচ্ছে। পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা এবং পর্যটন স্থানগুলোর প্রচারের অভাবও পর্যটন শিল্পের বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পর্যটন কর্পোরেশনকে এ বিষয়ে দায়িত্ব নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

 

ভ্রমণ পিয়াসু মারজান আহমেদ জানান, আমরা থাইল্যান্ডের পাতায়া সমুদ্র সৈকতে দেখি, সেখানে সব সময় পর্যটকদের ভিড়। এটি সম্ভব হয়েছে সেখানে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে। অথচ আমাদের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে স্নান করতে গিয়ে প্রতিবছর মূল্যবান প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। সৈকতে স্নান করার জন্য তেমন কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। তিনি বলেন, পর্যটকদের বিনোদনের জন্য সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড তৈরি করা প্রয়োজন। এখানে সাগরতলের বৈচিত্র্যময় প্রাণিজগৎকে তুলে ধরা হবে। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সেখানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা যায়।

 

পর্যটন ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন জানান, কক্সবাজারে একসময় এখানে ১৩টি হোটেল ছিল। এখন হোটেল-মোটেল আছে ৫০০টির বেশি। এই শিল্পে গত তিন-চার বছরে প্রায় ১০-১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। কক্সবাজারের হোটেলগুলো যদি ভর্তি থাকে তাহলে সরকারকে প্রতিবছর এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব দিতে পারব। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসপি আবুল কালাম জানান, পর্যটকদের সেবা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের অর্থায়নে কক্সবাজার শহরে কলাতলী, বাস টার্মিনাল ও লাবণী পয়েন্টে তিনটি হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হবে। কমিউনিটি পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি। উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে নিরাপত্তা।

 

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট