দেশে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা কম নয়। এই শ্রেণির মানুষের পক্ষে নিজের একটি বাড়ি করার সামর্থ্য থাকে না। কিন্তু মানুষের বাসস্থান যেহেতু একটি মৌলিক চাহিদা, তাই এটি নিশ্চিত করতে সরকারের দায় থাকে। পাশাপাশি প্রয়োজন বেসরকারি উদ্যোগ। সরকারের যেহেতু প্রচুর খাস জমি পড়ে রয়েছে, এগুলো যদি আবাসন খাতের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য স্বল্প মূল্যে নিজের একটি বাসা হওয়ার সুযোগ হবে। তাই আগামী বাজেটে সরকারি খাস জমি আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার বিধান জারির দাবি জানাই।
আসন্ন জাতীয় বাজেট (২০২৪-২৫) প্রসঙ্গে পূর্বকোণ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে ‘বাজেট ভাবনা’য় সিপিডিএল ফ্যামিলি’র প্রেসিডেন্ট ও ও চিটাগাং চেম্বার পরিচালক প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন এ দাবির কথা জানান।
তিনি আরো বলেন, সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য ও সুদূরপ্রসারী মেগা প্রকল্প হচ্ছে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ যা সরকারের একার পক্ষে বাস্তবায়ান করা কষ্টসাধ্য। একমাত্র আবাসন খাতই এই প্রকল্পে সারকারকে সহযোগিতা করতে পারে। সরকার যদি শহরের বাইরে মেট্রোপলিটন বা পৌরসভা এলাকায় ১০ বছরের জন্য আবাসন খাতে ট্যাক্স হলিডে চালু করে এবং কৃষি জমি রক্ষায় কন্ডোমিনিয়াম অথবা গেটেড কমিউনিটি প্রকল্পে বিশেষ প্রণোদনা দেয়, তাহলে বিকেন্দ্রীকরণ নগরায়ন ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জন হবে।
ইফতেখার হোসেন বলেন, আবাসন খাতে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় হচ্ছে সেকেন্ডারি এপার্টমেন্ট মার্কেট। তবে এখন সেকেন্ডারি ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয় নতুন ফ্ল্যাটের সমান। এটি কমিয়ে নামমাত্র করা হলে এ বাজার বেশ প্রসার পাবে।
আবাসন খাতের জন্য স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী লোনের বিষয়ে তিনি বলেন, এ খাতের জন্য সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিৎ কোম্পানি ও গ্রাহকের জন্য সহজ ঋণ নীতি প্রণয়ন করা। সরকারি কর্মকর্তারা এখন ৪% সুদ হারে চাকরির পূর্ণ মেয়াদে ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু এই সুবিধা সার্বজনীন করা উচিৎ। যাতে করে মানুষ দীর্ঘ মেয়াদের (২০-৩০ বছর) ঋণ সুবিধার মাধ্যমে বাড়ি ভাড়ার টাকায় বাসস্থান উন্নয়ন এবং বাসাবাড়ি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারে, যেমনটি উন্নত বিশ্বে দেখা যায়।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রণোদনা একটি স্বল্পমেয়াদী সমাধান হতে পারে এবং এর জন্য সরকারের পক্ষ হতে নূন্যতম ৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন খুবই জরুরি। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে হাউস বিল্ডিং ফাইনেন্স বা তফসিল ব্যাংকের মাধ্যমে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
ইফতেখার হোসেন আরো বলেন, দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য একটি শিল্পবান্ধব নীতি প্রয়োজন। সরকারকে জমি ও এপার্টমেন্টের রেজিস্ট্রেশন ফি কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের এখানে গেইন ট্যাক্স, স্ট্যাম্প ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি, স্থানীয় সরকার কর, মূল্য সংযোজন কর এ সব মিলিয়ে ১০%-১২.৫% খরচ হয় যা উন্নত বিশ্বে এমনকি সার্কভুক্ত দেশগুলিতেও ৪%-৭%। এই দিকটায় সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে, যাতে তা সর্বোচ্চ ৭% এর মধ্যেই থাকে।
তিনি আরো বলেন, সরকার যদি সুদহার কমানোর পাশাপাশি এপার্টমেন্ট ক্রয়ের অর্থের উৎস প্রদর্শন না করার সুবিধা বা বিনা শর্তে অপ্রদর্শিত অর্থ নূন্যতম আগামী ৫ বছর এ খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেয় তাহলে অর্থ পাচার কমে যাবে এবং একই সাথে আবাসন খাত আরও এগিয়ে যাবে।
আনুপাতিক ভূমিসহ আবাসন ক্রেতাকে রেজিস্ট্রার দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর করার সময় ৪% গেইন ট্যাক্স দিতে হয়। কিন্তু ওই ধারা অনুসারে কোম্পানিকে অর্থের উৎসের উপর ১৫% হারে উৎস কর দিতে হয়, যা যুক্তিযুক্ত নয় এবং বৈষম্যমূলক। এটি সকলের জন্য ৪% হারে আদায় করা উচিৎ এবং একই সাথে রাজউক ও সিডিএ-এর জন্য নতুন করে আরোপিত ৩% ও ৪% কর প্রত্যাহার করা হলে এপার্টমেন্টের দাম আনুপাতিক হারে আরো কমে যাবে এবং এপার্টমেন্টের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসতে সাহায্য করবে।
আবাসন খাতটি অনেকগুলো ছোট বড় ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ বা সাপ্লাইয়ার এর উপর নির্ভর করে পরিচালনা করতে হয়। যেমন রড, সিমেন্ট, ইট, বালু, এলুমিনিয়াম, বৈদ্যুতিক তার, কাঁচ ইত্যাদি। বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রীর উচ্চ মূল্যের কারণে এপার্টমেন্টের মূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে, যার দ্রুত সমাধান দরকার।
পূর্বকোণ/পিআর