চট্টগ্রাম-পটিয়া রুটে চলাচল করা একটি বাসে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন বোয়ালখালীর বিকাশ চৌধুরী। মা ও বোনকে নিয়ে থাকতেন নগরীর চকবাজার এলাকায়৷ একমাত্র সন্তান হওয়ায় বিকাশকে অনেকটা চোখে চোখেই রাখতেন মা মিনু চৌধুরী। সোমবার সকালে জ্বর উঠায় কাজে যেতে নিষেধ করেছিলেন। মায়ের নিষেধ সত্ত্বেও ‘মা, আমি আসি’ বলে বেরিয়ে যান তিনি। ‘আসি’ বলে বাসা থেকে বের হওয়া বিকাশ চৌধুরী আর কখনোই মায়ের কোলে ফিরবেন না৷ রাতে নগরীর বাকলিয়া থানার শাহ আমানত সেতু এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। নিহত বিকাশের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
এদিন রাত পৌনে ১ টার দিকে বিকাশের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ছুটে আসেন পঞ্চাশোর্ধ মিনু চৌধুরী। সঙ্গে থাকা বোনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কৌশলে মৃত্যু সংবাদ জানালেও মা মিনু চৌধুরীকে জানানো হয় বিকাশ চৌধুরী আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। তবুও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বসে ছটফট করতে থাকেন বৃদ্ধা মিনু চৌধুরী। চিকিৎসাধীন ছেলের কাছে যাওয়ার বায়না ধরেন তিনি। স্বজন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এসময় ছটফট করতে থাকা মিনু চৌধুরী বলেন, “পুতোরে মানা গইজ্জিলাম (ছেলেকে নিষেধ করেছিলাম), ও পুত, ন যাইস। জ্বর তোরতে (তোর জ্বর), ন যাইস। তোর বইনে (বোনে) যা আনে তা খাইস। পুতে গেইয়্যেগোই (চলে গেছে)। হইজে, ‘ও মা, আঁয় আই (মা, আমি আসি)।’ আই হই বাইর অই (বের হয়ে) গেল।”
দুর্ঘটনাস্থল থেকে বিকাশ চৌধুরীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবহন শ্রমিক ইমন খান মুন্না। তিনি জানান, বিকাশ তার পূর্বপরিচিত। সোমবার রাত সোয়া আটটার দিকে কাজ শেষে শাহ আমানত সেতু এলাকার একটি হোটেলে ভাত খাচ্ছিলেন তিনি। এসময় সেতুর দিক থেকে দ্রুতগতির একটি ইটবোঝাই ট্রাক একটি বাস, একটি মিনি ট্রাক, কয়েকটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়ে ঢুকে পড়ে ওই হোটেলে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বিকাশ। আহত হন এক ডজনের বেশি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নোবেল চাকমা দুর্ঘটনায় বিকাশ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।
পূর্বকোণ/এএইচ