ঈদ এলেই সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সদ্য বিদায়ী ঈদে মানুষের যাতায়াতে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৪০৭ জন মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন।
এ সময়ে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ২১ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ২টি দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত, ৫ জন আহত হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ পথে সর্বমোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় জন ৪৩৮ নিহত ও ১ হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টর্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরীর এসব তথ্য জানান। সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছে। গত ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছিল। বিগত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১.২৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪.০৮ শতাংশ, আহত ১৪৭.৪৩ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৯৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৫ জন নিহত ও ২৪০ জন আহত হয়েছেন। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৯.৬২ শতাংশ, নিহতের ৪০.৫৪ শতাংশ এবং আহতের ৩০.৩৭ শতাংশ প্রায়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয়ও আঞ্চলিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পাশাপাশি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (পঙ্গু হাসপাতালে) সড়ক দুর্ঘটনায় আহত। ৬৫৮ জনের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৬০৮ জন আহত রোগীর তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গত ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে অবকাঠামো ভালো হওয়ায় যানবাহনের গতি বেড়েছে। গতিকে নিরাপদ করার মতো আইনি কাঠামো, দক্ষ চালক, মানসম্মত যানবাহনের অভাব রয়েছে। আইন প্রয়োগে দুর্নীতির কারণে জাতীয় মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, নিষিদ্ধ ত্রি-হুইলার, ইজিবাইকের মতো যানবাহন অবাধে চলছে। এছাড়াও ছোট ছোট যানবাহন মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ইজিবাইকের অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাওয়ার কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। তিনি মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের আমদানি বন্ধ করে দেশব্যাপী উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। ফিটনেস বিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করা, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী পরিবহন ঠেকানো, আইন প্রয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে ডিজিটাল পদ্ধতি প্রয়োগ, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট করা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে গণপরিবহনগুলোতে নগন অর্থ বন্ধ করে ডিজিটাল লেনদেন চালুর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুরদ্রোচ্ছা খান, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আব্দুল হক, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, মো. মহসিন প্রমুখ।
পূর্বকোণ/এসি