
বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজ দলীয় শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মুখোমুখি হচ্ছেন। প্রতীক পাওয়ার পর দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে সমানতালে জোরালো প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও।
চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ভোটের মাঠে রয়েছেন ১২০ জন প্রার্থী। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আছেন ১৪টি আসনে। দুটি আসন জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। ১১টি আসনে আওয়ামী লীগ ও জোটপ্রার্থীদের বিপরীতে ১৬ জন শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও জোটপ্রার্থীরা।
গত সোমবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতীক পাওয়ার পরই ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। শুরু করেছেন গণসংযোগ। সাঁটানো হচ্ছে পোস্টার-ব্যানার ও লিফলেট।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে প্রচার-প্রচারণার প্রথম দিনেই আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী (ঈগল) ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এর রেশ একাধিক স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
একই দিনে সন্দ্বীপের সারিকাইত এলাকায় নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরীর (ঈগল) সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। ডা. জামালের পক্ষে সাবেক মেয়র জাফর উল্লাহ টিটু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমনসহ দলের শীর্ষ নেতাদের একটি অংশ রয়েছে।
১৬ আসনের মধ্যে নিজ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে ঝামেলামুক্ত রয়েছেন পাঁচ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা। বাকি ১১টি আসনেই টেনশনে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও জোটপ্রার্থীরা।
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে নৌকার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রচার শুরু করেছেন তিনি। নৌকা নিয়ে মাঠে সরব রয়েছেন মাহবুব উর রহমান রুহেল। রুহেল আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি ১৪ দলীয় জোট নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন। আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারীকে ছাড় দেওয়ার গুঞ্জন ছিল। জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব (তরমুজ) ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান (ঈগল)। আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী ছাড়াও আওয়ামী লীগঘেঁষা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির শাহাজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভা-ারীও আছেন এ আসনে।
চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী, পাহাড়তলী, হালিশহর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু (নৌকা) দুই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হচ্ছেন। সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম (ফুলকপি) ও নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদকে (কেটলি) নিয়ে টেনশনে আছেন নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু।
চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম এ লতিফ (নৌকা) ও সাবেক কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনকে (কেটলি) ঘিরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে ভোটের মাঠ। নগর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ দুই প্রার্থীকে ঘিরে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর (নৌকা) সঙ্গে মাঠে রয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী (ট্রাক)।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী (নৌকা) ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেবের (ঈগল) মধ্যেই বিষোদগার ও উত্তেজনা ভোটের আগে থেকে চলে আসছে।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান (ঈগল) ও আ. লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন (ট্রাক)। হেহিওয়েট দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়ে টেনশনে রয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী (নৌকা)।
অস্বস্তিতে জোট প্রার্থীরাও :
নয় আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ছাড়াও ১৪-দলীয় জোটের প্রধান শরিক জাপা প্রার্থীরাও অস্বস্তিতে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে।
চট্টগ্রাম-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম। আসন ভাগাভাগিতে আসনটি ছাড় দেয় জাতীয় পার্টিকে। সালামের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয় আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নেই এই আসনে। এখানে জাপার কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী (কেটলি) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বায়েজিদ আংশিক) আসনটি জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। জোটের প্রার্থী হচ্ছেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয় আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীক না থাকলেও স্বস্তিতে নেই জাপা প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম (কেটলি) ও চসিকের সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরী (ফুলকপি)।
পূর্বকোণ/পিআর