চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

দখল-দূষণে বিলুপ্তির পথে কাটগড় মুসলিমাবাদ খাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ | ১২:৪৩ অপরাহ্ণ

নগরীর পতেঙ্গা থানাধীন কাটগড় এলাকার মুসলিমাবাদ খাল। দখল আর দূষণে এখন মৃতপ্রায়। জায়গা দখলের প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন স্থানে সংকীর্ণ নালায় রূপান্তরিত হয়েছে এই খাল। খালের উপর গড়ে তোলা হয়েছে আধাপাকা ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান । ভবন নির্মাণের জন্য আনা বালি ও ইটের টুকরায় ভরাট হচ্ছে খালের বিভিন্ন স্থান। আর যে অংশটুকু এখনও বেঁচে আছে, তা পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। যার ফলে পানির কোন প্রবাহ এখন আর নেই । দখলদারদের বেশিরভাগ প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। সামান্য বৃষ্টিতেও তলিয়ে যায় রাস্তাসহ পুরো এলাকা। বাসিন্দাদের শঙ্কা, খালটি সংস্কার ও দখলমুক্ত করা না গেলে আগামী বর্ষায় পুরো এলাকা তলিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

 

গতকাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কাটগড় থেকে আউটার রিং রোড যাওয়ার পথে সড়কে বাম পাশে পুরো খালটি ময়লা আর আবর্জনায় পরিপূর্ণ। পুরো এলাকা যেন একটা অঘোষিত ডাস্টবিন। বিভিন্ন স্থানে খালের মাঝখানে গড়ে তোলা হয়েছে পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও এ খালে নৌকা চলাচল করতে পারতো। তারও আগে একসময় কাটগড় বাজারে পণ্য আনা নেয়া করতো ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সংস্কার ও দখলদারদের কবলে পড়ে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে খালটি। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন উদ্যোগ নিয়ে খালের বিভিন্ন স্থানে ময়লা পরিষ্কার ও কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিলেন। কিন্তু পুরো খালটি কখনও দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। শীতের সকালে খালের পাড়ে রোদ পোহাচ্ছিলেন মুসলিমাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. বশর।

 

খাল সম্পর্কে তিনি বলেন, একসময় এই খালে স্রোত ছিল। তখন মুসলিমাবাদ খালটির প্রস্থ ছিল প্রায় ৬০ ফুট। বছরের পর বছর সংস্কারের অভাবে খালে সেই পানি আর প্রবাহ এখন নেই । প্রভাবশালীদের দখলে সংকুচিত হয়ে গেছে পুরো খাল। বর্তমানে কোথাও ২৫ ফুট, আবার কোথাও কোথাও ১০ ফুটে পরিণত হয়েছে। তবে দখলদারদের সর্ম্পকে স্থানীয় বাসিন্দারা মুখ খুলতে চান না।

 

তাদের সাথে আলাপে জানা গেছে, স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি খালের বিভিন্ন স্থানে এসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলে ভাড়া দিয়েছেন । ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পলি জমে গেছে পুরো খালে। এরসাথে স্থানীয়দের ব্যবহৃত বর্জ্যে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে পুরো খাল। প্রতি বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট। পুরো এলাকাটি সাগরের কাছাকাছি হলেও পানি নামার কোন সুযোগ নেই। খালটি পুনরুদ্ধার ও এর ময়লা পরিষ্কার করা না গেলে এবারের বর্ষায় আবারও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে।

 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল বারেক বলেন, বর্ষা মৌসুমের আগে ড্রেজার দিয়ে খালটি পরিষ্কার করা হবে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন দরপত্র আহ্বানের পর খালটির সংস্কার কাজ শুরু হলে তখন অবৈধ সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের পর পাল্টে গেছে পুরো পতেঙ্গা। কিন্তু প্রভাবশালীদের হাতে দখল হয়ে যাওয়া একটি খালের কারণে যেন অভিশপ্ত হয়ে আছেন মুসলিমাবাদ এলাকার জনগণ। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে তাদের দুর্ভোগের যেন শেষ থাকে না। তাদের প্রত্যাশা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট