চট্টগ্রাম রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

সুস্থ কিডনি, সুস্থ দেহ

ডা. মো. ফয়েজুর রহমান

১২ মার্চ, ২০২৪ | ৮:৫৩ অপরাহ্ণ

সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় দেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে ভুগছেন। এরমধ্যে প্রতিবছর ডায়ালাইসিস করতে হয় প্রায় ৪০ হাজার কিডনি রোগীদের। কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে তাই প্রতিবছর ১০ মার্চ বিশ্বব্যাপী কিডনি দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সারাবিশ্বের মতো আমাদের দেশেও নানা আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে এই কিডনি দিবস উদযাপন করা হয়। একটাই মূল উদ্দেশ্য, দেহের এই অবশ্যম্ভাবী প্রত্যঙ্গটি নিয়ে জনমনে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

 

আমাদের প্রাত্যহিক কর্মকান্ডের কারণে যে বর্জ্যগুলো তৈরি হয় সেগুলো প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়া হলো কিডনির মূল কাজ। একইসাথে কিডনির আরও কিছু কাজ আছে, কোনো কিছু যদি আমাদের শরীরে অতিরিক্ত হয়ে যায়, যেমন তরলের মাত্রা যদি বেড়ে যায়, যদি লবণ বেড়ে যায় এসব নিয়ন্ত্রণ করে পাশাপাশি রক্ত তৈরিতেও সহায়তা করে কিডনি।

 

কিডনির স্বাভাবিক যে কাজগুলো আছে সেগুলো যখন কিডনি করতে পারে না তখনই কিডনিতে তথা শরীরে ঝামেলা শুরু হয়। কিডনির প্রধান দুই ধরনের রোগ হলো- স্বল্পমেয়াদি কিডনি রোগ এবং দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ। নানবিধ কারণে কিডনিতে স্বল্পমেয়াদে রোগ হতে পারে যা সঠিক চিকিৎসায় সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী রোগটি বেশি জটিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। লক্ষণ যখন দেখা যায়, তখন কিডনি শতকরা ৭০ ভাগ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। জরুরি ভিত্তিতে তখন রোগীকে ডায়ালাইসিস করাতে হয়।

 

কারণভেদে কিডনি রোগের লক্ষণও আলাদা হয়ে থাকে। স্বল্পমেয়াদি কিডনি রোগের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে প্রস্রাবের মাত্রা কমে যায় এবং রোগী বমি বমি বোধ করে। আর দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে অল্প মাত্রায় শরীর ফুলে যায়, পায়ে পানি আসে, চোখের চার পাশে পানি আসে, সাথে ক্ষুধামন্দা থাকে, খাবারে অরুচি এবং ঘুমের অসুবিধা হয়। একজন মানুষের এসব সমস্যা দেখা দিলেই তাকে কিডনি রোগের বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

 

দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের প্রধান কারণই হচ্ছে ডায়াবেটিস। একজন ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে ধারণাই করা হয় ডায়াবেটিসের কারণেই তার কিডনি রোগ হয়েছে। এছাড়াও, উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের অন্যতম একটি কারণ। দীর্ঘমেয়াদে কারও যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে এবং তিনি যদি সেটাকে গুরুত্ব না দেন, একপর্যায়ে গিয়ে তার কিডনি বিকল হয়ে পড়ে। স্থুলতার সঙ্গেও কিডনি রোগের সম্পর্ক আছে। কিডনিতে পাথর, ক্যানসার ও দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের সঙ্গে স্থুলতা জড়িত। এ ছাড়া ওজন বাড়লে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও বাড়ে। এছাড়াও, ধূমপান কিডনিতে রক্ত চলাচল ব্যহত করে। এ ছাড়া কিডনি ক্যানসারেরও ঝুঁকি বাড়ায়।

 

কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে খাদ্যাভাসের পরিবর্তন করা বাধ্যতামূলক। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসের শরীরে লবণ ও পানির ভারসাম্য বিনষ্ট করে, যার ফলে রক্তে অ্যাসিড ও ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যায়, ফলাফলে কিডনি বিকল হয়ে পড়ে। যদি বিকল হয়েও পড়ে, নিয়মিত খাদ্যতালিকা মেনে চললে সুস্থ–স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়। তবে, কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে ধূমপান পরিত্যাগ করা অবশ্যম্ভাবী।

 

লেখক: এমবিবিএস, এমসিপিএস, এমডি (নেফ্রোলজি), সিনিয়র কনসালটেন্ট- নেফ্রোলজি, এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম।

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট