চট্টগ্রাম শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

মোশাররফের ‘সাম্রাজ্যে’ ছেলে রুহেল-শিষ্য গিয়াসের লড়াই

মিজানুর রহমান

২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ

দেশের অর্থনীতির ‘লাইফ লাইন’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই মিরসরাই বাজার। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এ এলাকা অতিক্রম করার সময় দেখা যায় বিভিন্ন জায়গায় সাঁটানো রয়েছে কেবল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যানার-পোস্টার। যাদের একজন এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল, অন্যজন স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন।

শুধু মিরসরাই বাজার নয়, একদিকে সুফিয়া রোড বাজার, মিঠাছড়া বাজার, ঠাকুরদীঘি বাজার, সোনাপাহাড় বাসস্ট্যান্ড, বারৈয়ারহাট; অন্যদিকে খৈয়ারছড়া বাসস্ট্যান্ড, বড়তাকিয়া বাজার, নিজামপুর কলেজ এলাকায়ও দেখা গেল একই চিত্র। যা জানান দিচ্ছিল চট্টগ্রাম-১ আসনে এবার ৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াই হবে রুহেল-গিয়াসের মধ্যেই। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রাম-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ এ পর্যন্ত পাঁচটি নির্বাচনে এ আসন থেকে জয়ী হন বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক। এজন্য মিরসরাইকে মোশাররফের ‘রাজনৈতিক সা¤্রাজ্য’ হিসেবেই দেখেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এবার তিনি নির্বাচন করছেন না। তার চেয়ারে বসাতে চান ছেলে রুহেলকে। কিন্তু বাধ সেধেছেন গিয়াস উদ্দিন। তিনি একসময় মোশাররফের ‘শিষ্য’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।

নৌকা প্রতীকের রুহেল ও ঈগল প্রতীকের গিয়াস ছাড়া এ আসনে প্রার্থী আছেন আরও ৫ জন। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির এমদাদ হোসাইন চৌধুরী, ইসলামিক ফ্রন্টের আব্দুল মান্নান, বিএনএফের মো. ইউসুফ, বিএসপির নুরুল করিম আফছার, বিএমএলের জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী। তবে বৃহস্পতিবার মিরসরাইয়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব প্রার্থীর তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি।

 

ভোটারদের চোখে ভোটের মাঠ :

মিরসরাই বাজারের কোর্ট রোড দিয়ে কয়েকশ গজ সামনে গেলেই হামীম হোটেল। সেখানে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলেন কয়েকজন স্থানীয় সিএনজি অটোরিকশা চালক। আড্ডার ফাঁকে নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা তুলতেই সিএনজি অটোরিকশা চালক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বিষয়টি নিয়ে তার তেমন আগ্রহ নেই। কারণ ভোট দিতে পারবেন কিনা এখনও নিশ্চিত নন তিনি।

 

হামীম হোটেলের পাশেই একটি দোকানে ছোলা বিক্রি করছিলেন নুরুল হুদা। নির্বাচনী পরিবেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ ব্যবসায়ী জানান, প্রচারণা শুরু হয়েছে মাত্র। এখনও সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, মাইকিং শুরু হয়নি। তবে প্রার্থীর সমর্থকরা আসছেন, গণসংযোগ করছেন। ভোটের উৎসব শুরু হতে আরও কয়েকদিন লাগবে। সহিংসতা না হলে ভোটে মানুষের আগ্রহ বাড়তে পারে।

 

পশ্চিম মিরসরাই, মধ্যম মঘাদিয়া, নাজির পাড়ায় নির্বাচনী পরিবেশ দেখার সময় সঙ্গী ছিলেন ব্যাটারি রিকশা চালক ইমন আহসান। এ তরুণ ভোটার জানান, মিরসরাইয়ে এত বড় শিল্পনগরী হচ্ছে। সেখানে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলা হচ্ছে। অথচ স্থানীয় যুবকরা চাকরি পাচ্ছেন না। এমপিরা যদি প্রয়োজনে ভূমিকা না রাখেন, তাহলে ভোট দিয়ে লাভ কী?

 

উপজেলা সদর ঘুরে ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়ে গিয়েছিলাম নাজির পাড়ায়। স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের বাড়ি এ এলাকায়। তার বাড়ির গেটে ঝুলছে নৌকার প্রার্থীর ব্যানার-পোস্টার। কথা হয় স্থানীয় কৃষক আব্দুল কাদিরের সঙ্গে। তিনি জানান, গিয়াস মাঠের নেতা। সুষ্ঠু ভোট হলে তিনিই জিতবেন। অনেকে নানা কারণে মুখে নৌকার কথা বললেও ভোট গিয়াসকেই দেবেন। তবে শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা সেটা নিয়েই সংশয়।

 

গিয়াসের এলাকায় নৌকার পোস্টার-ব্যানারের ‘দাপট’ দেখে রুহেলের বাড়ির চিত্র দেখার কৌতুহল জমে। সদর থেকে বাস-ট্যাক্সিযোগে গেলাম বারৈয়ারহাটে। শান্তিরহাট থেকে রুহেলের বাড়ি পর্যন্ত পুরো এলাকায় শুধু নৌকার পোস্টার-ব্যানারের দাপট। শান বাঁধানো পুকুর, গাছ-গাছালিঘেরা অভিজাত বাড়ি। বাড়ির আঙিনায় শোভা পাচ্ছে রুহেলে বড় আকারের ছবি। বাড়ির সামনে নেতাকর্মীদের ভিড়। কথা হয় ছাত্রলীগকর্মী নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, মিরসরাইয়ের মাটি ও মানুষের নেতা মোশাররফ ভাই। স্মার্ট মিরসরাই গড়তে তার ছেলে রুহেলের বিকল্প নেই।

 

তবে নজরুলের সঙ্গে একমত নন বারৈয়ারহাট বাজারের পেয়ারা বিক্রেতা নজু মিয়া। ইছাখালীর এ বাসিন্দা জানান, গত ১৫ বছরে দেশে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু আমাদের এলাকায় কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। ঘরে যাই ভাঙা সড়ক পেরিয়ে। নতুন এমপির কাছে আমাদের প্রত্যাশা, গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নে তিনি যেন কাজ করেন। ঢাকায় বসে না থেকে এলাকার মানুষের কাছে যান।

 

বারৈয়ারহাট বাজারের পূর্ব দিকে খাগড়াছড়ি সড়ক। এ সড়ক ধরে অল্প যেতেই বাদামতলা বাজার। নির্বাচনের মাঠে কী হচ্ছে, প্রার্থী কারা, এসব বিষয় নিয়ে এ এলাকার বেশিরভাগ মানুষের তেমন মাথাব্যথা নেই। তারা দৈনন্দিন জীবন সংগ্রামে ব্যস্ত। স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষিকা রিজিয়া আক্তার জানান, আমরা সাধারণ মানুষ। রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে চাই না।

প্রধান দুই প্রার্থীর ইশতেহার :

কর্মসংস্থান সৃষ্টি, হাসপাতাল স্থাপন, ইক্যু ট্যুরিজমকে প্রাধন্য দিয়ে ২২ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল। শিল্প-কৃষি সমৃদ্ধ পরিবেশবান্ধব স্মার্ট মিরসরাই বিনির্মাণে সুযোগ দিতে মিরসরাইবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া শিল্পনগরীকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিত আবাসন এলাকা গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার।

 

অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন তার ইশতেহারে গ্রামীণ সড়কের উন্নয়নসহ মিরসরাইকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, কিশোর গ্যাং ও মাদকমুক্ত মিরসরাই গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া কর্মমুখী শিক্ষার জন্য কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ট্রমা সেন্টার স্থাপন, ঝরনায় নিরাপত্তা বাড়ানো, স্টেডিয়াম-ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ, খাল-ছড়া খননসহ ২৭ দফা ইশতেহার রয়েছে তার।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট