বাংলাদেশি স্কাইডাইভার আশিক চৌধুরী ৪১ হাজার ফুট উঁচু থেকে লাফ দিয়েছেন। সেই হিসাবে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন তিনি। উড়োজাহাজ থেকে লাফ দেওয়ার পর তাঁর হাতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা।
গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের মেমফিসের একটি এয়ারফিল্ডে এই রেকর্ড গড়েন আশিক। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেতে সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে বলে জানান তিনি। আশিক যে উচ্চতা থেকে লাফ দিয়েছেন, তার ছয় হাজার ফুট নিচ দিয়ে চলাচল করে বাণিজ্যিক বিমান। এর ওপরে উঠতে প্রয়োজন বিশেষায়িত বিমান। যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসের এয়ারফিল্ডে এই ধরনের বিমান পাওয়া যায়। সেখানকার আবহাওয়াও এই রেকর্ড গড়ার জন্য অনুকূল। তাই সেখান থেকেই রেকর্ড গড়ার পরিকল্পনা করেন আশিক।
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘স্কাইডাইভের শুরু থেকে মাটিতে নেমে প্যারাশুট খোলা পর্যন্ত মোট সাড়ে ছয় মিনিটের বেশি সময় লাগে। পুরোটা সময় ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় বিমানে এক ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ ছাড়া পতাকার আকার তুলনামূলক বড় হওয়ায় বাতাসের মধ্যে তা ধরে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আবার মাটির কাছাকাছি আসার পর খুব স্পিন (ঘুরতে থাকা) হচ্ছিল। এতে নিরাপদে প্যারাশুট খোলা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবন্ধকতা থাকলেও সব কিছু ভালোভাবে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী শেষ করতে পেরেছি। দীর্ঘ সময় থেকে এই রেকর্ড গড়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। দেশের মর্যাদা বাড়াতে কিছু করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেন আশিক। তাঁর ভাষ্য, ‘আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে আরো একটি মাইলফলক স্পর্শ করার স্বপ্ন আছে। সেদিন বাংলাদেশের মাটিতে একসঙ্গে ৭১ জনকে নিয়ে স্কাইডাইভের মাধ্যমে রেকর্ড গড়তে চাই। এর আগে সর্বোচ্চ ২৫ জন একসঙ্গে এই স্কাইডাইভে অংশ নিয়েছেন। এই রেকর্ড ভাঙতে সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা লাগবে।’
জানা যায়, আশিক চৌধুরীর স্কাইডাইভিংয়ের পুরোটা সময় তদারকিতে ছিলেন ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল এয়ার স্পোর্টসের এক সদস্য। বিচার-বিশ্লেষণ শেষে এই ফেডারেশনের রেকর্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্তিতে সময় লাগবে দুই থেকে তিন দিন। অন্যদিকে এই রেকর্ডের কাগজপত্র নিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের জন্য আবেদন করবেন আশিক। দুই সপ্তাহের মধ্যে গিনেস রেকর্ডে অন্তর্ভুক্তির আশা করছেন তিনি।
এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই স্কাইডাইভিংয়ের মাধ্যমে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে চারটি ও ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল এয়ার স্পোর্টসে দুটি রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন আশিক চৌধুরী।
চাঁদপুরে আশিকের গ্রামের বাড়ি হলেও বাবার চাকরির সুবাদে বেড়ে ওঠেন যশোরে। পড়াশোনা করেছেন সিলেট ক্যাডেট কলেজে। উচ্চ মাধ্যমিক শেষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ)। ২০০৭ সালে স্নাতক সম্পন্ন করার পর যোগ দেন দেশের একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে, ২০১১ সাল পর্যন্ত চাকরিও করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান বিদেশে। মূলত সেখানেই মাথায় চাপে স্কাইডাইভিংয়ের নেশা।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের হিনটন স্কাইডাইভিং সেন্টারে সুরক্ষা সামগ্রী পরে বিমানে চড়েন আশিক। এরপর কয়েক হাজার ফুট উঁচু থেকে প্রথমবারের মতো লাফ দেন। ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যের একটি প্রাইভেট পাইলট প্রশিক্ষণ স্কুলে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকে বিমান চালানো রপ্ত করেন। তবে স্কাইডাইভিংয়ের লাইসেন্সটা তত দিন পর্যন্ত অধরাই থেকে যায়।
বিদেশের পাট চুকিয়ে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন আশিক। তত দিনে আমেরিকান এয়ারলাইনসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তিনি। তবে ওই চাকরি ছেড়ে যোগ দেন দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) ব্যাংকে। চার বছর ঢাকায় কাটিয়ে ব্যাংকটির সিঙ্গাপুর শাখায় চলে যান। সেখান থেকে থাইল্যান্ডের স্কাইডাইভিং প্রতিষ্ঠান থাই স্কাই অ্যাডভেঞ্চার কোম্পানির মাধ্যমে ২০২৩ সালে লাইসেন্স নেন তিনি। এ জন্য লিখিত পরীক্ষা ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি অন্তত ২৫ বার আকাশ থেকে লাফ দিতে হয়েছে তাঁকে। তথ্যসূত্র: কালের কণ্ঠ
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ