চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

নগরের ১০ থানায় ভাঙচুর-আগুন

জেলা কারাগারের মূল ফটক ভাঙার চেষ্টা লুট করা হয়েছে অস্ত্র ও মালামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ আগস্ট, ২০২৪ | ৭:১৮ পূর্বাহ্ণ

শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পরপরই গতকাল সোমবার দুুপুর নগরের ৬টি থানায় ভাঙচুর এবং চারটি থানায় আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে কোতোয়ালি, আকবরশাহ, পতেঙ্গা ও পাহাড়তলি থানা। ভাঙচুর করা হয়েছে ডবলমুরিং, সদরঘাট, ইপিজেড, বন্দর, হালিশহর ও চান্দগাঁও থানা। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা কারাগারের মূল ফটক ভাঙার চেষ্টা চালায় বিক্ষোভকারীরা।
সদরঘাট ও আকবরশাহ থানার বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আকবরশাহ থানা থেকে লুট করা হয়েছে অস্ত্র ও মালামাল। হামলা করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে। ভাঙচুর করা হয়েছে নগরের দুনম্বর গেটের জেলা পুলিশ সুপার অফিস ও মনসুরাবাদ জেলা পুলিশ লাইন্সে। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে। রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত কারাগারের ভেতর থেকে দুর্বৃত্তদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ছিল কারারক্ষীরা।
গতকাল রাত সোয়া নয়টায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর পুলিশের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, সিএমপির কয়েকটি থানায় আগুন দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে। একাধিক দফা হামলা করা হয়েছে সিএমপি পুলিশ সদর দপ্তরে। কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে কী পরিমাণ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে তাদের নির্দিষ্ট তথ্য আমরা জানি না। লুটপাট করা হয়েছে থানাগুলোতে।
জানা যায়, সরকার পতনের পরপরই একদল দুর্বৃত্ত হামলা করে নগরের পতেঙ্গা থানায়। দুর্বৃত্তরা এক পর্যায়ে থানায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
পতেঙ্গা থানার ওসি মাহফুজুর রহমান জানান, একদল লোক বেলা আড়াইটার দিকে থানায় হামলা চালায়। তারা এক পর্যায়ে থানায় ঢুকে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা যে যেদিকে পারে থানা থেকে বের হয়ে যায়। লুটপাট করা হয়েছে থানায়। আমি নিজেই নিরাপদ স্থানে সরে আসতে বাধ্য হয়েছি।
বিকেল তিনটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালায় পাহাড়তলি থানায়। তারা থানায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। চালানো হয় লুটপাট। নিজেদের বাঁচাতে পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে বের হয়ে যায়।
বেলা পাঁচটার দিকে আগুন দেওয়া হয় কোতোয়ালি থানায়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে বের হয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা লুটপাট চালায় থানায়। রাত পৌনে নয়টায় কোতোয়ালি থানা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তখনো থানার ভেতরে আগুন জ্বলছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিল।
বিকেল তিনটা থেকে চান্দগাঁও থানায় হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। তারা থানার ভেতরে একাধিকবার প্রবেশ করার চেষ্টা করে। রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত তারা থানা ঘিরে ছিল।
থানা গুলোতে হামলার পাশাপাশি বেলা সাড়ে পাঁচটায় একদল দুর্বৃত্ত দামপাড়া নগর পুলিশের সদর দপ্তরে হামলার চেষ্টা করে। তারা মুল ফটক ঘিরে এবং সড়কে অবস্থান নিয়েছিল। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছোড়ে।
সরকার পতনের খবর শোনার পরপরই দুনম্বর গেট জেলা পুলিশ সুপার অফিস থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা নিরাপদে সরে যায়। সন্ধ্যায় একদল দুর্বৃত্ত পুলিশ সুপার অফিসে ইট পাটকেল ছুড়ে দরজা জানালার কাঁচ ভাঙচুর করে।
এর আগে বেলা পাঁচটায় কোতোয়ালি থানায় আগুন দেয়ার পর পরই দুর্বৃত্তরা চট্টগ্রাম জেলা কারাগারের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিল কারাকর্তৃপক্ষ। হামলকারীদের দাবি সব বন্দিকে বের করে দিতে হবে। এ সময় কারাকর্তৃপক্ষ হামলাকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও রাবারবুলেট ছুঁড়ে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কারা ফটকের সামনে সড়কের ওপর আগুন জ্বলছিল। কারাগারের ভেতর থেকে হামলাকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়া হচ্ছিল।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট