চট্টগ্রাম রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

হাইপ্রেসারে কি গরুর গোশত খাবেন?

১৩ এপ্রিল, ২০২৪ | ১:৪০ অপরাহ্ণ

কম বয়সে হাইপ্রেসার হলে প্রথমেই কোপটা আসে গরুর গোশতের ওপরে। একটু ভাবলে বুঝতে পারবেন দোষ আসলে গরুর বা গরুর মাংসের না, দোষ আপনার নিজেরই।

শুধু গরুর গোশত খেয়ে হাই প্রেসার হওয়ানো সম্ভব না। অধিকাংশ হাইপারটেনশান রোগীরা প্রতিবেলা গরুর গোশত খান না, ইভেন প্রতিদিনও গরুর গোশত খায় না। পৃথিবীর যে সব পপুলেশান সবচে বেশি গরুর গোশত খায়, তাদের বেশিরভাগের মধ্যে হাইপারটেনশান আমাদের চেয়ে কম।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার হাইপারটেনশান রোগীদের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হচ্ছে ধুমপান, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, ক্রনিক স্ট্রেস এবং স্বাভাবিকের চেয়ে কম এইচডিএল।

কম বয়সে (৪৫ এর নিচে) হাইপ্রেসার আছে এমন অনেক মানুষ আমরা আমাদের চারপাশে দেখি। আমাদের ভাষায় স্বাভাবিক (নিষ্ক্রিয়) জীবনযাপন করেন। সারা বছর নড়াচড়া নেই, ওজন খুব বেশি না, ৭৫-৮০ এর মধ্যেই। এই একটু আধটু বিড়ি সিগারেট ফোকেন, দিনে পাঁচ-সাতটার বেশি না। পুরুষ মানুষ তো ওসব একটু খাবেই। বন্ধু-বান্ধব বা কলিগদের আড্ডায়
সুযোগ পেলে দু-চার পেগ হার্ড ড্রিংক্স না করলে মান-ইজ্জত থাকে না সেই ইউনিভার্সিটি লাইফ থেকে।

যেহেতু, বহু বছর ধরে ফিজিক্যাল এক্টিভিটি নাই, রোদে চলাফেরা নাই, ৭৫ কেজির মধ্যে যে প্রায় ৩০ কেজি মাসল মাস থাকার কথা, সেটুকুও নাই। আছে টেনেটুনে ২২-২৫ কেজি বা আরো কম। আধুনিক জীবনের নিত্যসঙ্গী স্ট্রেস তো আছেই।

আর বহুদিন ধরে চলছে সফট ড্রিংক্স, রিফাইন্ড অয়েল, দেরি করে রাতের খাবার খাওয়া। খেয়াল করলে দেখা যাবে সপ্তাহে ডিম খাওয়া হচ্ছে হাইয়েস্ট ৫-৬ টা বা ৮টা, গরুর গোশত খাওয়া হচ্ছে ২-৩ বারে সব মিলিয়ে কেজিখানেকও না।

কিন্তু সপ্তাহে সিগারেট ফোকা হচ্ছে ৩৫-২০০ টা, দেরিতে ঘুমানো হচ্ছে রোজই, সফট ড্রিংক্স চলছে কয়েক লিটার করে, আবার চলছে হালকা পাতলা হার্ড ড্রিংক্স। যার খবর কুকর্মের সঙ্গীরা ছাড়া কাকপক্ষীটিও জানে না।

সফট আর হার্ড ড্রিংক্স মিলে লিভারের বারোটা বাজাচ্ছে, আর্টারিতে ফ্যাট জমাচ্ছে। সিগারেট আর্টারির ওয়াল ড্যামেজ করছে, আর্টারিকে একদিকে বানাচ্ছে চিকন, আরেকদিকে কমাচ্ছে ফ্লেক্সিবিলিটি। ঘুমের অভাবে শরীর শান্ত হচ্ছে না, থেকে যাচ্ছে বাড়তি রক্তচাপ।

এই সবকিছুর দায় গরুর গোশত, খাসীর গোশত, ডিমের ওপর দিয়ে কোন লাভ আছে?

বলির পাঠা হিসেবে একটা সহজ শত্রু বের করলেন, আসল সমস্যার সমাধান করলেন না। গত প্রায় সত্তর বছর ধরে এসবই চলছে। ফলে রোগী কমে নি, শুধুই বেড়েছে।
আমি, বা অন্য কেউই মৃত্যু ঠেকাতে পারবে না। মৃত্যু প্রতিটি জীবনের অমোঘ পরিনতি। আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি সুস্থভাবে বাঁচার ও সুস্থভাবে পরের বোঝা না হয়ে মরার। ট্রাস্ট মি, পরের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকা ও মারা যাওয়ার মত কষ্টের আর কিছু নাই। গরুর গোশতের ওপর সব দোষ না চাপিয়ে, আরো বড় সমস্যাগুলির দিকে নজর দিন।

ধুমপান, চিনি, আর্টিফিসিয়াল ট্রান্সফ্যাট, অপ্রাকৃতিক তেল, পরিমিত ঘুমের অভাব, ভিটামিন সি ও ম্যাগনেসিয়াম ডেফিসিয়েন্সিকে প্রতিরোধ করুন।
মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে গরুর গোশত খেয়ে সুস্থ ছিল কারণ এই সমস্যাগুলো আগে ছিল না।

সমস্যার গোড়া না কেটে আগায় পানি ঢাললে কি সমাধান হবে?
তবে মনে রাখতে হবে, ইতোমধ্যেই যাদের শরীরের অবস্থা যথেষ্ট খারাপ, তারা এই পোস্ট পড়েই গরুর গোশত খাবার পরিকল্পনা করবেন না। আপনার চিকিৎসক ও নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ নিন। সূত্র : সজল’স ডায়েট ফালসাফা

 

 

পূর্বকোণ/এএইচ 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট