বৃহত্তর চট্টগ্রামের ছয় কৃতী সন্তানসহ মোট ১৬ জন সদস্য নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করেছে। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত ৯টা ২০ মিনিটে ঢাকার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করান। এরপর বাকি ১৩ উপদেষ্টাও শপথ গ্রহণ করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৬ জন উপদেষ্টার মধ্যে ৬ জনই বৃহত্তর চট্টগ্রামের সন্তান। তাঁরা হলেন- প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, নূর জাহান বেগম, ফারুক-ই আজম বীরপ্রতীক, ফরিদা আখতার, ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এবং সুপ্রদীপ চাকমা। তবে এদের মধ্যে ৪ জনের বাড়ি চট্টগ্রাম হলেও বাকি দু’জন কর্ম ও পড়াশুনা সূত্রে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন চট্টগ্রামে।
অন্য উপদেষ্টাদের মধ্যে রয়েছেন- ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, এম সাখাওয়াত হোসেন, ড. আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, হাসান আরিফ, তৌহিদ হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মো. নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বিধান রঞ্জন রায় এবং শারমিন মুরশিদ।
১৬ জন উপদেষ্টার মধ্যে ১৩ জন আজ শপথ গ্রহণ করলেও ফারুক–ই–আজম, সুপ্রদীপ চাকমা ও বিধান রঞ্জন রায় ঢাকার বাইরে থাকায় শপথ নিতে পারেননি। তবে তাদের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে এবং শিগগিরই তারা শপথ গ্রহণ করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রামেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূসের একজন প্রথম সারির সহযোগী ছিলেন। তিনি ব্যাংকের প্রকল্প শুরুর সময় থেকেই এর সাথে যুক্ত ছিলেন এবং তৃণমূল পর্যায়ে দরিদ্র নারীদের সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ব্যাংকের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রথম প্রিন্সিপাল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি গ্রামীণ শিক্ষার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন।
বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র সমন্বিত যুদ্ধাভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর উপ-অধিনায়ক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি চট্টগ্রাম শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং স্ত্রী শামীমা ফারুকের সঙ্গে মিলে চট্টগ্রামের প্রথম ফ্যাশন হাউস ‘রমণীয়া’ প্রতিষ্ঠা করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার চট্টগ্রামের চন্দনাইশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেছেন। নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য সম্পদ, তাঁত শিল্প, গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক, জনসংখ্যা এবং উন্নয়নমূলক বিষয়ে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ) এর নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমীর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা, মাসিক আত তাওহীদের সম্পাদক, বালাগুশ শরকের সহকারী সম্পাদক এবং আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের কুরআনিক সায়েন্সেস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অতিথি শিক্ষক ছিলেন। এছাড়াও তিনি চট্টগ্রামের ওমরগণি এমইএস কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। দ্যা ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ জার্নাল সহ বিভিন্ন সাময়িকীতে তার দুই শতাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ দ্বিতীয় সংস্করণের ৩ থেকে ৯ খণ্ড ও সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা করেছেন।
খাগড়াছড়ি জেলার কমলছড়ি গ্রামের সন্তান সুপ্রদীপ চাকমা গত বছরের ২৪ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। এর আগে তিনি মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও রাবাত, ব্রাসেলস, আঙ্কারা ও কলম্বোতে বাংলাদেশ দূতাবাসে বিভিন্ন পদে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ এবং শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করলেও, এএফ হাসান আরিফের জীবনের উল্লেখযোগ্য একটি সময় অতিবাহিত হয়েছে চট্টগ্রামে। ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি, তিনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।