আজ মেসিদের বিশ্বজয়ের এক বছর! গত এক বছর আমার মতো অসংখ্য আর্জেন্টাইন সমর্থকদের সময়টা স্বপ্নের মতো কেটেছে। যদিও এরকম একটা স্বপ্ন সত্যি হওয়া রাতের আগে সহস্র রাত দুঃস্বপ্নের কেটেছিল। একটু পেছনে ফেরা যাক।
সালটা ২০১৪, মারাকানা স্টেডিয়াম। কাণায় কাণায় পরিপূর্ণ। সারাবিশ্বের কয়েকশো কোটি জোড়া চোখ রঙিন মনিটরে। ছোটখাটো মানুষটার অমরত্বের সাক্ষী হতে। কিন্তু বিধাতা অন্য পরিকল্পনা ভেবে রেখেছিলেন। ১১৩ মিনিটে মারিও গোর্টজে’র পা ফাঁকি দিয়েছিল রোমেরোর হাতকে। সেই সাথে সমাধি হয়েছিল তিলে তিলে বুনতে থাকা রঙিন স্বপ্নের আর দীর্ঘ হয়েছিল বুকের ভেতর বছরের পর বছর ধরে জমানো দীর্ঘশ্বাসের বেদনার নীল ছোট কবিতা। বিশ্বকাপকে হাত ছোঁয়া দূরত্বে রেখে মেসির টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কারও ফিকে মনে হচ্ছিল। ব্যক্তিগত অর্জনকে একপাশে রেখে দেশের হয়ে শিরোপা জেতা যার আরাধ্য ছিল তাকে সেরার অলংকারে বিশ্বকাপ তার রঙ হারিয়েছিল সেটা কায়মনোবাক্যে অনেক ফুটবল বোদ্ধাই স্বীকার করেছিলেন।
ফের অপেক্ষার পালা, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের কোপার ফাইনাল আরও দুটি নীরব আক্ষেপ দিয়ে অপেক্ষার পালা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছিল। ২০১৬ সালে কোপার ফাইনালে চিলির কাছে হারের পর ব্যর্থতা কাঁধে নিয়ে অবসরের পথ বেছে নিয়েছিলেন প্রজন্মের অন্যতম সেরা এই তারকা। কোচিং স্টাফ, ফুটবল ফেডারেশন আর অগণিত ভক্তদের অনুরোধে ফের ফিরলেন। ফিরলেন একটা প্রজন্মের জন্য যারা ম্যারাডোনার হাতে শেষবারের মতো বিশ্বকাপ জিততে দেখেছিলেন। ফিরলেন একটা প্রজন্মের জন্য যারা জন্মের পর থেকে জিততে দেখেনি কোন শিরোপা। ফিরলেন একটা প্রজন্মের জন্য যারা শৈশবে রিকুয়েলমে,আয়ালা, ক্রেসপো, ক্যাম্বিয়াসো, বাতিস্তুতাদের দেখে অন্ধভাবে ভালোবেসে ছিলেন আকাশি সাদার দলটাকে, ফিরলেন একটা প্রজন্মের জন্য যারা তার শ্রেষ্ঠত্বকে বৈশ্বিক শিরোপার মাপকাঠিতে ওজন করেন।
২০১৮ বিশ্বকাপের দলটার মধ্যে আশা জাগানিয়া কোন বিষয় না থাকলেও আবেগ ভর্তি আমার মতো অসংখ্য মেসি ভক্ত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত শেষটা মানতে মনে নিচ্ছিল না। খুড়িয়ে খুড়িয়ে প্রথম পর্বে বৈতরণী পার হলেও বিশ্বকাপ জয়ের কোন সম্ভাবনাই তৈরি করতে পারে নি। সমর্থকদের জন্য হতাশার ষোলকলা পূর্ণ করে ফ্রান্সের কাছে বাজেভাবে হেরে বিশ্বকাপ পর্ব ইতি টানে। ২০১৯ কোপাতেও যথারীতি হতাশার প্রতিচ্ছবি। তৃতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় আলবিসেলেস্তেদের। অবশ্য এই কোপায় আর্জেন্টাইনদের মানসিকতায় এবং খেলার ধরনে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছিল। ২০১৮ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর দায়িত্ব দেয়া হয় একসময়ের মেসির জাতীয় দলের সতীর্থ লিওনেল স্কালোনিকে। সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে দায়িত্ব দেয়া হয় আর্জেন্টিনার সোনালী প্রজন্মের একজন রবার্তো আয়ালাকে। দায়িত্ব নিয়েই অভিজ্ঞতার সাথে তারুণ্যের মিশেলে দল গড়ায় মনোযোগ দেন। মেসি, মারিয়া, ওতামেন্দিদের সাথে দি পল, এনজো কিংবা মন্টিয়েলদের রসায়নটা জমাট বাঁধতে শুরু করল। এর মধ্যে দরজার কড়া নাড়ছিল ব্রাাজিলে অনুষ্ঠিতব্য ২০২১ এর কোপা। কোভিড ঝুঁকি থাকায় এ কোপা দর্শকবিহীন ছিল। গ্রুপ পর্ব সহজে পার করার পর ইকুয়েডর,কলম্বিয়া, চিলি আর পেরুকে পেরিয়ে ফাইনালে পৌঁছে টিম আর্জেন্টিনা। সামনে কেবল আর্জেন্টিনার আজন্ম প্রতিপক্ষ ব্রাজিল। সুপারক্ল্যাসিকোর মর্যাদা পাওয়া ম্যাচটা অনেকগুলো কারণে অন্যরকম উত্তাপ ছড়াচ্ছিল। প্লেয়ারদের নার্ভের সর্বোচ্চ পরীক্ষার এ ম্যাচের আগে এই দুই দলের ভক্তরা নানান গবেষণা আর ট্যাকটিকসে নিজেদের দলকে এগিয়ে রাখতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তাপমাত্রা অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। অবশেষে এল প্রতীক্ষার ফাইনাল। দর্শকবিহীন হওয়ার পরও এ ম্যাচের উত্তাপ কোন অংশে কম ছিল না। ম্যাচের সিগনেচার মোমেন্ট বলতে গেলে একটাই। দি পলের লং বলে ক্যাসিমিরো পরাস্ত হওয়া, সেই সাথে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা ডি মারিয়ার ক্ল্যাসিক্যাল চিপ। ব্যাস, এই টুকুতেই নির্ধারণ হয়ে গেল মেসির জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম শিরোপা। মাঝখানের সময়টাতে দুই দলই চেষ্টা করেছিল ব্যবধান বাড়াতে কমাতে। উত্তেজনার পারদও বেড়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে মেসি তার আরাধ্য প্রথম শিরোপার স্পর্শ পায়।
এ শিরোপা দিয়ে অনেক বিতর্কের দাড়ি টেনেছিলেন মেসি। সেই সাথে বিশ্বকাপের জন্য প্রত্যাশার পারদটাও বেড়ে যাচ্ছিল আলবিসেলেস্তে সমর্থকদের। মাঝখানের সময়টাতে ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে ফিনালসিমায় ৩-০ গোলে হারানো মেসির সাফল্যের মুকুটে আরও একটি পালক। বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই মেসিদেরকে অন্যতম ফেভারিট মানা হচ্ছিল। তবে লো সেলসোর অনুপস্থিতি কিছুটা হলেও অভাববোধ করছিল সবাই। শুরুর ম্যাচটা সৌদি আরবের সাথে। সবাই ধরে নিয়েছিল হেসে খেলে বেশ ভালো ব্যবধানে জিতবে আর্জেন্টিনা। এগিয়ে থেকেও ২-১ গোলে হেরে সব সমীকরণ উলটপালট হয়ে যায়। চারপাশ থেকে সমালোচনার তীর বিঁধতে থাকে খেলোয়াড় এবং সমর্থকদের উপর। ফেভারিট হিসেবে বিশ্বকাপে আসা দলটার পরের রাউন্ডে যাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। প্রতিটা মুহূর্ত অদ্ভুত অনিশ্চয়তা আর অজানা শংকায় যাচ্ছে-তাই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। পাহাড়সম স্নায়বিক চাপ নিয়ে পরের ম্যাচ আর্জেন্টিনা খেলতে নেমেছিল মেক্সিকোর সাথে। সমানতালে লড়তে থাকা মেক্সিকোর সাথে ডেডলক ভাঙেন স্বয়ং মেসি। তার দূরপাল্লার শট জাল কাঁপিয়ে উন্মাদনায় মাতায় আর্জেন্টিনা শিবিরকে। সেই সাথে পিটার ড্রাউরির ভরাট কণ্ঠের মহাকাব্যিক কমেন্ট্রি আনন্দের মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। ২-০ গোলে ম্যাচ জয়ের পর সমর্থকদের বুকের পাথর অনেকটাই নেমে গিয়েছিল। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের সাথে ২-০ গোলের জয়ে দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত হয়। দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ম্যাচে মেসির নৈপুণ্যে এগিয়ে গেলেও এক গোল শোধ করে সকারুরা। কষ্টার্জিত ২-১ গোলের জয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত হয় মেসিদের। কোয়ার্টারে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল ট্যাকেলের জন্য বিখ্যাত ডাচরা। এ ম্যাচে স্কালোনির ফরমেশন ছিল ৫-৩-২। মূলত কাউন্টার এ্যাটাক থেকে গোল আদায় করা ছিল মূল উদ্দেশ্য। মেসি মলিনার রসায়নে মেসির অসম্ভব এঙ্গেল থেকে মলিনার কাছে পাস ফুটবলপ্রেমীদের কাছে অনেক বছর ধরে প্রিয় দৃশ্য হয়ে থাকবে।
ম্যাচ ২-২ ব্যবধানে শেষ হয়ে ভাগ্য গড়ায় টাইব্রেকারে। মার্টিনেজ নৈপুণ্যে টাইব্রেকারে জিতে সেমির পথ ধরে মেসি বাহিনী। সেমি ফাইনালে আর্জেন্টিনার জন্য অপেক্ষায় ছিল ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়া। এ ম্যাচে স্কালোনির জন্য মূল চ্যালেঞ্জ ছিল মধ্যমাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখা। মদরিচ-কোভাচিচ-ব্রোজোভিচ ট্রায়ো আর্জেন্টিনার জন্য হুমকি হতে পারে এটা স্কালোনি ভেবে রেখেছিলেন। সেই হিসেবে ৪-৪-২ফরমেশনে ফেরত যান স্কালোনি। মেসি আলভারেজের নৈপুণ্যে ৩-০ গোলের জয়ে বিশ্বজয়ের পথে এগিয়ে যায় মেসিরা। এরপর পুরো বিশ্বের প্রতীক্ষা শুরু হয় ১৮ ডিসেম্বরের জন্য। ২০১৮ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের অপেক্ষা টানা ২য় বিশ্বকাপের আর এমবাপ্পের সামনে কিংবদন্তি হওয়ার হাতছানি। আর্জেন্টিনার টিমটা পোড় খাওয়া। হৃদয় ভাঙন যাদের নিত্য দিনের। এ বিশ্বকাপের প্রতিটা ম্যাচেই ভক্তদের হৃদস্পন্দন বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছিল অনেকবারই। ফাইনাল ম্যাচের আগেও যথারীতি কাঁপুনে ধরা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তার ওপর ডিসেম্বরের শীত। পুরো বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তের প্রার্থনাতে একটাই চাওয়া ছিল। মেসির হাতে বিশ্বকাপ। সদ্য বল নিয়ে মাঠে নামা কিশোর, যে মেসির জার্সি গায়ে দিয়ে প্রতিবার মাঠে নামার আগে নিজের ভিতর মেসিকে অনুভব করে। বয়সের মধ্যগগনে থাকা যুবক। যে জীবনের নানামুখী জটিল সমীকরণ আর চাহিদার ভিড়ে মনের গভীরে কোন এক কোণে সুপ্ত ইচ্ছে পুষে রেখেছে মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখবে বলে। এরকম নানা রকমের ভক্তের অভিন্ন একটাই চাওয়া। আলবিসেলেস্তেদের হাতে বিশ্বকাপ! ১৮ ডিসেম্বর রাত…হাতুড়ি পেটাতে থাকা বুক দিয়ে টিভি সেটের সামনে দর্শকদের উৎকণ্ঠা। ফলাফল দুটো হতে পারে এটা অনুমিত ছিল। চ্যাম্পিয়ন বা রানার্স আপ। ফ্রান্সের বিশ্বসেরা ফরওয়ার্ড লাইনের সাথে আর্জেন্টিনার কার্যকর, সৃষ্টিশীল মিডফিল্ড। এ ম্যাচে স্কালোনির তুরুপের তাস ছিলেন ডি মারিয়া। প্রায় পুরো টুর্নামেন্টে ডানদিকে খেললেও ফাইনাল ম্যাচে উইঙ্গার হিসেবে তাকে বাঁ প্রান্ত দিয়ে খেলান। ডি মারিয়ার সৃষ্টিশীলতায় পেনাল্টি আদায় করে নেয় আর্জেন্টিনা। ঠান্ডা মাথায় মেসি এগিয়ে নেন আর্জেন্টিনাকে। আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোল ছিল টিমওয়ার্ক আর সৃষ্টিশীলতার এক অনন্য নিদর্শন। ম্যাক অ্যালিস্টার,আলভারেজ, মেসি, মারিয়াদের সম্মিলিত আক্রমণে জন্ম নিয়েছিল বিশ্বকাপ ফাইনাল ইতিহাসের অন্যতম সেরা একটি গোল। তখনি অনেকে ধরে নিয়েছিলেন শিরোপা যাবে মেসিদের ঘরেই। কিন্তু এমবাপ্পে ম্যাজিকে দারুনভাবে ফিরে আসে ফ্রান্স। এরপর যতোই সময় গড়িয়েছে ততোই ম্যাচের রঙ মুহূর্তে মুহূর্তে পাল্টেছে। সেই সাথে দর্শকদের বুকের ধুুকপুকানি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। মেসি আরও একবার এগিয়ে নিলেও পেনাল্টি পেয়ে সমতায় ফেরে ফ্রান্স। শেষ মুহূর্তে মার্টিনেজের ওয়ান টু ওয়ান সিচুয়েশনে অতিমানবীয় সেইভে দম আটকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যথারীতি ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। দর্শকরা হাত জড় করে প্রার্থনা করছিলেন এবার যেন অন্তত ভগ্ন হৃদয় নিয়ে শূন্য হাতে ফিরতে না হয়। কত বছরের প্রতীক্ষা, কত নির্ঘুম রাত, কতো অশ্রু শুকিয়ে যাওয়া,কতো দীর্ঘশ্বাস, কতো টিটকারি, কতো অপমান সব যেন এক নিমিষে চোখের সামনে ভাসছিল।
মেসির কী বিশ্বকাপ স্বপ্ন পূরণ হবে নাকি আক্ষেপ নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করবেন! এমন সমীকরণে প্রথম টাইব্রেকার নিতে আসেন এমবাপ্পে। তার জোরালো শটে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। এরপর মেসির পালা। ঠান্ডা মাথায় বল জালে জড়াতে এবার আর ভুল করেন নি মেসি। মার্টিনেজের সেইভে ম্যাচে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। তিন টাইব্রেকার শেষে স্কোরলাইন ৩-১। চতুর্থ টাইব্রেকে ফ্রান্স ব্যবধান কমায়। আর্জেন্টিনার হয়ে পিনপতন নীরবতার পরিস্থিতিতে কিক নিতে আসেন গনজালো মন্টিয়েল। বল জালে জড়ালেই প্রতীক্ষার প্রহর আর অজস্র বিতর্কের শেষ হবে। ব্যর্থ হলে ভগ্ন হৃদয় আরও দুমড়ে মুচড়ে একাকার হবে পুরো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভক্ত সমর্থকদের। ধীরপায়ে এগিয়ে এলেন মন্টিয়েল,শত বছর পরও জীবন্ত হওয়া দৃশ্যপট রচনা করতে! বল স্পটে, শট নেয়ার আগে একটা দীর্ঘশ্বাসে বুকের ভেতর জমে থাকা সব চাপ যেন এক ঝটকায় বের করে নিজেকে নির্ভার করলেন। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকা মেসি উপরে তাকিয়ে কী যেন বিড়বিড় করলেন। শট নিলেন মন্টিয়েল, হুগো লরিসের ডানপাশের কর্ণার দিয়ে বল জড়ালো জালে! শেষ, মেসির শ্রেষ্ঠত্বের বিতর্ক, সর্বকালের সেরার বিতর্ক, জাতীয় দলের জার্সিতে অনুজ্জ্বল বিতর্ক, নেতৃত্বের বিতর্ক, শিরোপা খরার বিতর্ক, এরকম শত শত বিতর্ক যেন এই জায়গাটাতে এসে থেমে গেল।
সবচেয়ে দেখার মতো বিষয়টা ছিল, আলবিসেলেস্তেদের উদযাপন। গোল করেই জার্সি খুলে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মন্টিয়েল,মেসি দুই হাত উঁচিয়ে জায়গায় বসে পড়লেন, মনে হচ্ছিল মেসি জানতেন শেষটা এভাবেই হবে! খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে সারা বিশ্বের ভক্ত সমর্থক সবাই যেন চোখের জলে বরণ করেছিল আর্জেন্টিনার চির আরাধ্য শিরোপাকে। এই মুহূর্ত কোন শব্দবিশারদের পক্ষে বর্ণনা করা সম্ভব নয়,শুধুই অনুভবের। আমার প্রজন্মের সমর্থকদের আবেগটা একটু আলাদা। মন খারাপ করা, নীরবে চোখের জল ফেলা রাতগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠছিল ১৮ তারিখের রাতে। এই রাতেও কান্না নেমেছিল, তবে এই কান্নার জন্য প্রতীক্ষার প্রহর আর গ্লানি টানতে হয়েছিল বছরের পর বছর ধরে। ক্লাবের জার্সিতে অতিমানবীয় মানুষটা কেন আকাশী সাদায় সাধারণ সেটা নিয়ে কম বিতর্ক হয় নি।
ছোট ছোট এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর এক রাতে পেয়েছিল বিশ্ব। বাংলাদেশের দর্শকদের উন্মাদনা দেখেছিল পুরো বিশ্ব,আর্জেন্টিনা জেনেছিল বিশ্ব মানচিত্রের ছোট একটি দেশে আকাশী সাদাদের জন্য অকুণ্ঠ সমর্থন আর হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা। এক বছর পরেও ফাইনাল ম্যাচের ভিডিও চোখের সামনে এলে একই উত্তেজনা কাজ করে,নিজের অজান্তে চোখের কোণ ভিজে ওঠে। পিটার ড্রুরি মহাকাব্যিক ধারাভাষ্যে এখনো গায়ের লোম খাড়া হয়ে ম্যাচের মুহূর্ত ফিরে আসে। পিটার ড্রুরির দুটো লাইন দিয়ে শেষ করি- ‘The little boy from Rosario,Santa Fe,has just pitched up in heaven.He climbs into a galaxy of his own.He has his crowning moment and of course he is not alone.’
পূর্বকোণ/এসি