চট্টগ্রাম সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভোট কমেছে অর্ধেকেরও বেশি

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১০ মে, ২০২৪ | ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫২৩ জন। ভোট দিয়েছেন এক লাখ ৪৫ হাজার ৬২ জন ভোটার। অর্থাৎ ভোট পড়েছে ৩৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল (নৌকা) ৮৯ হাজার ৬৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন (ঈগল) পেয়েছিলেন ৫২ হাজার ৯৯৫ ভোট। গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

 

গত ৮ মে অনুষ্ঠিত হয় উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী প্রার্থী এনায়েত হোসেন নয়ন কাপ-পিরিচ প্রতীকে ৩৩ হাজার ৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক। পরাজিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান (ঘোড়া) পান ২০ হাজার ৭৬৭ ভোট। ভোট পড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ।

 

জাতীয় ও উপজেলা-দুটি নির্বাচনে বিএনপি দলীয় কোনো প্রার্থী ছিল না। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীই ছিল আওয়ামী লীগ ঘরানার। চার মাসের ব্যবধানে জাতীয় ও উপজেলা নির্বাচনে ভোটের সূচক অর্ধেকের চেয়েও বেশি কমে গেছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের ভোট কমেছে অস্বাভাবিকভাবে।

 

এই বিষয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মী ও রাজনৈতিক নেতারা বলেন, দুটি কারণে উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। প্রধান কারণ হচ্ছে, মিরসরাই উপজেলায় সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বড় প্রভাব রয়েছে। বর্তমান এমপি রুহেল তার ছেলে। উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী প্রার্থীরা অঘোষিতভাবে তার প্রার্থী ছিলেন। দলীয় নেতাকর্মীরা সঙ্গত কারণেই বিজয়ী প্রার্থীদের পক্ষে জোরেসোরে কাজ করেছেন। এই কারণে মোশাররফ হোসেনের এক সময়ের ঘনিষ্ট সহচর হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর পরাজিত হন। অন্য কারণটি ছিল, জাতীয় নির্বাচনের পর মানুষের ভোটের প্রতি অনেকটা অনীহাভাব কাজ করেছে।

 

উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে এবার দলীয়ভাবে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। প্রার্থিতা উন্মুক্ত ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। একই সঙ্গে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের প্রার্থী না হওয়ার বিষয়ে কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রথম ধাপের নির্বাচনে এমপিরা কৌশলে প্রভাব বিস্তার করেছে। যার কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে বলে দাবি নির্বাচন বিশ্লেষকদের।

 

একইভাবে দেখা যায়, জাতীয় নির্বাচনে সন্দ্বীপ আসনে ভোট পড়েছিল ৮৭ হাজার ৫৯১ ভোট। ভোটের হার ছিল ৩৬ দশমিক ২১ শতাংশ। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা ৫৪ হাজার ৭৫৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আওয়ামী লীগ ঘরানার ডা. জামাল উদ্দিন (ঈগল) পেয়েছিলেন ২৮ হাজার ৭০ ভোট।

 

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ১৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। সন্দ্বীপেও চার মাসের ব্যবধানে ভোটের হার অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখানে ভোটের বড় ব্যবধানে হেরেছে উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন মিশন। বিজয়ী প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আনোয়ার হোসেন পান ৪১ হাজার ৩৮৮ ভোট। মাঈন উদ্দিন মিশন (কাপ-পিরিচ) পান ২ হাজার ৫৩১ ভোট।

 

সন্দ্বীপে আনোয়ারের বিশাল জয় ছাপিয়ে এখন আলোচনায় চলছে ভোটের সূচক নিয়ে। স্থানীয়রা জানান, বিজয়ী প্রার্থী আনোয়ার হোসেনের প্রতি এমপি মাহফুজুর রহমানের প্রচ্ছন্ন ছায়া ছিল। জাতীয় নির্বাচনের এমপির পক্ষে কাজ করা নেতাকর্মীরা আনোয়ারের পক্ষে একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। নির্বাচনী মাঠে অনেকটা কোণঠাসা ছিল মাঈন উদ্দিন। অনেক কেন্দ্রে তিনি এজেন্টও দিতে পারেননি।

 

সীতাকুন্ডে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন আরিফুল আলম (রাজু)। আনারস প্রতীকে ৫৯ হাজার ৭৯৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন তিনি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু (দোয়াত-কলম) পেয়েছেন ১১ হাজার ১৮৬ ভোট। ভোট পড়েছে ১৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৭ দশমিক ২১ শতাংশ। এক লাখ ৪২ হাজার ৭০৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এসএম আল মামুন (নৌকা)।

 

গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটিয়া ও সাতকানিয়া আসনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন উপজেলা চেয়ারম্যানেরা। সীতাকুন্ড আসনেও এমপি হন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। ফটিকছড়ি ও চন্দনাইশ আসনেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল উপজেলা চেয়ারম্যানেরা। আওয়ামী লীগের দলীয় ও স্বতন্ত্রভাবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিন উপজেলা চেয়ারম্যান। নির্বাচনে শক্ত অবস্থানে ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা। সেই অভিজ্ঞতায় পথের কাঁটা সৃষ্টি করতে চান না মন্ত্রী-এমপিরা। নিজেদের অনুগত ও ঘনিষ্টজনদের বসাতে চান মিনি সংসদখ্যাত উপজেলা পরিষদে।

 

নির্বাচন বিশ্লেষকদের অভিমত, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা কৌশলে অনুগত ও ঘনিষ্ট প্রার্থীদের পক্ষে ছিলেন। দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে এমপিদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। এতে ভোটারদের ধারণা ছিল, ক্ষমতার প্রভাব-প্রতিপত্তির বাইরে অন্য প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এই ধারণা থেকেই ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট