এবারের বন্যায় চট্টগ্রাম বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বন্যার কারণে চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি ফেনী নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলার অধিকাংশ জায়গা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মানুষের ঘরবাড়ি, সহায় সম্পত্তি ও গবাদি পশুর বর্ণনাতীত ক্ষতিসাধন হয়েছে।
তবে আশার কথা হচ্ছে যে, বন্যার পানি আস্তে-আস্তে নামতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যার পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মানুষ ধীরে ধীরে আশ্রয়কেন্দ্র হতে নিজের ঘরবাড়ির দিকে যেতে শুরু করেছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলার ৭টি উপজেলার ৬০টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ফলে প্রায় ৩ লাখ ৪২ হাজার ২৮০ জন মানুষ বন্যার কবলে পড়েছে এবং ২২ হাজার ৭১৬ জন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। গত ২৩ ও ২৪ তারিখে বন্যায় ফটিকছড়ি উপজেলায় পানিতে ডুবে ৩ জন পুরুষ, হাটহাজরীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ১ জন পুরুষ ও রাঙ্গুনিয়ায় পানিতে ডুবে ১ জনসহ মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ অঞ্চলে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে। তারমধ্যে ১৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রিতদেরকে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার দেয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও বিভিন্ন শ্রেণির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং স্থানীয় এনজিও সম্পৃক্ত করে বন্যা প্লাবিত এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তরসহ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কক্সবাজার জেলার ৬টি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। সেখানে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫০ জন মানুষ বন্যার কবলে পড়েছে। গত ২২ তারিখের অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে ৩ জন মৃত্যুবরণ করেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ১৫৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয় এবং মৃত তিন ব্যক্তির পরিবারে ২৫ হাজার টাকা করে মোট ৭৫ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়।
পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার মোট ৭টি উপজেলায় ১৮টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঐ অঞ্চলের মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নে মাইনি নদীর ছড়াতে বন্যার পানিতে ডুবে সপ্তম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। সেসব এলাকায়ও চাল, শুকনো খাবার ও পানিবন্দী এবং আশ্রিতদের মাঝে খিচুড়ি বিতরণ করা হয়।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন, ফেনীতে ২ জন, নোয়াখালীতে ৫ জন ও লক্ষ্মীপুরে ১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও চাঁদপুরে কোন মৃত্যু বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। বন্যা কবলিত এসব এরিয়াতেও চাল ও শুকনো খাবারসহ মৃত ব্যক্তিদের পরিবারকে তাৎক্ষণিক নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। এছাড়াও সেখানে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ছাত্র-জনতা এখনো উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চলমান রেখেছে।
কুমিল্লা জেলায় ১৪টি উপজেলার ১২৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে গোমতী নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গোমতী নদীর পানি নদীর টিক্কারচর পয়েন্টে বিপদ সীমার ৪৭ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গোমতী নদীর তীর সংলগ্ন কুমিল্লা শহর রক্ষা বাঁধের প্রায় বিভিন্ন পয়েন্টে ফাটল ধরেছে, তবে সেগুলো অস্থায়ী জিও ব্যাগ, মাটি ও বালি দিয়ে মেরামত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ অঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ ২৬ হাজার ১০৯ জন মানুষ বন্যার কারণে পানিবন্দী হয়ে আছে। এছাড়াও প্রায় ৭৮ হাজার ২২১ জন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। চলমান বন্যার কারণে সেখানে এ পর্যন্ত মোট ৬ জন নিহত হয়েছেন।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ