তুমুল বৃষ্টি ও ঝড়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই অচল হয়ে পড়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন দুবাইয়ের ন্যাশনাল ক্যারিয়ার এমিরেটস এয়ারলাইন্স, এয়ার অ্যারাবিয়াসহ বিভিন্ন এয়ারলাইনসের হাজারো ট্রানজিট যাত্রী।
সোমবার (১৬ এপ্রিল) রাত থেকে মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) রাত ৯টা পর্যন্ত টানা বর্ষণে জলমগ্ন হয়ে পড়ে দুবাই শারজাহ আজমানের ব্যাপক জনপদ।
বিগত ৭৫ বছরে দেশটিতে এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নজির নেই। দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বোচ্চ ২৫৪ মি.মি. পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে, যা দেশের দু’বছরের সর্বমোট বৃষ্টিপাতের সমান। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে সিটিগুলোর ব্যাপক জনপদ। বন্ধ হয়ে পড়েছে যানবাহন চলাচল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
শারজাহ এয়ারপোর্ট এবং এয়ারপোর্ট সংলগ্ন সড়ক জলমগ্ন হওয়ায় স্বাভাবিক বিমান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ওমরাহ শেষে মদিনা থেকে চট্টগ্রাম ফেরার পথে শারজাহ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে আটকে পড়া এয়ার অ্যারাবিয়ার জি-৯ ৫২৬ ফ্লাইটটির প্রায় ১৫০ যাত্রী। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা ২৭ ঘণ্টা শারজাহ বিমানবন্দরে আটকে আছেন।
ফ্লাইটের যাত্রী চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার গর্জনিয়া গ্রামের আবু বক্কর ওমরাহ শেষে মা, ছোট ভাই ও বোনকে নিয়ে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন।
তিনি জানান, যাত্রীদের মধ্যে বিশেষ করে নারী ও শিশু যাত্রীদের দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি তাদের পরবর্তী ফ্লাইট কখন। যাত্রীদের খাবার দেয়া হলেও হোটেল দেয়া হয়নি। এয়ারপোর্টের মেঝেতে, চেয়ারে শুয়ে-বসে কষ্টকর সময় অতিবাহিত করতে হচ্ছে যাত্রীদের।
একই বিমানে চট্টগ্রামের কোরবানিগঞ্জের যাত্রী জুবায়ের আকতার পরিবারের ৪ সদস্যসহ ফিরছিলেন ওমরাহ শেষে। চট্টগ্রাম নগরীর কালামিয়া বাজারের নাদিয়া ফেরদৌস, সীতাকুণ্ডের মোহাম্মদ আবদুল লতিফ ও রবিউল হক, ফেনী সদরের মোহাম্মদ ইউনুস, চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের মোহাম্মদ জহির উদ্দিন তাদেরকে হোটেল না দেওয়ায় প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যাত্রীরা সবাই ওমরাহ শেষে দেশে ফিরছিলেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দুবাইস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের দ্বিতীয় সেক্রেটারি সাজ্জাদ জাহির জানান, এ বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। দুবাই ও শারজাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমিরেটস, ইজিপ্ট এয়ার, এয়ার অ্যারাবিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বহু এয়ারলাইনসের ফ্লাইট রানওয়েতে পানি উঠায় আটকে আছে। রানওয়ের পানি নেমে গেলে আজ বৃহস্পতিবার বিমানজট কমবে। বহু ভিআইপি প্যাসেঞ্জারও এয়ারপোর্টে আটকা পড়ে আছেন। আমরা বাংলাদেশি যাত্রীদের বিপাকে পড়ায় দুঃখ প্রকাশ করছি এবং তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।
তবে আজ বৃহস্পতিবার আমিরাতের স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সর্বশেষ ফ্লাইটটির যাত্রী আবু বক্করসহ অন্যান্য যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মদিনা থেকে মঙ্গলবার রাত ৯ টায় এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে শারজাহ ট্রানজিট করতে আসার ৩৬ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও তাদের ফ্লাইট দেয়া হয়নি। তিনি ওমরাহ শেষে মা, ছোট ভাই ও বোনকে নিয়ে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন বলে পূর্বকোণকে জানান।
পূর্বকোণ/পিআর