চন্দনাইশে লবণাক্ত পানির কারণে দুইশ’ হেক্টরের বেশি জমির আউশ ধান নষ্ট হয়েছে। এছাড়া পানির অভাবে চলতি মৌসুমে একশ’ হেক্টরেরও বেশি জমিতে আউশের চাষাবাদ হয়নি। এতে ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে স্থানীয় কৃষকরা।
জানা গেছে, চন্দনাইশে পানি সংকটের পাশাপাশি নদীর পানিতে লবণাক্ততার কারণে জনজীবনে নানামুখী দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় এলাকার বহু টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে বিশুদ্ধ পানির প্রবল অভাব দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে পানি সংকটের কারণে ১’শ হেক্টরের অধিক জমিতে আউশ ধান রোপণ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। পানি সংকটের কারণে দোহাজারী শঙ্খ নদীর তীরবর্তী এলাকার চাষাবাদ করা বরবটি, ঝিঙ্গা, চিছিঙ্গা, ঢেড়শ, কাঁকরোলসহ গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন জাতের সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে হতাশায় রয়েছে কৃষকেরা।
এদিকে, চন্দনাইশ পৌরসভার মগবিল, আড়ালিয়া, সুচিয়া, কাতবিল ও হারলা বিলের ২’শ হেক্টরের অধিক জমির আউশ ধান লবণাক্ত পানির কারণে জ্বলে গিয়ে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
কৃষক নজরুল ইসলাম, বদিউল আলমসহ কয়েকজন কৃষক জানান, চলতি মৌসুমে তীব্র গরম, অনাবৃষ্টি, খরার কারণে পানি সংকটে চাষাবাদ ব্যাহত হয়েছে। শতাধিক হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়নি। চলতি মৌসুমে যেসব জমিতে আউশ ধান রোপণ করা হয়েছে এরমধ্যে চন্দনাইশ পৌরসভার মগবিল, আড়ালিয়া, সুচিয়া, কাতবিল ও হারলা বিলের ২’শ হেক্টরের অধিক জমির আউশ ধান লবণাক্ত পানির কারণে জ্বলে গিয়ে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।
পূর্ব জোয়ারার কৃষক নুরুজ্জামান বলেন, প্রতিকানি (৪০ শতক) জমিতে চাষাবাদে ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। ১৮ কানি জমিতে চাষাবাদ করে তার প্রায় ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
স্কীম ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক বাবুল বলেন, গত মৌসুমে লবণাক্ততার কারণে চাষাবাদ না হওয়ায় কৃষকেরা অনেকে এ পেশা থেকে সরে পড়েছে। যারা ঝুঁকি নিয়ে চলতি মৌসুমে আউশ ধান রোপণ করেছেন- পুনরায় লবণাক্ত পানির কারণে ফসল উৎপাদন না হওয়ায় অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। স্কীম ম্যানেজার মোজাম্মেল হক বাবুলের প্রায় ৪ হয়েছে টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানান তিনি। এসব এলাকার ৪ জন স্কীম ম্যানেজার একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষক এবং স্থানীয় সচেতন মহল ও স্কীম ম্যানেজারের জন্য ক্ষতি পোষাতে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজাদ হোসেন বলেন, তীব্র গরম ও খরার কারণে পানি সংকট ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে চলেছে। গত মৌসুমেও একই অবস্থার কারণে আউশের ফলন ব্যাহত হওয়ায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এসব এলাকায় প্রতিবছর এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকবে। তাই সামা-সিবল (ওয়াটার পাম্প)’র ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে স্কীম ম্যানেজারদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ এ পরামর্শ মোতাবেক কাজ করে নাই। সামা-সিবল (ওয়াটার পাম্প) স্থাপন করলে ৩ মৌসুমে অবাধে চাষাবাদ করা সম্ভব হবে। প্রতিটি সামা-সিবল (ওয়াটার পাম্প) স্থাপনের জন্য ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা ব্যয় হবে- তাই এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষক ও সচেতন মহল প্রশসানের উদ্যোগে চাষাবাদের লক্ষে সামা-সিবল (ওয়াটার পাম্প) স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৪’শ ৫৩ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রায় ৩ হাজার ৪’শ ২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। তাছাড়া নদীর পানিতে লবণাক্ততার কারণে প্রায় ১’শ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
পূর্বকোণ/এসএ