চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

প্রতিবাদের মাধ্যমে আত্মাহুতি যুগে যুগে

ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে শরীরে আগুন দেয়া সেই মার্কিন সেনার মৃত্যু

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১১:২২ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে নিজের গায়ে আগুন দেয়া সেই মার্কিন সেনা অ্যারন বুশনেল (২৫) মারা গেছেন। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। এর আগে রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টার দিকে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের বাইরে ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন’ চিৎকার করতে করতে এক ব্যক্তি নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে দমকল ও জরুরি সেবা সংস্থার কর্মীরা এসে দগ্ধ ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সারা গায়ে দাউ দাউ আগুন। যন্ত্রণায় কাতর তিনি- কারো নাম নেননি মুখে, ডাকেন নি প্রিয়জনকে। শুধু দাবি জানিয়ে গেছেন, ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’- ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো। তিনি আরব হতে পারতেন, হতে পারতেন ফিলিস্তিনি, কিংবা দুনিয়ার যে কোনো প্রান্তের একজন শান্তিকামী মানুষ। অথচ তিনি একজন মার্কিন সেনা, তাঁর দেশের সেনারাই গণহত্যা চালিয়েছিল ভিয়েতনামে, ইরাকে, আফগানিস্তানসহ অনেক দেশে। সেই আমেরিকান বিমানসেনা ঘুরে দাঁড়ালেন। মৃত্যুর আগে লাইভ ভিডিওতে বলে গেছেন, ‘আমি আর গণহত্যায় জড়াতে চাই না’।
বিক্ষোভের মাধ্যম হিসেবে এমন চরম পন্থা বেছে নেওয়ার ঘটনাটি নতুন নয়। গত বছর ডিসেম্বরেও আটলান্টায় ইসরায়েলি কনস্যুলেটের সামনে এক বিক্ষোভকারী নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। ঘটনাস্থলে একটি ফিলিস্তিনি পতাকা পাওয়া গিয়েছিলো। তবে প্রতিবাদ হিসেবে মার্কিন সেনাবাহিনীর কারও এমন পন্থা বেছে নেওয়ার ঘটনা এ-ই প্রথম।
অ্যারন বুশনেলের ঘটনাটিতে দেখা যায়, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ব্যাপারে বিশ্ববাসীর মনোযোগ টানতে এবং এ বিষয়ে প্রতিবাদ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে তিনি জনসম্মুখে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের আত্মহত্যাকে ‘পরোপকারী আত্মহত্যা’ বলা হয়, কারণ এর লক্ষ্য থাকে সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও ইতিবাচক পরিবর্তন। কখনো কখনো সেটা হতেও দেখা যায়। যেমন ২০১০ সালে তিউনিশিয়ায় এক দোকানি (মোহাম্মদ বুয়াজিজি) তার পণ্য কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন, এ ঘটনার সূত্র ধরে তিউনিশিয়া এবং আরও কিছু আরব দেশে বিপ্লবের সূচনা হয়, যাকে বলা হয় ‘আরব বসন্ত।’
এছাড়াও ইরানে ফুটবল স্টেডিয়ামে নারীদের প্রবেশ রোধের প্রতিবাদে এক ইরানি নারী নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। এর এক মাস পর ৪০ বছরের মাঝে প্রথমবারের মতো ইরানের নারীরা ফুটবল স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি পান।
তবে প্রথম আলোচিত ‘আত্মাহুতি’র ঘটনাটি ছিল বোধহয় মার্কিনিদের ভিয়েতনাম-অভিযানের (১৯৫৫-১৯৭৫) সময়। মার্কিন সমর্থিত দক্ষিণ ভিয়েতনামী সরকারের বৌদ্ধদের উপর নিপীড়নের প্রতিবাদে থিচ কোয়াঙ ডাক নামের এক সন্ন্যাসী গ্যাসোলিনে নিজেকে জ¦ালিয়ে দিয়েছিলেন (১১ জুন, ১৯৬৩)। মার্কিন আগ্রাসনের সেই সময়ে পর পর বেশ কিছু এমন আত্মহননের ঘটনা ঘটলেও ইতিহাসে ডাক-এর আত্মাহুতির ঘটনাটিই বেশি আলোচিত।
তবে এমন আত্মহননের উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, এর পেছনে যে মানসিক অস্থিরতা, চাপ ও কিছু ক্ষেত্রে মানসিক অসুস্থতার ভূমিকা থাকে, তা অস্বীকার করা যায় না।
অ্যারন বুশনেল যে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দিলেন, এর পেছনে ঠিক কী মানসিকতা কাজ করেছিল তার সঠিক উত্তর এখন আর পাওয়ার উপায় নেই। তবে সবার আশা- তার নেওয়া পদক্ষেপে ফিলিস্তিনি হামলায় ইসরায়েলের পক্ষে থাকা মার্কিন সরকারের বোধোদয় ঘটবে।
[সূত্র : বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন]

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন