চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার নগরের কোতোয়ালী থানায় মামলাটি দায়ের করেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক। মামলায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। যাদেরকে সন্ত্রাসী, চিহ্নিত চাঁদাবাজ, ইয়াবা পাচারকারী ও বিভিন্ন মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি হিসেবে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া তাদের অনেকেই অনিবন্ধিত বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালের নাম দিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে অফিস, আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রতারণা, ব্ল্যাক মেইলের মাধ্যমে সাংবাদিক সমাজকে কলঙ্কিত করে চলেছে।
আসামিরা হলেন- সাইফুল ইসলাম শিল্পী (৪৮), সালেহ নোমান (৪৮), মো. শাহনেওয়াজ (৫৫), আমিনুল ইসলাম (৪৫), আলমগীর নুর (৫২), আরিয়ান লেনিন প্রকাশ সুজয় বড়ুয়া (৩৫), মঈনুদ্দীন কাদেরী শওকত (৬৯), গোলাম মওলা মুরাদ (৪৬), মো. হাসান ফেরদৌস (৪৯), আবু সুফিয়ান (৪৭), নজরুল ইসলাম (৪৫), কামরুজ্জামান রনি (৪১), মনিরুল ইসলাম পারভেজ (৪০), এস এম আকাশ (৩৭), সাইদুর রহমান সাকিব (৩৫), মাসুদ পারভেজ টুটুল (৪৫), নুর মোহাম্মদ (৩৭), এসএম পিন্টু (৪০), মোস্তফা জাহেদ (৪০) ও ওয়াহিদ জামান (৫৫)।
এ প্রসঙ্গে কোতোয়ালী থানার ওসি এসএম ওবায়দুল হক বলেন, ‘চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এজাহারে অভিযোগ করা হয়- চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, চট্টগ্রাম তথা দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিক ও সংবাদ কর্মীদের এটি একটি অন্যতম মিলনস্থল। দেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক ইতিহাসের সাক্ষী চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব। গত ১৪ আগস্ট আসামিরা দা, ছুরি, লাঠিসোটা, হাতুড়ি, কিরিচসহ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে। দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নৈরাজ্য, ত্রাস সৃষ্টি ও লুটপাট চালানোর লক্ষ্যে সাইফুল ইসলাম শিল্পী, সালেহ নোমান ও শাহ নওয়াজের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা প্রেসক্লাবের দিকে ছুটে আসল প্রেসক্লাবের কর্তব্যরত দারোয়ান মূল গেট বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দেয়। আসামিদের কয়েকজন গেট টপকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে হাতুড়ি দিয়ে তালা ভেঙ্গে ভবনে প্রবেশ করে। এরপর ভবনের চতুর্থ তলার ক্লাবে সামনের গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ, মিডিয়া সেন্টার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কক্ষে রক্ষিত কম্পিউটার, সিসিটিভিসহ বিভিন্ন মূল্যবান আসবাবপত্র ব্যাপক ভাংচুর করে। হিসাব কক্ষে রক্ষিত প্রায় দেড় লক্ষ টাকা এবং মূল্যবান জিনিসপত্র ও প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ দলিল দস্তাবেজ লুট করে নিয়ে যায় এবং ব্যাপক ত্রাসের সৃষ্টি করে।
লুটতরাজে বাধা দিতে গেলে তাদের হামলায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য হেলাল উদ্দিন সিকদার (৪৪), মো. গোলাম মর্তুজা আলীসহ (৪৭) প্রায় ২০ জন সাংবাদিক আহত হন। আসামিরা ক্লাবের সদস্যদের জিম্মি করে ক্লাবে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এগিয়ে আসলে আসামীরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যাওয়ার সময় তারা হুমকি দিয়ে বলেন, ‘যদি এসব বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করে বা মুখ খুলে তাহলে তাদেরকে জানে মেরে ফেলবে।’
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে কয়েক দফা হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তারা চট্টগ্রামের পেশাদার সাংবাদিকদের এই ক্লাবটি দখলেরও চেষ্টা করে।