নিজেদের গাওয়া চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার জনপ্রিয় ‘মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা’ গানের তালে নাচছেন একদল যুবক। প্রথম দেখায় আনন্দ উদযাপনের কোন আসর মনে হলেও ভুল ভাঙে একটু পর। নাচ-গানের এই আসরের কেন্দ্রে দেখা মেলে এক যুুবকের; লোহার ছোট ছোট দুটি খুঁটিতে দু’পাশ থেকে বাঁধা তার দুই হাত।
গানের তালে তালে লাঠি হাতে ওই যুবককে মারধর করছেন কয়েকজন। একপর্যায়ে ঝুলন্ত হাতেই নেতিয়ে পড়েন মারধরের শিকার যুবক। গানের ফাঁকে শিস দিয়ে তাল মেলান কয়েকজন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ২০ মিনিটের একটি ভিডিওতে নৃশংস এই দৃশ্যের দেখা মেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওতে মারধরের শিকার যুবকের নাম মো. শাহাদাত হোসেন (২৪)। তিনি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার বাসিন্দা। নগরীর কোতোয়ালী থানার বিআরটিসি এলাকায় স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করতেন তিনি। একই থানা এলাকার ফলমন্ডিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আর লোহার খুঁটি ও পেছনের ফ্লাইওভারের খুঁটিতে থাকা বিজ্ঞাপন বুথ দেখে মারধরের ঘটনাস্থলটি ২ নম্বর গেট মোড় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গেলো ১৪ আগস্ট নগরীর প্রবর্তক মোড়ের বদনা শাহ মাজার এলাকায় সড়কের পাশ থেকে শাহাদাতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, গত শনিবার ভিডিওটি প্রথম নজরে আসে। ভিডিও দেখে নিহত শাহাদাতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে ভুক্তভোগীর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে, শাহাদাত হোসেন নিহতের ঘটনায় ১৫ আগস্ট নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহতের বাবা মো. হারুন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৩ আগস্ট দুপুরে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হন শাহাদাত। সন্ধ্যা সাতটায় স্ত্রী শারমিনের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় শাহাদাতের। সেসময় কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় যাওয়ার কথা বলেছিলেন স্ত্রীকে। তবে গভীর রাতেও স্বামী বাসায় না আসায় খোজাখুঁজি শুরু করেন শারমিন। সেসময় শাহাদাতের মোবাইলফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন ফেসবুকে দেখে প্রবর্তক মোড়ের বদনা শাহ মাজার এলাকায় সড়কের পাশ থেকে নিথর অবস্থায় শাহাদাতকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান নিহতের বাবা। হাসপাতালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজধানী ঢাকার দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’জনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টির মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি নজরে আসে পুলিশের। এরপরই অভিযুক্তদের শনাক্তে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, ঘটনাটি ৫ আগস্টের কাছাকাছি সময়ের, ১৩ বা ১৪ আগস্টের। তখন পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ছিল। ভিডিওটি আমাদের নজরে আসার পরই আমরা সবদিক বিবেচনায় রেখে তদন্ত করছি। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তে কাজ করছি আমরা।
পূর্বকোণ/মাহমুদ