চট্টগ্রাম বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘প্রকল্প বিলাস’

কক্সবাজার সংবাদদাতা

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১০:৪২ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের মহেশখালীতে ৫৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ‘প্রকল্প বিলাস’ বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

 

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজার হিলডাউন সার্কিট হাউসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, মূল প্রকল্পের ধারণা অনুসারে গভীর সমুদ্রবন্দর, শিল্প-কারখানা, রেল ও সড়ক সংযোগ না করেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের বিলাসী প্রকল্প থেকে সরকার সরে আসবে।

 

তিনি আরও বলেন, জনগণ সরাসরি উপকৃত হয় না এরকম প্রকল্প গ্রহণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ছোট প্রকল্পে মনোযোগী হবে সরকার। যাতে তা মানুষের কাজে আসে।

 

ফাওজুল কবির খান বলেন, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদনের জন্য মাত্র ৩০ দিনের কয়লা মজুদ আছে। খুব শিগগিরই এ সংকটের সমাধান হবে। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ দেশের কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন নিরবিচ্ছিন্ন রাখার জন্য যথাসময়ে কয়লা আমদানি করা হবে।

 

তিনি বলেন, মাতারবাড়ীতে যে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা একটি বিলাসী প্রকল্প। প্রকল্প গ্রহণকালে প্রথমে ৩৬ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে তা ৫৭ হাজার কোটি টাকা এই প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়িয়েছে। অথচ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মাত্র ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি প্লান্ট করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নকালে মেঘা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগগুলো তদন্ত করা হবে বলে জানিয়ে তিনি জানান, ইতোমধ্যে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের এমডি আবুল কালাম আজাদকে প্রকল্প পরিচালক থেকে বাদ দিয়ে নতুন এমডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

 

তিনি জানান, বিগত সরকার অসংখ্য মেঘা প্রকল্প গ্রহণ করেছে যেগুলো এখন জনগণের সরাসরি উপকারে আসছে না।

 

এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন কয়েকটি প্রশ্নের জবাব দেন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিবদের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মহেশখালীবাসীকে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নির্দেশ দেন।

 

এছাড়া প্রকল্পে স্থানীয়দের বিভিন্ন চাকরিতে অগ্রাধিকারসহ টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট দ্রুত চালু করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য উপস্থিত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিবদের দ্রুত সমাধানের জন্যেও নির্দেশ দেন।

 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নুরুল আলম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার বণিক প্রমুখ।

 

এর আগে, শুক্রবার সকালে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছান। পরে তিনি মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনে যান। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শন শেষে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দর ও এসটিএম প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন।

 

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র একটি বিতর্কিত প্রকল্প হয়ে উঠেছে। একদিকে এটি দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, অন্যদিকে দুর্নীতি, স্থানীয়দের উপকারিতা কম পাওয়া এবং পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। উপদেষ্টার এই মন্তব্যের পর এই প্রকল্প নিয়ে আবারো আলোচনা শুরু হয়েছে।

 

 

পূর্বকোণ/এরফান/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট