চট্টগ্রাম শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

কাজে ফিরছেন টেকনাফ-উখিয়া সীমান্তের মানুষ

টেকনাফ সংবাদদাতা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১১:০৭ অপরাহ্ণ

গোলাগুলি থেমেছে মিয়ানমারের রাখাইনে। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সারাদিন উখিয়া থেকে টেকনাফের সেন্টমার্টিন পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি ও মর্টারশেলের শব্দ শোনা যায়নি। এতে দিনটি স্বস্তিতে পার করেছেন সীমান্তের এপারের মানুষ।

 

এছাড়া ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তেও গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি ও মর্টারশেলের শব্দ শোনা যায়নি। পরিস্থিতি শান্ত থাকায় স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরেছেন সীমান্তের মানুষ।

 

এদিকে গত চার দিনে জান্তা বাহিনীর আরও কয়েকটি ঘাঁটি দখল করেছে মিয়ানমারের পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস-পিডিএফ ও জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর (ইএও) বিদ্রোহীরা।

 

অন্যদিকে গোলাগুলি বন্ধ হলেও টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ জেটিতে এখনো জনসাধারণের ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটক ও সাধারণ লোকজন জেটিতে উঠতে পারেননি। কিছু মানুষের রুটিরুজি নাফ নদের জেটিনির্ভর হওয়ায় সীমান্তের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তারা জেটি উন্মুক্ত রাখার দাবি করেছেন।

 

জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে ১১ দিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি ও মর্টারের শব্দ শোনা যায়নি। কিন্তু এর আগের তিন সপ্তাহ সীমান্তের ওপারে মর্টারশেল ও গোলাগুলির বিকট শব্দে ভয়াবহ অবস্থায় কেটেছে সীমান্তবাসীর। ঘরবাড়ি ছেড়ে তাদের অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছিল। এছাড়া ঘুমধুম জলপাইতলীতে মর্টারশেলে দুজনের মৃত্যু এবং তুমব্রুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচজন আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় সেখানকার কৃষক, শ্রমিকরা তাদের কর্মে ফিরেছেন। গত সপ্তাহে উখিয়ার রহমতেরবিল ও টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে গোলাগুলি বন্ধ থাকায় সেখানকার মানুষও স্বস্তিতে রয়েছেন। নাফ নদের এ দুই সীমান্তে কয়েক হাজার একর জমিতে লবণ চাষ, চিংড়ি ঘের ও শীতকালীন সবজিক্ষেত রয়েছে। রাখাইনে অস্থিরতার সময় চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। তারা এখন ক্ষতি পোষাতে দিন-রাত মাঠে কাজ করছেন।

 

তুমব্রু এলাকার কৃষক মো. আব্দুল হামিদ বলেন, তুমব্রু এলাকায় আমার ১০ কানিতে ধানক্ষেত রয়েছে। দুই সপ্তাহ আগেও গোলাগুলি ও মর্টারের শব্দে ভয়ে কাজ না করে বাড়ি ফিরতে হত। তবে কয়েকদিন ধরে গোলাগুলি না থাকায় ক্ষেতে কাজ করতে পারছি।

 

হোয়াইক্যং এলাকার লবণ চাষি মো. সালাম বলেন, মিয়ানমারে গোলাগুলির জন্য ৪০ একর লবণ চাষ ব্যাহত হয়েছে। শ্রমিকদের বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হয়েছে। বর্তমানে সীমান্ত শান্ত থাকায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দিন-রাত কাজ করছি।

 

দক্ষিণের শেষ সীমান্ত জনপদ শাহপরীরদ্বীপ ও প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি গত তিনদিন। এসব সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির বিকট শব্দ ছিল। সীমান্ত পরিস্থিতিতে নাফ নদে নৌযান চলাচল অনিরাপদ হয়ে পড়ায় টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছে প্রশাসন। তবে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত সীমান্ত নিরাপদ বলতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

 

শাহপরীরদ্বীপ এলাকার জেলে নুরুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহের শেষ দিকে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি ও বোমা হামলা হয়েছিল। বোমা বিস্ফোরণে এপারে আমাদের ঘরবাড়িও কেঁপেছে। গত তিন দিন ধরে আপাতত সীমান্ত শান্ত। এখন নাফ নদে নিরাপদে মাছ ধরতে পারব।

 

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তের ওপারে গত তিনদিন তেমন গোলাগুলি শোনা যায়নি। অনেকটা স্বাভাবিকতা বিরাজ করছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে পুনরায় নাফ নদ হয়ে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলবে।

 

পূর্বকোণ/কাশেম/জেইউ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট