চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মাইন দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলাম পাকিস্তান আর্মির ট্রেন: বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল বশর

পূজন সেন, বোয়ালখালী

১১ মার্চ, ২০২৪ | ১:১৪ অপরাহ্ণ

‘১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট সকালে কালুরঘাট সেতুর অদূরে ১৩ নম্বর ব্রিজের আগে রেললাইনে দুটি মাইন বসিয়ে দিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল, সকালে আসা ট্রেনটি উড়িয়ে দিতে পারলে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হবে। ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। এর আগেরদিন রাতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী ভোরে মাইন বসানো হয়। এ মাইন বিস্ফোরণে পাকিস্তানি আর্মিদের ট্রেন উড়ে যায়। এতে ১৯ জন আর্মি নিহত হন।’ বীর মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন কোম্পানি কমান্ডার আবুল বশর একাত্তরের স্মৃতিচারণ করে পূর্বকোণকে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘১৩ আগস্ট রাতে কধুরখীল মহাজন বাড়ির সামনে বসে আমি, সোলায়মান কমান্ডার, মো. ইদ্রিছসহ কয়েকজনে মিলে রেললাইনে মাইন বসানো পরিকল্পনা করেছিলাম। মাইন বসানো পর ভেবেছিলাম মালবাহী ট্রেন আসছে। পরে দেখি পাকিস্তানি আর্মির ট্রেন। এ ঘটনার খবর বিবিসির সংবাদেও বলা হয়েছিল।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশর জানান, ২৬ মার্চ কালুরঘাটে প্রতিরোধ যুদ্ধে বাঙালি সেনা সদস্য, ইপিআর সদস্য, পুলিশ সদস্য, আনসার সদস্যদের আমরা সহযোগিতা করেছিলাম। ২৬ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত চলে এই প্রতিরোধ যুদ্ধ। ১২ এপ্রিল পাকবাহিনী স্থল ও আকাশপথে আক্রমণ করলে প্রতিরোধ যোদ্ধারা পিছু হটেন। এইদিন প্রতিরোধ যোদ্ধারা উপজেলার করলডেঙ্গা পাহাড়ে চলে গিয়েছিলেন। কালুরঘাটে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন সিপাহি নায়েব আলী এবং গুলিবিদ্ধ হন ক্যাপ্টেন হারুন। শহীদ সিপাহি নায়েব আলীর বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। তাঁকে গোমদন্ডী বহদ্দারপাড়ার একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি ছিলেন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম শহীদ।

৭১’র ১২ এপ্রিল পাকবাহিনী বোয়ালখালীর বর্তমান ইউএনও অফিসে অস্থায়ীক্যাম্প স্থাপন করে। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পুরাতন বাসভবনটি ছিল রাজাকারদের মূল ঘাঁটি। এরপর ২০ এপ্রিল পশ্চিম শাকপুরায় সংঘটিত হয় গণহত্যা। এটি ছিল দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম গণহত্যা। সেইদিন গ্রামের শতাধিক সাধারণ মানুষকে হত্যা করে পাক বাহিনী। জ্বালিয়ে দেয় বাড়িঘর। এছাড়া কধুরখীলে গণহত্যা সংঘটিত হয় ওই বছরের ৩১ অক্টোবর। এইদিন ২০ জন সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে হানাদার বাহিনী।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশর কমান্ডার বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে নিরীহ লোকদের ধরে এনে টর্চার সেলে নির্যাতন করে হত্যা করা হতো। হত্যার পর লাশগুলো ফেলে দেওয়া হতো উপজেলা সদরের অদূরে রায়খালী খালের রইস্যারমার ঘাট এলাকায়। এছাড়া পশ্চিম শাকপুরার দারোগা স্কুলের মাঠ, কধুরখীল দুর্গাবাড়ি সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়, কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ কলেজের সম্মুখ প্রান্তর, করলডেঙ্গার কাজীর ভানজাইল ও কর্ণফুলী নদীর পূর্বপাড় কালুরঘাট সেতু অংশে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে পাকবাহিনী।

তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনটি ছিল পাক বাহিনী ও এদেশীয় রাজাকারদের টর্চার সেল। জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় বর্তমানে বাসভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ৭১ সালের ২৮ আগস্ট এই রাজাকার ক্যাম্প চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে আক্রমণ করা হয়। সেইদিনের সম্মুখযুদ্ধে গ্রেনেড বিস্ফোরণে শহীদ হন ইপিআর হাবিলদার ফজলুল হক (ওস্তাদ ফজলু)। আহত হন রেজাউল করিম আরবী বেবী ও সৈয়দ আবদুল ওয়াজেদ। আহত অবস্থায় তাঁদের আটক করেছিল পাক বাহিনী। এই তিন বীর শহীদের লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট