চট্টগ্রাম বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

সীমিত পরিসরে ১১ থানায় কার্যক্রম শুরু

সিএমপি

নাজিম মুহাম্মদ

১০ আগস্ট, ২০২৪ | ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ

থানায় ফিরতে শুরু করেছেন পুলিশ সদস্যরা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনদিন বন্ধ থাকার পর নগরীর ১৬ থানার মধ্যে ১১ থানায় সেনা পাহারায় সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু করেছে। বাকি চার থানায় কার্যক্রম শুরু হবে আজ (শনিবার)। আগুনে পুরোপুরি জ্বলে যাওয়ায় একটি থানার কার্যক্রম শুরু করতে আরো কয়েক দিন লাগবে। ওই থানার জন্য নতুন ভবন খোঁজা হচ্ছে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) আবদুল মান্নান মিয়া জানান, নগরীর ষোল থানাতেই পুলিশ ফিরেছে। যেসব থানা পুরো জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, সেগুলো পরিষ্কারের কাজ চলছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলোতেও সীমিত পরিসরে কাজ শুরু হয়েছে। আর যেসব থানা অক্ষত আছে সেখানে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট দুপুরে সরকার পতনের পর নগরীর আট থানায় আগুন দেয়া হলেও বাকি আট থানা অক্ষত ছিল। নিরাপত্তার স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে রাতে থানার অস্ত্র, গুলি পুলিশ লাইসেন্স নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ সদস্যরা নিজেদের বাসায় চলে যায়। যেসব পুলিশ সদস্য থানার ব্যারাকে থাকতো তারা বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে।

গতকাল শুক্রবার বেলা তিনটায় নগরীর কোতোয়ালী থানায় গিয়ে দেখা যায়- থানার ভেতরে পরিষ্কারের কাজ করছিল তিন চারজন ব্যক্তি। আগুনের অঙ্গার হয়ে যাওয়া যানবাহনগুলো সরানো হচ্ছে। তালাবদ্ধ থানার গেটে পাহারায় রয়েছে সেনা সদস্যরা। থানার ভেতরে প্রতিটি কক্ষে আগুন দেয়া হয়েছে। আপাতত কাজের পরিবেশ তৈরি হতে সময় লাগবে আরো কয়েকদিন।

বেলা চারটার সময় সদরঘাট থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার সামনে একটি মিনি ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছিল আলামতের মোটরসাইকেল। এসব মোটরসাইকেলগুলো সরকার পতনের পর পর একদল যুবক সদরঘাট ডাম্পিং ইয়ার্ড থেকে সরিয়ে ছিলো। থানার সামনে পড়ে রয়েছে আগুনে পুড়ে যাওয়া গাড়ির সারি। একদল ছাত্র-ছাত্রী থানা পরিষ্কারের কাজ করছিল। থানার গেটে পাহারায় রয়েছে সেনা সদস্যরা। একইভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছিল নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলোতে।

সদরঘাট থানার ওসি ফেরদৌস জাহান জানান, থানার সামনে গাড়িগুলো পোড়ানো হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে দরজা ও জানালার কাচ। পুড়ে ফেলা হয়েছে নথিপত্র। তবে থানার অস্ত্রাগার অক্ষত রয়েছে। কর্মস্থলে পুলিশ সদস্যরা হাজির রয়েছে।

বেলা পাঁচটায় পাহাড়তলী থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার সামনে বিভিন্ন আসবাবপত্রের স্তূপ। সরকার পতনের পর পর থানাটিতে আগুনে দেয়া হয়। প্রতিটি কক্ষ আগুনে পুড়ে গেছে। লোকজন থানার যেসব অসবাবপত্র নিয়ে গিয়েছিলো তা ফেরত দিচ্ছে।

এর আগে থানা থেকে নিয়ে যাওয়া জিনিসপত্র ফেরত দিতে এলাকায় মাইকিং করা হয়। থানার পাশের মসজিদ থেকে দুটি চায়না রাইফেল, একটি গ্যাসগান ও নয়টি শর্টগান সেনা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। ঘটনার দিন থানা ছেড়ে পালানোর সময় পুলিশ সদস্যরা অস্ত্রগুলো মসজিদের ইমামের কাছে রেখে গিয়েছিল। তবে পাহাড়তলী থানার অস্ত্রাগার থেকে লুট হয়ে গেছে সব অস্ত্র।

গতকাল শুক্রবার নগর পুলিশের জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গতকাল (শুক্রবার) নগরীর ১১ থানায় সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ। থানাগুলো হলো, চান্দগাঁও, বায়েজিদ বোস্তামী, খুলশী, পাঁচলাইশ, সদরঘাট, চকবাজার, বাকলিয়া, পাহাড়তলী, আবকরশাহ, কর্ণফুলী ও বন্দর।

আজ থেকে (শনিবার) হালিশহর, ডবলমুরিং, কোতোয়ালী এবং ইপিজেড থানায় সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু হবে। এরমধ্যে কোতোয়ালী থানার কার্যক্রম থানার সামনে এবং ইপিজেড থানার কার্যক্রম নিউ মুরিং ফাঁড়িতে শুরু করা হবে। পতেঙ্গা থানা আগুনে পুরোপুরি জ্বলে গেছে। থানার কার্যক্রম শুরু করতে নতুন ভবন খোঁজা হচ্ছে।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) এস এম মোস্তাইন হোসাইন জানান, থানাগুলোতে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং কতগুলো অস্ত্র খোয়া গেছে তার তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। আশা করছি খোয়া যাওয়া পুলিশের অস্ত্র মানুষ ফেরত দেবে। কারণ পুলিশের এসব অস্ত্র মানুষের কোনো কাজে লাগবে না।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট