আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক ইসলামি দল ও কিংস পার্টি খ্যাত দলগুলোর বেশি প্রার্থী রয়েছে। সরকারি দলের আশ্বাসে নির্বাচনে বড় অংশগ্রহণ রয়েছে এসব দলগুলোর।বিশেষ করে চট্টগ্রামভিত্তিক তরিকতপন্থী ইসলামি দলগুলোও এবার সবকটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু আসন ভাগাভাগিতে শূন্য হাতে ফিরেছে কিংস পার্টিগুলো। এখন ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ ও শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে কিংস প্রার্থীরা। অনেক দলের প্রার্থীদের এখনও মাঠে দেখা যাচ্ছে না।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোটের দলগুলো অংশ নেয়নি। স্বল্প পরিচিত দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। আসন ভাগাভাগিতে দুটি আসন জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় দলটি। চট্টগ্রাম-৫ ও ৮ আসনে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ভোটের মাঠে রয়েছেন ১২২ প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আছেন ১৪ আসনে। দুটি আসন জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। ১১ আসনে আওয়ামী লীগ ও জোটপ্রার্থীদের বিপরীতে ১৬ জন শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।
ভোটে ২০ দল :
চট্টগ্রামের ১৬ আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। প্রার্থী আছেন ১২২ জন। এর মধ্যে অন্তত ১৫টি কম পরিচিত দল রয়েছে। রাজনীতিতে এই দলগুলো কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্র ছাড়া কম পরিচিত দলগুলোর ৭৫ প্রার্থী রয়েছে।
২০১২ সালে বিএনপি ছেড়ে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে নতুন দল গঠন করে আলোচনায় আসেন আবুল কালাম আজাদ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য হন এসএম আবুল কালাম আজাদ। এবার চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে নির্বাচন করছেন তিনি। এ আসনে মোট প্রার্থী ১০ জন। আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র ছাড়াও রয়েছে ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাপার প্রার্থী। হেভিওয়েট তিন প্রার্থীর দাপটে অনেকটা কোণঠাসা অন্য প্রার্থীরা। তবে বিভিন্ন স্থানে ইসলামি দল এবং কিংস পার্টি খ্যাত দুয়েকজনের পোস্টার-ব্যানার চোখে পড়লেও সরব উপস্থিতি চোখে পড়েনি।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২০টি দলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ কংগ্রেস, খেলাফত আন্দোলন, মুক্তিজোট, গণফোরাম, ন্যাপ, ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী রয়েছে বেশিরভাগ আসনে। এছাড়াও ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট, তরিকত ফেডারেশন, সুপ্রিম পার্টি, জাসদ, বিএনএফ, তৃণমূল বিএনপি, এনপিপির প্রার্থী রয়েছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন আসন ঘুরে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, চট্টগ্রামভিত্তিক ইসলামি কয়েকটি দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ভিড়ে ¤্রয়িমাণ হয়ে পড়েছে কিংস পার্টি খ্যাত দলগুলোর প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার ও প্রচার-প্রচারণা। গত বৃহস্পতিবার মিরসরাই ও সীতাকু- আসনে সরেজমিনে ভোটের মাঠ ঘুরে এই পরিবেশ দেখা যায়। এছাড়াও নগরীর চারটি আসন ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়।
নির্বাচনে ইসলামি দল :
ধর্মভিত্তিক ১১টি দল এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামভিত্তিক চারটি বড় ইসলামি দল রয়েছে। এর মাঝে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে লড়ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। ১৪ দলের শরিক দল হিসেবে গত দুই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও এবার নৌকা পাননি তিনি। নিজ দলের ‘ফুলের মালা’ প্রতীকে ভোট করছেন তিনি। তার ভাতিজা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভা-ারী বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি নামে নতুন দল গঠন করেন। ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেয়ে আলোচনায় আসেন সাইফুদ্দিন। তিনিও লড়ছেন নিজ দলের ‘একতারা’ প্রতীকে। দুই ভা-ারীই আওয়ামী লীগের অনুকম্পা নিয়ে নির্বাচন করার চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন।
সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী বলেন, আমার দল ১৪ দলের শরিক। দেশ ও সরকারের জন্য আমাদের অবদান কম নেই। এবারের নির্বাচনে আমাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। আমি চারবার এমপি ছিলাম। নৌকা প্রতীক নিয়ে জিতেছি। অবমূল্যায়নের পরও আমি মাঠে থাকব।
এছাড়াও মাঠে রয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক ইসলামি দল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। দুটি দলই চট্টগ্রামভিত্তিক। দল দুটির ভালো জনসমর্থন রয়েছে। ভোটের আগে এই দুই দলের প্রধানেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এরপর ভোটে আসার ঘোষণা দেন।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এমএ মতিন (মোমবাতি)। দলটির মহাসচিব স উ ম সামাদ করছেন চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসন থেকে। মতিনের জন্মভূমি ফটিকছড়ি। কিন্তু তিনি নির্বাচন করছেন পটিয়া থেকে।
এমএ মতিন পূর্বকোণকে বলেন, চারটি আসনে আমরা ভালো অবস্থানে আছি। প্রচার-প্রচারণায় মানুষ আমাদের সমর্থন দিচ্ছেন। অন্য আসনগুলোর প্রার্থীরা মাঠে আছেন বলে দাবি করেন তিনি।
নির্বাচনের আগে তরিকত ফেডারেশন, সুপ্রিম পার্টি, ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), তৃণমূল বিএনপির মতো কিংস পার্টি খ্যাত দলগুলো নিয়ে বেশ হইচই ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুটি ইসলামি দলের প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে আমরা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ চেয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সেই আশ্বাস দিয়েছিলেন। নির্বাচনের পরিবেশ ও প্রার্থীদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তবে অসন্তোষ ও ক্ষোভের কথা বলেছেন একটি ইসলামি দলের প্রধান। তিনি বলেন, ১৪ দলের বৈঠকে দলের প্রধানদের আসনগুলো ছাড় দেওয়ার কথা ছিল। আগের মতো নৌকা নিয়ে প্রধানেরা নির্বাচন করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৪ দলের মধ্যে বৈষম্য করা হয়েছে। কেউ কেউ ছাড় পেলেও বাকিরা পায়নি।
একাধিক দলের কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, সরকারের সঙ্গে আলাপ-সমঝোতার ভিত্তিতে নয়, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাসে ভোটে অংশগ্রহণ করছি। পোস্টার-ব্যানার সাঁটানোর বিষয়ে তারা বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর ধীরে ধীরে মাঠে নামছেন প্রার্থীরা।
পূর্বকোণ/পিআর