চট্টগ্রাম শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

এমপি’তে হেরে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন জমা জাফর আলমের

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

এম জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া

১৪ মে, ২০২৪ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ

উপজেলা পরিষদের ষষ্ঠ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রবিবার (গতকাল) ছিলো মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন। নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ১৬ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন। তারমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ছয়জন, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে তিনজন এবং পুরুষ ভাইস-চেয়ারম্যান পদে সাতজন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

 

এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন সম্প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যাওয়া সাবেক এমপি ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম। তিনি গত সংসদ নির্বাচনে কল্যাণ পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের কাছে হেরে গিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ গ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম।

 

চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ইরফান উদ্দিন জানান, আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য ১৬ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাময়িক বহিষ্কৃত সভাপতি জাফর আলম, চকরিয়া উপজেলা আ. লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, বদিউল আলম, আব্দুল্লাহ আল হাসান ও মো. সাইফুল ইসলাম।

 

ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্টু, আওয়ামীলীগ নেতা ও চকরিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন কান্তি দাশ, আ. লীগ নেতা মহসিন বাবুল, বেলাল উদ্দিন, মুহাম্মদ ফয়সাল, নুরুল আমিন ও চকরিয়া প্রবাসী ইউনিয়নের সভাপতি মুবিনুল ইসলাম।

 

ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন হক জেসি, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়া বেগম ও জাহানারা পারভীন।

 

তিনি আরও বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৬১ হাজার ১০৩ জন। তারমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৭ জন, মহিলা ভোটার ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬৬ জন। ১১৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে।

 

সংসদ নির্বাচনে হেরে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী জাফর:

জাসদ থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ১৯৯৬ সালে যোগ দেয়া জাফর আলমের নির্বাচনী ভাগ্য অম্লমধুর। তিনি প্রথম নির্বাচন করেন চিরিঙ্গা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে। ওই নির্বাচনে হেরে নীরব ছিলেন অনেকদিন। পরে চকরিয়া পৌরসভার নির্বাচনে লড়ে প্রথমবার হারলেও দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু তৃতীয়বার লড়ে হেরে যান।

 

এরপর ২০১৪ সালে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে লড়ে বিজয়ী হয়ে ব্যাপক পরিচিত পান। পাশাপাশি উপজেলার রাজনীতিতেও একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন। তার সুফলও পান হাতেনাতে। ২০১৮ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর স্থানীয় আওয়ামীলীগে কোন্দল নীরব থেকে সরবে প্রকাশ পায়। এতে নিজের কর্মকান্ড ও আপন বলয় গড়ে তোলা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়েন। ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে নৌকা পাননি। তাতেও দমে থাকেননি জাফর আলম। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ে কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম বীর প্রতীকের কাছে হেরে যান।

 

সংসদ নির্বাচনের পর জাফর আলমের প্রতিপক্ষ গ্রুপ সরগরম হয়ে উঠেন। এতে খানিকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন জাফর আলমের অনুসারীরা। এরই প্রেক্ষিতে আপন বলয় টিকিয়ে রাখতে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে লড়ছেন বলে রাজনৈতিক সচেতনসহ বিভিন্ন মহলে বলাবলি হচ্ছে।

 

এ ব্যাপারে জাফর আলম ভিডিও বক্তব্যে বলেন, সংসদ নির্বাচনের পর চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ অভিভাবক হারা হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও নানা পেশার মানুষের দাবি বাস্তবায়ন করতেই আমি প্রার্থী হয়েছি।

 

আবারও প্রার্থী হওয়া বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, ‘নানা অনিয়ম দুর্নীতি করে রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া জাফর আলমের লোভের শেষ নেই। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মুখ বন্ধ রাখতে ও আইনি পদক্ষেপ থেকে বাঁচতে সংসদ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।’

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট