আমাদের গলার সামনের দিকে অবস্থিত থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ হলো হরমোন তৈরি করা। মানুষের বৃদ্ধি, বিকাশ, তাপমাত্রা, নাড়ির গতি, শারীরবৃত্তিক আর বিপাকীয় নানা ক্রিয়া-প্রক্রিয়া সাধনের জন্য এই হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থাইরয়েড গ্রন্থির একটি রোগ হলো গলগণ্ড বা ঘ্যাগ। যার ফলে থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে গিয়ে গলায় ফোলাভাব দেখা যায়।
কারণ:
১) খাদ্য ও খাবার পানিতে আয়োডিনের অভাব।
২) অটোইম্মিউন ডিজিজ (হাশিমোটোস থাইরয়েডাইটিস)।
৩) গ্রেভস ডিজিজ
৪) থাইরয়েড নডিউল, টক্সিক থাইরয়েড নডিউল।
৫) থাইরয়েড ক্যান্সার।
৬) বয়ঃসন্ধিকাল এবং গর্ভাবস্থার মতো প্রাকৃতিক স্বাভাবিক অবস্থায়ও থাইরয়েডের আকার সামান্য বেড়ে যেতে পারে।
৭) প্রদাহজনিত কারণ।
৮) নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ গ্রহণ (লিথিয়াম, এমায়োডেরন ইত্যাদি )
৯) খাবারের কিছু কিছু উপাদান থাইরয়েড হরমোন তৈরি বাধাগ্রস্ত করে এবং এর ফলে গলগণ্ড হতে পারে। এর মধ্যে কিছু কিছু সবজি যেমন : বাঁধাকপি, ফুলকপি, শালগম, ব্রকোলি, ব্রাসেলস স্প্রাউটস, কেল, কলার্ড গ্রিনস, বোক চয় এবং সয়া-সমৃদ্ধ খাবার যেমন : সয়া দুধ, সয়া সস, তোফু অন্যতম।
তবে এগুলো পুষ্টিকর খাবার এবং স্বাভাবিক পরিমাণে এমনকি প্রতিদিন খেলেও ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তা ছাড়া ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেলে এর ক্ষতিকর উপাদান অনেক কমে যায়। তাই গলগণ্ড হলে এগুলো খাওয়া একেবারে বাদ দেওয়া বিজ্ঞানসম্মত নয়।
ঝুঁকিতে যারা:
১) যাঁদের বয়স ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে।
২) পরিবারে কারো হয়ে থাকলে তাঁদের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
৩) সমুদ্র থেকে দূরবর্তী এলাকায় যাঁদের বসবাস। বিশেষ করে যেখানে খাবার ও পানিতে আয়োডিনের পরিমাণ কম।
৪) নারীরা বেশি আক্রান্ত হন। প্রেগন্যান্সি, মেনোপজ অবস্থায় বেশি দেখা যায়।
৫) অন্য কোনো রোগের কারণে আগে মাথা বা গলায় রেডিয়েশন থেরাপি নিয়েছেন এমন ব্যক্তি।
লক্ষণ:
১) গলায় ফোলা বা চাকাভাব (সাধারণত ব্যথাহীন)
২) খুব বড় হলে খাবার গিলতে বা শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া
৩) খুসখুসে কাশি
৪) মাথার ওপরে হাত বাড়ালে মাথা ঘোরা
৫) কণ্ঠে কর্কশতা বা স্বরভঙ্গ
চিকিৎসা: গলগণ্ডের আকার, অবস্থান, উপসর্গ এবং কারণের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। ক্যান্সার না হয়ে থাকলে এবং হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে যেহেতু ছোট গলগণ্ড লক্ষণীয় নয় এবং সমস্যা সৃষ্টি করে না, তাঁদের সাধারণত কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, তবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ফলোআপ করা প্রয়োজন হয়।
প্রয়োজনে সার্জারি করতে পারেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। গলগণ্ড হয়েছে বা হচ্ছে মনে হলেও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। আমাদের দেশের অনেকেই এই ব্যাপারটাতে বেশ অনীহা প্রকাশ করেন এবং এর জন্য রোগীকে ও তাঁর পরিবারকে শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট ভোগান্তি পোহাতে হয়।
পরামর্শ দিয়েছেন: ডা. আলমগীর মো. সোয়েব, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (ইএনটি), নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ