অনতিবিলম্বে সরকারি উদ্যোগে ভেনামি চিংড়ির পোনা উৎপাদন ও সরবরাহের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ নন প্যাকার ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহবুব রানা বলেছেন, বিভিন্ন আলোচনা, সমালোচন, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও শঙ্কায় থাকতে থাকতে দেশে ভেনামি চিংড়ি চাষ এক যুগের বেশি সময় পার করে ফেলেছে। এখনো দেশে ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষ শুরু করা যায়নি। অন্যদিকে, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিশ্ব বাজার দখল করে নিয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত-মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ। তাই আর দেরি না করে আগামী বাজেটে সরকারি উদ্যোগে ভেনামি চিংড়ির পোনা উৎপাদন ও সরবরাহের দাবি জানাই।
আসন্ন জাতীয় বাজেট (২০২৪-২৫) প্রসঙ্গে পূর্বকোণ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে ‘বাজেট ভাবনা’য় এই দাবির কথা জানান মাহবুব রানা।
তিনি আরো বলেন, দেশের প্রতি হেক্টর জায়গায় বাগদা ও গলদা চিংড়ির উৎপাদন হয় ৫শ থেকে ৮শ কেজি। অন্যদিকে একই পরিমাণ জায়গায় ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন হয় ৮ থেকে ১০ হাজার কেজি। এই চিংড়ি অল্প সময়ে বিক্রি উপযোগী হয়ে উঠে। তাই বৈশ্বিক চিংড়ি বাজারে বাংলাদেশের হারানো ঐতিহ্যগত অবস্থান আবারো ফিরিয়ে আনতে আর পরীক্ষামূলক চাষে সময় ব্যয় না করে ভেনামিকে দ্রুত বাণিজ্যিক চাষে নিয়ে আসতে হবে। সেজন্য আমদানির উপর নির্ভর না করে দেশেই ভেনামি চিংড়ির পোনা উৎপাদনে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে ভেনামি চিংড়ির খাদ্য উৎপাদন ও ফিড ব্যবসায়ীদের কারিগরি সহায়তা দিতে হবে। তবেই দেশে যে দুই শতাধিক মৎস কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলো পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে। এই খাতের দিকে সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা ও সুনজর থাকলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত হতে পারে।
ভেনামি চিংড়ি প্রসঙ্গে মাহবুব রানা বিভিন্ন তথ্য দিয়ে বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৬২টি দেশে ভেনামি চিংড়ি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে এশিয়ার দেশ রয়েছে ১৫টি। এশিয়ার চিংড়ি রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষ শুরু হয়নি। বিশ্বে চিংড়ি বাণিজ্যের ৭৭ শতাংশ দখল করে আছে ভেনামি চিংড়ি। বাগদা চিংড়ির তুলনায় দাম কম হওয়ায় বিশ্ববাজারে এর রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
দেশে মাছের চাহিদা প্রসঙ্গে মাহবুব রানা বলেন, আমাদের দেশে মাছের চাহিদা ৫৫ থেকে ৫৮ লাখ মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয় ৫৪ থেকে ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। এছাড়া মাছ আমদানি হয় প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন। তারপরেও মাছের ঘাটতি থেকে যায়। এর জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। কারণ সমুদ্রে যারা মাছ আহরণ করেন তারা বড় ছিদ্রের জালের পাশপাশি লুকিয়ে ক্ষুদ্র ছিদ্রের জালও ব্যবহার করে বড় মাছের পাশাপাশি মাছের পোনাও ধরে নিয়ে আসে। মাছের সেই পোনাগুলো হয় খুবই অল্প দামে বিক্রি করে বা মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করে। অথচ এই মাছগুলো বড় হলে অনেক বেশি মাছ পাওয়া যেত সাগরে। এই করণে গত কয়েক বছর সাগরে মাছের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। তাই সাগরে জালগুলো যথাযথ নজরদারির দাবি জানাই।
এছাড়া বর্তমানে মৎস্য রপ্তানিতে সরকার যে ২% থেকে ৮% প্রণোদনা দেয় সেটি আরো বাড়ানোর দাবি জানান মাহবুব রানা। এছাড়া আমদানি রপ্তানি সংক্রান্ত ট্রেড লাইসেন্স, রপ্তানি সনদসহ সকল কাগজপত্র ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানাই।
পূর্বকোণ/পিআর