মো. আব্দুল বারিক। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা। এ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর নামে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ফেনীর তিনটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় কোটি টাকা। এরমধ্যে কিছু অর্থ নিজের নামে হলেও বেশিরভাগ স্ত্রী ফেরদৌস ইয়াসমিন খানমের নামে বিনিয়োগ করা হয় এসব হাসপাতাল-ল্যাবে। শুধু সেবাখাতেই বিনিয়োগ করেননি তিনি, বিনিয়োগ করা হয়েছে অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও।
শুধু বিনিয়োগ নয়, সরকারি সাবেক এ কর্মকর্তা নিজ ও তার স্ত্রী নামে আছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদও। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ এমনকি নিজ জেলা নোয়াখালীও আছে ফ্ল্যাট, জমি, বাড়িও। সবমিলিয়ে এ দম্পতির নামে পারিবারিক ব্যয়সহ সম্পদ রয়েছে ৭ কোটি টাকারও বেশি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং দুদকের কাছে সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে কাস্টম হাউসের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল বারিক ও তার স্ত্রী ফেরদৌস ইয়াসমিন খানমের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে দুদক। গতকাল সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দুটি দায়ের করা হয়। কার্যালয়টির উপ-সহকারী পরিচালক মো. সবুজ হোসেব বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। দুদক জানায়, সরকারি চাকুরিরত থাকা অবস্থায় অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়েই এসব অবৈধ সম্পদ অর্জন করা হয়েছে।
একটি মামলায় আব্দুল বারিকের বিরুদ্ধে অসাধু উপায়ে অর্জিত ১ কোটি ২৩ লাখ ১৪ হাজার ৯২২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং ৭০ লাখ ৬২ হাজার ১৫৬ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। অন্যমামলায় স্বামী স্ত্রী দু’জনের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে অবৈধভাবে অর্জন করা ৩২ লাখ ২৬ হাজার ৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং ১ কোটি ৯২ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৮ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আবদুল বারিক নিজ নামে নগরীর ম্যাক্স হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ১৬৬ লাখ টাকা, এইচবি অটোমোবাইলস অংশীদারী ব্যবসায়ে ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার ৪৪২ টাকা বিনিয়োগ করেন। এছাড়া তার নামে ৩৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার গাড়ি, সেভিং সার্টিফিকেট ক্রয় বাবদ ১০ লাখ টাকা, এক্সিম ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় ২ লাখ ২১ হাজার ২৬ টাকা সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। এরবাইরে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পায় দুদক।
এছাড়া স্ত্রী ফেরদৌস ইয়াসমিন খানমের নামে নগরীর আগ্রাবাদে ৬ তলা বাড়ি, মোহাম্মদিয়া হাউজিংয়ে ৯ শতক জমি, ঢাকার আশকোনা, ১৩৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি ১৭৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, আগ্রাবাদের সিডিএ এলাকায় জমি, ছেলের নামে নিজ জেলায় ৫০ শতাংশ জমি, নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জে ১৬ কাঠা জমি, হালিশহরের সোনালী আবাসিক এলাকায় ভবন ও জমি, ঢাকার রামচন্দ্রপুরে ৫০ শতাংশ খালি ভূমি ক্রয়সহ সর্বমোট ২ কোটি ৬৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়াও ৩ লাখ ৮১ হাজার টাকার মূল্যের একটি প্রাইভেট কার, ঢাকার উত্তরা হাসপাতালে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ, ফেনীর আলকেমি হাসপাতালে ৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং ম্যাক্স হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক লিমিটেডের ৬৪ লাখ টাকা বিনিয়োগসহ ৮২ লাখ ১৮ হাজার ৮১- টাকার অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়।
মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক চট্টগ্রাম জেলা-১ এর উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদত বলেন, কমিশনের নির্দেশে মামলা দুটি দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে অন্য কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পূর্বকোণ/পিআর