চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

মারিশ্যা বাজার আক্রমণে ১৭ মিজো সৈন্য, পাহাড়ি রাজাকার নিহত হয়

ইসলাম জিগার, রাঙ্গুনিয়া

১০ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড মুরাদনগর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আবু বকর (৭২)। তিনি মৌলভী আবুল খায়েরের ছেলে। ১৯৭১ সালে রাঙ্গুনিয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ তাকে উজ্জীবিত করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রথমদিন রাঙ্গুনিয়াতে প্রবেশ করে থানার পাশের ডা. বিনয় ভূষণের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এরপর পোস্ট অফিস সংলগ্ন থানার তৎকালীন সেকেন্ড অফিসার মজিদের বাসায় বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখে ওই ঘরেও আগুন ধরিয়ে দেয়। নিজ চোখে এমন বর্বরতা দেখে সিদ্ধান্ত নেন যুদ্ধে যাবার। বাবা-মা’র অগোচরে কাপড়গুলো থলে ভর্তি করে রোয়াজারহাটের একটি দোকানে গুজিয়ে রাখেন। আওয়ামী লীগ নেতা খলিলুর রহমান চৌধুরী তাকে পাঠিয়ে দেন পদুয়ার রাজারহাট ফরেস্ট অফিসে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নজির আহমদ চেয়ারম্যানের কাছে। মে মাসের শেষের দিকে নজির আহমদ চেয়ারম্যানের সাহায্যে ত্রিশ জনের একটি দলের সাথে জারুলছড়ি ক্যাম্পের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করেন তারা। ভারতের দেমাগ্রী আর্মি ক্যাম্পের ট্রেনিং সেন্টারে বিমান বাহিনীর কমান্ডার নুরুল হকের নেতৃত্বে ২১ দিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন আবু বকর। সেখান থেকে কমান্ডার নুরুল হকের নেতৃত্বেই পুনকা আর্মি ক্যাম্প হয়ে দুইদিন দুইরাত পায়ে হেঁটে বাংলাদেশের রাঙামাটির বাঘাইছড়ির আমতলি আর্মি ক্যাম্পে ফিরে আসেন।

 

যুদ্ধদিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমতলি আর্মি ক্যাম্প থেকে আমরা সাম্পান যোগে চলে যাই দুধছড়ি বাজার সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্যাম্পে। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল ঢাকাইয়া একটি মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ। তখন জুলাই মাস, একদিন কমান্ডার নুরুল হকের নেতৃত্বেই দুধছড়ি বাজার থেকে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে কাগজীতলা নামক স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে প্রথম সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। সেদিন পাকিস্তানি বাহিনী মাইনী বাজার থেকে স্পিডবোটে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প আক্রমণে যাচ্ছিল। ফেরার পথেই তাদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বকরসহ ত্রিশজনের মুক্তিযোদ্ধা দলটি। মুক্তিযোদ্ধারা ছিল ডাঙায় আর পাক বাহিনী ছিলো স্পিডবোটে। তাদের সাথে চাকমা রাজাকারেরাও ছিল। উভয় পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ গোলাগুলি হবার পর পাকি সৈন্যরা পালিয়ে যায়। সেদিন পাক বাহিনীর ছোড়া গুলির অনেকগুলোই গিয়েছিল আবু বকরের পাশ ঘেঁষেই। একটু এদিক ওদিক হলেই নিশ্চিত মৃত্যু হতে পারতো তার।

 

মুক্তিযোদ্ধা আবু বকর জানান, মারিশ্যা বাজারে মিজো বিদ্রোহী সেনা ও পাহাড়ি চাকমা সন্ত্রাসী রাজাকার গ্রুপ অবস্থানে ছিলো। এক পর্যায়ে ভারতীয় মিত্র বাহিনী আসলে আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তাঁরা। মিত্র বাহিনীর সাথে সেই অপারেশনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্করসহ তাদের ত্রিশজনের মুক্তিযোদ্ধা দলটি অংশগ্রহণ করে। যৌথ আক্রমণের সেই যুদ্ধে একসাথে ১৭-১৮ জন মিজো ও চাকমা রাজাকারের সকলেই মারা যায় বলে জানান তিনি। পরে মারিশ্যা বাজার কমান্ডার নুরুল হকের দখলে দিয়ে মিত্র বাহিনী চলে যান। এরপর কিছুদিন ওখানে অবস্থান করে মায়ানি বাজার ক্যাম্পে চলে আসেন তারা। দেশ স্বাধীন হলে সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাঙামাটি হয়ে রাঙ্গুনিয়ায় চলে আসেন আবু বকর। এরপর রাঙ্গুনিয়ার তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা প্রধান নুরুল আলমের সাথে কমান্ডার নুরুল হকসহ যোগ দেন। পরে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে নুরুল আলমের সাথে রাঙ্গুনিয়ার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ঢাকায় গিয়ে অস্ত্র (এসএলআর) জমা দেন তিনি।

 

দেশ স্বাধীন হবার পর পুনরায় রাঙ্গুনিয়া কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন এবং ডিগ্রি পাস করে ১৯৭৪ সালে স্বাস্থ্য বিভাগের চাকরিতে যোগ দেন আবু বকর। ২৬ বছর চাকরি শেষে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট