চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য ও প্রক্টরকে মেরুদণ্ডহীন এবং ফ্যাসিবাদের সহযোগী বলে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয় মিছিল থেকে এই পদত্যাগের দাবি জানানো হয়।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে এই বিজয় মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সোহরাওয়ার্দী হল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সাথে ছিলেন নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক ঐক্যের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকরা।
সমাবেশে চবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, আমাদের এক দফা বাস্তবায়ন হয়েছে, কিন্তু ৯ দফা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত ৯ দফা বাস্তবায়ন হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ চাই। আমাদের হলগুলো খুলে দিতে হবে। এখনো ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ে আশপাশের এলাকায় হামলা করছে। এর আগেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। সব প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এই প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। এছাড়া হলগুলো থেকে গতকাল বিপুল পরিমাণ দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তাই অনতিবিলম্বে চবি উপাচার্য, প্রক্টর ও হল প্রভোস্টদের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি আমরা।
সমন্বয়ক বিজয় সিতা বলেন, আমরা অনেক আন্দোলনের পর স্বাধীনতা পেয়েছি। আমাদের এই স্বাধীনতা ধরে রাখতে হবে। আপনারা জানেন আমাদের দেশে একের পর এক কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতায় আসে এবং আমাদের সকল মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করে। আমাদের বাকস্বাধীনতা হরণ করে। আমরা এমনটা আর হতে দিব না। আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ চাই। আর দ্রুতই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকসু নির্বাচন দিতে হবে, হলগুলোতে আসন বরাদ্দ দিতে হবে। এছাড়া সকল ছাত্রসংগঠনের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হবে।
দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তারা আমাদের ছাত্রদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। গতকাল আমার উপরও হামলা করেছিলো সন্ত্রাসীরা। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছি। এই নির্লজ্জ উপাচার্য আমাকে নিরাপত্তা দিতে পারে নাই। এই উপাচার্য আমাদের ছাত্রীদের হয়রানি করেছে। শাটডাউনের মধ্যে ছাত্রীদের হল থেকে বের করে দিয়েছে। এমন উপাচার্য আমরা চাই না। আমরা এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় চাই যেখানে চাঁদাবাজি চলবে না, শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে, শিক্ষক নিয়োগের সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক ঐক্যের প্রধান সমন্বয়ক আতিয়ার রহমান বলেন, আমরা বিপ্লবের একটি অধ্যায় ও শুভ সূচনা করতে পেরেছি। দীর্ঘ ষোল বছর বাংলাদেশের বুকের ওপর চেপে থাকা জগদ্দল পাথর সরে গেছে। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। যেসব বিচারপতিরা তাদের নৈতিকতা হারিয়ে বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করেছে তাদের দ্রুত অপসারণ করা হোক। এই মুহূর্তে দ্রুত একটি ইন্টেরিম গভর্মেন্ট গঠন করা হোক। ন্যায্যতাই হবে আমাদের মূলনীতি। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বৈষম্যমূলক একটি বাংলাদেশ গঠন করার প্রত্যাশা আমরা করছি।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চবির সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী ও চবির ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর হায়দার আরিফ সঞ্চালনা করেন। সমাবেশে ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও সিন্ডিকেট সদস্য ড. শামীম উদ্দিন খান, চবি নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক ঐক্যের সমন্বয়ক ও প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মান্নান বক্তব্য রাখেন।
পূর্বকোণ/জুনায়েদ/জেইউ/পারভেজ