চট্টগ্রাম রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়, যা জানা দরকার

ডা. আবুল ফয়সাল মোহাম্মদ নুরুদ্দীন চৌধুরী

১০ মার্চ, ২০২৪ | ৫:৫২ অপরাহ্ণ

পবিত্র রমজান মাসে আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে আর খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ডায়াবেটিস রোগীদের কঠোর নিয়মকানুন মেনে খাবার ও ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। সময়মতো খাবার ও ওষুধ না খেলে অনেকেই হাইপো ও নানারকম সমস্যায় পড়েন।
রমজান মাসে সাধারণত ইফতার ও সাহ্‌রিতে দুটি মূল খাবার গ্রহণ করা হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে যে রমজান মাসেও দৈনিক ক্যালরি চাহিদা একই রকম থাকবে, কেবল সময়সূচিতে পরিবর্তন আসতে পারে। অন্য সময়ের মতোই চিনি বা চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া নিষেধ। জটিল শর্করা যেমন: লাল চালের ভাত, রুটি, ওটস, কর্নফ্লেক্স খাওয়া ভালো। যথেষ্ট পরিমাণে শাকসবজি, তাজা ফলমূল খেতে হবে।
ইফতারে অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া ও তেলযুক্ত উচ্চ ক্যালরি খাবার পরিহার করা উচিত। একসঙ্গে অনেক খাবার না খেয়ে ভাগ করে খাওয়া উচিত। এ ছাড়া কয়েকটি বিষয়ের দিকে লক্ষ রাখুন।
সাহ্‌রি না খেয়ে রোজা রাখবেন না। সাহ্‌রিতে ভাত বা রুটি, সবজি, মাছ বা মাংসসহ একটি পূর্ণাঙ্গ খাবার খেতে হবে।
ইফতারে শরবত বা মিষ্টি জুস না খেয়ে ডাবের পানি, ফলের রস, লেবুপানি পান করতে পারেন।
ইফতার ও সাহ্‌রির মাঝখানে দুধ, ফলমূল, চিড়া, দই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
রাতের বেলা পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
রমজান মাসে দিনের বেলায় ব্যায়াম বা ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে হাঁটাহাঁটি না করাই ভালো। সন্ধ্যার পর হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে।
রমজানে রক্তে সুগার পরিমাপ করুন-
রমজান মাসেও সময় নির্ধারণ করে রক্তে শর্করা পরিমাপ করতে হবে। খারাপ লাগলে বা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে রক্তে গ্লুকোজ মাপতে হবে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণগুলো হচ্ছে দুর্বল লাগা, মাথা ঝিমঝিম করা, চোখে ঝাপসা দেখা, ঘাম হওয়া, হাত কাঁপা, মাথা শূন্য বোধ হওয়া ইত্যাদি।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিন-
* রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ৩.৯ মিলিমোল বা ৭০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের কম হয়ে গেলে
* রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ১৬.৬ মিলিমোল বা ৩০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি পাওয়া গেলে
এবং যেকোনো আকস্মিক অসুস্থতায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
রমজানে ইনসুলিন ও ওষুধ
রক্ত পরীক্ষা করে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে রমজানে ওষুধ বা ইনসুলিনের ডোজ এবং শর্করা পরিমাপের সময়সূচি সম্পর্কে জেনে নিন। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় এই মাত্রা একেকজনের জন্য একেক রকম হতে পারে। সাধারণভাবে রমজানে ডায়াবেটিস বিরোধী ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন-
বিশেষ করে সালফোনাইল‌ইউরিয়াস এবং রেপ্যাগ্লিনাইড এ ধরনের ওষুধগুলো হাইপোগ্লাই‌‌সেমিয়া করে। তবে মেটফরমিন বা গ্লিটাজোনগুলি খুব কমই হাইপোগ্লাইসেমিয়া সৃষ্টি করে, যদি না সাথে ইনসুলিন স্টিমুলেটর বা ইনসুলিন ইনজেকশন না নেওয়া হয়।
অ্যাকারবোস বা মিগ্লিটল, নির্ধারিত হিসাবে নেওয়া, হাইপোগ্লাইসেমিয়া সৃষ্টি করে না। রমজান মাসে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করে কীভাবে ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা সমন্বয় করবেন, তা-ও শিখে নিন। ‌তবে যাদের জন্য রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ-
যাদের ব্লাড সুগার কমে যাওয়ার ইতিহাস আছে।
যারা কিডনির রোগী ও ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন।
যারা গর্ভবতী ও ইনসুলিন নিচ্ছেন।

লেখক: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট