গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে ও বিচার দাবি করে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় আন্দোলনকারীরা। মিছিল শুরু হয় নগরীর ষোলশহর রেল স্টেশন থেকে। শুরু বোঝা গেলেও শেষ বোঝার সুযোগ নেই। যতদূর চোখ যায় শুধু শিক্ষার্থীর সারি।
মাথায় জাতীয় পতাকা, হাতে প্ল্যাকার্ড ও মুখে স্লোগান। আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই; বোনের উপর হামলা কেন, পুলিশ জবাব চাই। আন্দোলন কে দমন করতে গতকাল পুলিশের লাঠিচার্জ উল্টো বাড়িয়ে দিয়েছে আন্দোলনের তীব্রতা। প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের লংমার্চে এক ভিন্ন চট্টগ্রাম দেখলো নগরবাসী।
শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেল ৫টা থেকে চট্টগ্রামের ষোলশহর স্টেশনে একত্রিত হয়ে এ বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করেন প্রায় ৫ হাজারের মতো শিক্ষার্থী।
বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর ২ নম্বর গেট হয়ে প্রবর্তক মোড়, চক বাজার, জামালখান, কাজীর দেউড়ি, লালখান বাজার, জিইসি হয়ে পুনরায় ২ নম্বর গেট এলাকায় জড়ো হয়ে অবস্থান করে। শিক্ষার্থীদের মুখে স্লোগান ছিলো, ‘আমার ভাইয়ের উপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘লাঠি দিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’, ‘আমার ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’, ব্লকেড ব্লকেড, বাংলা ব্লকেড’, ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনরত চবি শিক্ষার্থী ওয়াহিদ হাসান বলেন, শিক্ষার্থীরা রাজপথে যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের উপর আক্রমণ করবে কেন? কেন তাদের উপর লাঠিচার্জ করবে? তাদেরকে এ অধিকার কে দিয়েছে? আমরা আন্দোলনে এসেছি আমাদের পরিবারকে রক্ষা করার জন্য আমাদের ভবিষ্যতকে সুরক্ষা করার জন্য। যাদের ভোগান্তি হচ্ছে তারা আমাদেরই মা-বোন আমাদেরই প্রতিবেশি, তারা আমাদের আন্দোলনকে সমর্থন দেয়।
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল মাহমুদ জয় বলেন, গতকাল আমাদের ভাই ও বোনদের উপর যে হামলা করা হয়েছিল তার প্রতিবাদ জানাতেই আজকের এই বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের যে যৌক্তিক দাবি সকল গ্রেডে সকল প্রকার কোটা বাতিল করে শুধু অনগ্রসরদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা রেখে আইন পাশ করতে হবে। সেই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে। পুলিশের হামলা মামলা দিয়ে চবিয়ানদের দমিয়ে রাখা যাবে না।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির রহমান বলেন, একটি দেশে ৫৬ শতাংশ কোটার কোনো মানেই হয় না। আমাদের দাবি কোটার বিরুদ্ধে নয়। আমরা চাই কোটার সংস্কার করা হোক এবং ন্যূনতম ৫ শতাংশ কোটা রাখা হোক।
প্রসঙ্গত, সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করার এক দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দফায় দফায় লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জে ছয় শিক্ষার্থী আহত হয়, যার মধ্যে রয়েছে দুইজন ছাত্রী। লাঠিচার্জের খবর ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার বিকেলেই হাজারো শিক্ষার্থী দুই নম্বর গেট ও চবি এক নম্বর গেট অবরোধ করেন।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ