চট্টগ্রাম রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের সার্ভে শুরু

ইমরান বিন ছবুর

২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে মেট্রোরেল নির্মাণের সার্ভে। সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হয়ে এ সার্ভে চলবে ডিসেম্বর পর্যন্ত। মেট্রোরেল নির্মাণের বিভিন্ন বিষয়ে ট্রাফিক ও ট্রান্সপোর্ট সম্পর্কিত সার্ভে করা হবে। বর্তমানে সড়কগুলোতে কোন কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করে, কোন শ্রেণির মানুষ কোন সড়কে বা কোন যানবাহনে চলাচল করে কিংবা বিভিন্ন সড়কের পরিসংখ্যানসহ মোট ১৩ ধরনের সার্ভে করা হবে বলে জানান ট্রান্সপোর্ট প্রফেশনাল অ্যালায়েন্স (টিপিএ) এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. নুরুল হাসান। টিপিএ নগরীর মেট্রোরেলের সার্ভের কাজ করছে।

 

কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর, সিটি গেট থেকে শহীদ বশিরুজ্জামান চত্বর এবং অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গী বাজার হয়ে পাঁচলাইশ-একেখান মোড়। এই তিনটি রুটকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়। তিনটি রুটের ৫০ কিলোমিটারের মেট্রোরেলের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রী উঠানামার জন্য মোট ৪৭টি পয়েন্ট থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দ্রæত করতে উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের নিয়ে গত ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) সম্মেলন কক্ষে একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, নগরীর অভ্যন্তরে বা মূল শহরে মাটির নিচে এবং শহরের আশপাশে মাটির উপরে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্দেশ্য নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। সরকার ও কোরিয়া আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার অর্থায়নে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত।

 

ট্রান্সপোর্ট প্রফেশনাল অ্যালায়েন্স (টিপিএ) এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. নুরুল হাসান বলেন, আমাদের টিম সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে কাজ করেছে। আমরা আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের সার্ভের কাজ শেষ হবে। আমরা মূলত ১৩ ধরনের সার্ভে করবো। যানবাহন, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত বিষয়ের উপর প্রশ্ন থাকবে। এছাড়া, যাত্রী ও পথচারীদের যাত্রার উদ্দেশ্য, সময়, ব্যয় ইত্যাদি বিষয় থাকবে।

 

মেট্রোরেল নির্মাণে ট্রাফিক ও ট্রান্সপোর্ট সম্পর্কিত যে ১৩ ধরনের সার্ভে করা হবে-

সড়কের সমীক্ষা (রোডের ইনভেনটরি): সড়কটি কতটুকু চউড়া, কয়টা লিংক রয়েছে, পাশে পার্কিং রয়েছে কিনা, অবৈধ পার্কিং রয়েছে কিনা, কতটুকু ফুটপাত রয়েছে, সড়কটি আবাসিক নাকি বাণিজ্যিক এলাকার পাশে। ইনভেনটরি জরিপে এই তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। বাসা-বাড়ির ইন্টারভিউ (হাউসহোল্ড ইন্টারভিউ সার্ভে): চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আওতাধীন এলাকায় এই হাউসহোল্ড সার্ভে করা হবে। প্রায় ১৪ হাজার বাসায় গিয়ে গিয়ে সার্ভেয়াররা ইন্টারভিউ করবে। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্ট। তারা মূলত কিভাবে যাতায়াত করে এবং কোন কোন পরিবহন ব্যবহার করে তা জানার জন্যই এই সার্ভে।

 

যানবাহনের সংখ্যা (ট্রাফিক ভলিউম কাউন্ট): সড়কের একটি লোকেশনে কোন কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করে এবং কোন যানবাহনটি ওই এলাকায় কী পরিমাণ চলাচল করে তা জানার জন্যই এই ট্রাফিক ভলিউম কাউন্ট সার্ভে। সেসাথে ওই সড়কে পথচারী কেমন চলাচল করে তাও কাউন্ট করা হবে। নগরীর ৫২টি পয়েন্টে এই সার্ভে করা হবে।

 

যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসা (রোড সাইড ইন্টারভিউ): ২৭টি পয়েন্টে যানবাহন থামিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করা হবে, তারা কোথায় থেকে যাত্রা শুরু করেছে এবং কোথায় গিয়ে থামবে। প্রতিটি গাড়িতে কতজন যাত্রী রয়েছে তাও কাউন্ট করা হবে। ট্রাক থেকে শুরু করে সব ধরনের যানবাহনকে এই ইন্টারভিউ’র আওতায় আনা হবে।পথচারীর সংখ্যা (পেডিস্ট্রেয়ান ভলিউম): নগরীর ৪২টি পয়েন্টে এই সার্ভে করা হবে। কী পরিমাণ পথচারী রাস্তা পারাপার হচ্ছে তা জানা যাবে।

 

আলাদা আলাদা পছন্দ (স্টেটেড প্রেফারেন্স): ভ্রমণের উদ্দেশ্য, কোথায় যাচ্ছে এবং কোথা থেকে যাচ্ছে, নতুন যানবাহনে চলার ইচ্ছেপোষণ করবে কিনা এবং নতুন ভ্রমণের অতিরিক্ত অর্থ খরচের ইচ্ছে আছে কিনা এসব তথ্য এই সার্ভের মাধ্যমে নেয়া হবে।
শহরের বাইরে ভ্রমণ (পাবলিক ট্রানজিট, ইন্ট্রার সিটি): এক শহর থেকে অন্য শহরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে যাত্রীরা কোন কোন সমস্যার সম্মুখীন হয় তা জানা যাবে। মেট্রোরেল হলে তাদের কি কি সুবিধা হতে পারে তাও মতামত নেয়া হবে। নগরীর ৬টি ব্যস্ততম সড়ককে এই সার্ভের আওতায় আনা হবে। যেখানে যাত্রীরা কোথা থেকে উঠে বা কোথায় কোথায় গিয়ে নামে এবং নির্ধারিত সময়ে যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে কিনা এসব জানার জন্য প্রশ্ন করা হবে।

 

শহরের মধ্যে ভ্রমণ (পাবলিক ট্রানজিট, ইন্ট্রা সিটি) : চারটি বড় বাস টার্মিনালের সার্ভে করা হবে। সেখানে যাত্রীদের একটি স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে যেতে কত সময় লাগে তা জানতে যাত্রীদের প্রশ্ন করা হবে। এছাড়া, যাত্রীদের ভ্রমণের উদ্দেশ্য, সময়, খরচ বিষয়ে সার্ভে করা হবে।পাবলিক ট্রানজিট (রেল এন্ড এয়ার): চট্টগ্রাম রেল স্টেশন, শাহ আমানত বিমান বন্দরের যাত্রীদের ভ্রমণের উদ্দেশ্য, সময়, খরচ এসব বিষয়ে সার্ভে করা হবে।

 

পাবলিক ট্রানজিট (ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট): নগরীর বিমান বন্দর এলাকার ১৫ নম্বর ঘাট ও কালুরঘাটের ফেরী ঘাটের যাত্রীদের নিয়ে এই সার্ভে। সেখানেও যাত্রীদের ভ্রমণের উদ্দেশ্য, সময়, খরচ এসব বিষয়ে সার্ভে করা হবে।পণ্য পরিবহন (ফ্রেইট): এই সার্ভেটা হবে মূলত চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি টার্মিনাল, চারটি আইসিডি, সরকারি দুটি ইপিজেডে। প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এই সার্ভে করা হবে।ইপিজেড (এক্সোর্ট প্রসেসিং জোন): সরকারি দুটি ইপিজেডের মেইন গেটে এই সার্ভে করা হবে। সেখানে যানবাহন প্রবেশ ও বাহিরের সময় সার্ভে করা হবে।

 

যানবাহনের গতি (ভেহিকেল স্পিড): নগরীর ৩৩ সড়কে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত যানবাহন পর্যবেক্ষণ করা হবে। সেখানে যানবাহনের গতি, উদ্দেশ্য, সময়মত পৌঁছানোর বিষয়ে এই সার্ভে করা হবে।

 

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর একনেকে অনুমোদন পায় এ প্রকল্পটি। ‘ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান অ্যান্ড প্রিলিমিনারি ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর আরবান মেট্রোরেল ট্রানজিট কনস্ট্রাকশন অব চিটাগাং মেট্রোপলিটন এরিয়া’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ৭০ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার (জিওবি) ১৩ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার এবং কোরিয়ান সংস্থা কোইকা ৫৭ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে।

 

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট