চট্টগ্রাম বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

আন্তর্জাতিক নারী উদ্যেক্তা দিবস আজ

নারী উদ্যোক্তাদের সফলতার গল্প

মরিয়ম জাহান মুন্নী

১৯ নভেম্বর, ২০২৩ | ৫:৩৩ অপরাহ্ণ

পরিবার পাশে থাকলে সবকিছুই জয় করা সম্ভব নারীদের। তাইতো চাকরির পিছনে না ছুটে পড়াশোনা আর স্বামী সন্তানসহ সংসার সামলানোর পাশাপাশি ঘরে বসেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন অনেক নারী। কেউ প্রয়োজনে আবার কেউ শখ করে বেছে নিয়েছেন উদ্যোক্তা পেশা। তবে অধিকাংশ নারী তার ভালোলাগার কাজগুলো ভালোবেসে নিজেদের পরিচয় তৈরিতে মেতে উঠেছে। নারী উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে দেশি ঐতিহ্যের প্রকাশ বৃদ্ধি পেয়েছে। হারিয়ে যেতে বসা দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহককে নারীরা দিয়েছে ভিন্ন পরিচয়।

 

আজ আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা দিবস। প্রতিবছর ১৯ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা দিবস। বিশ্বের নারী উদ্যোক্তাদের সম্মান জানাতে ও নতুন উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করতে মূলত দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে কথা হয় এমনই তিন নারী উদ্যোক্তার সাথে। যারা ঘরে বসেই পড়াশোনা আর সংসার সামলানোর পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমকে অবলম্বন করে হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থী নুসরাত সুলতানা মীম কাজ করেন মাটির তৈরি বিভিন্ন পণ্য নিয়ে। গৃহিণী জান্নাতুল ফেরদৌস জেনী কাজ করেন হ্যান্ডপেইন্ট, বাটিক পণ্য নিয়ে এবং গৃহিণী ফারজানা ইয়াছমিন জুলি কাজ করেন ব্লক বাটিক নিয়ে। তাদের সাথে আলাপ করে জানা যায় তাদের উদ্যোক্তা হয়ে উঠার পিছনের নানান গল্প। নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়ে মালিক আলিজা বিডি ও স্বদেশী পণ্যের ইকর্মাস উদ্যোক্তা সানজিদা আফরোজ বলেন, একজন নারীকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে হলে কারিগরি দক্ষতার বিকল্প নেই। তাদের জেনে,বুঝে, শিখে যে কাজটা ভালো পারে সেই কাজ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত। নিজের সৃজনশীলতা ও ক্রিয়েটিভির মাধ্যমে মার্কেটে নিজেদের পণ্যগুলো ব্র্যান্ড ভ্যালু ক্রিয়েট করতে হবে।

 

একটা শ্রেণি আছে দেশীয় পণ্য ব্যবহার করে। তাদের টার্গেট করে তাদের পছন্দের কথা চিন্তা করে নিজেদের পণ্যে নতুনত্ব আনতে হবে। এখন ডিজিটাল মার্কেটের অনেক চাহিদা। তাই উদ্যোক্তাদের আপটেড হতে হবে। কারিগরি দক্ষতার পাশাপাশি নিজেদের উদ্যোগগুলো ডিজিটালি সবার কাছে পৌঁছানোর জন্য কাজ করতে হবে।

 

 

ইউনিক-আকর্ষণীয় দেশীয়
পণ্যের কাজের ইচ্ছে
থেকেই পথচলা মিমের

 

ইউনিক-আকর্ষণীয়-দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে থেকেই পথচলার শুরু নগরীর বহদ্দারহাটের মেয়ে নুসরাত সুলতানা মিমের। করোনার দীর্ঘ বিরতিতে ঘরে যখন বোরিং হয়ে যাচ্ছেন তখন সময় কাটাতেই বন্ধু তৌফিকসহ এ পরিকল্পনা করেন মহসিন কলেজের রসায়ন বিভাগ সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের এ শিক্ষার্থী।

মিম জানান, ঘরে বসে ব্যতিক্রম কিছু করার ইচ্ছে থেকে গাছ আর মাটির টব নিয়ে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দুই বন্ধু মিলে শুরু করি।

 

অপরিকল্পিতভাবে শুরু করলেও কিন্তু বেশ ভালো সাড়া পাই। যার নাম দিয়েছি ‘বাগান বিলাস’। প্রতিযোগিতামূলক বাজার, তাই ব্যতিক্রমী পণ্য রাখার চেষ্টা করি। প্রথমদিকে অর্ডার পেলে পণ্য আনতাম। এখন আকর্ষণীয় সব ডিজাইন স্টকে এনে রাখি। শুধু অনলাইনেই নয় এখন ক্রেতারা এসে দেখে কিনে নিয়ে যান। প্রথম মাসে হাজার/১২শ টাকা বিক্রি হলেও এখন মাসে ২০-৪০ হাজার টাকা আয় হয়।

 

মিম আরো বলেন, দেড় বছরের লাভ থেকে হালি শহরের বিডিআর মাঠে ‘টোনাটুনি’ নামরে একটি ফুড কোর্ট দিয়েছি। সেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে দু’জন রাধুনীর। দেখাশোনার জন্য রেখছি আরও দুই বন্ধুকে।

 

মিম বলেন, ‘পরিবার থেকে সবাই খুব উৎসাহ দিয়েছেন। না হয় ছাত্রাবস্থায় এতটা করা সম্ভব হতো না। শুধু বলেছেন, পড়াশোনার যেন ক্ষতি না হয়। তোমার ভালো তুমিই বুঝবে। শুধু ঘর সাজানোর পটারি, ফুলদানিই নয়- হাঁড়ি-পাতিল, প্লেট-বাটি, কাপ-পিরিচ, জগ, পানির ফিল্টারসহ সংসারের প্রয়োজনীয় সমস্ত রকমের তৈজসপত্র পাওয়া যায় এই বাগান বিলাসে।

 

 

সংসারের ফাঁকেই
ছোটবেলার স্বপ্নপূরণ
গৃহিণী জেনীর

 

অল্প বয়সেই স্বামীর সংসারে পা দেন জান্নাতুল ফেরদৌস জেনী। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করে নিজে কিছু করার। কিন্তু গ্রাম্য পরিবেশে এমন স্বপ্ন পূরণ করা ছিল খুব কঠিন। ক্রিয়েটিভ মেয়েটি জানতেন নানারকম হাতের কাজ। বিয়ের পরও হাতের কাজ নিয়ে কিছু করার ইচ্ছা শেষ পর্যন্ত সংসারের ফাঁকেই করে দেখিয়েছেন জেনী। এখন তিনি গৃহিণী হয়েও সফল উদ্যোক্তা। জেনী জানান, বিয়ের আগেই ব্লক বাটিকের কাজ শিখেন। তখন থেকেই নিজের,পরিবারে বোন, ভাবীর জন্য কাপড় কিনে এসব কাজ করতেন। এরমধ্যে অনলাইনে মেয়েদের নানারকম হাতের কাজ দেখে স্বামীর সাথে আলাপ করি। তার সহযোগিতার ‘রঙ্গান’ নামের একটি ফেসবুক পেজে আমার যাত্রা শুরু।

 

জান্নাতুল ফেরদৌস জেনী বলেন, ২০১৯ সালে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের উপর একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিই। তারপর ঘরে বসেই বেডসিট, কুশন কভার, থ্রিপিস, শাড়ি, কুর্তি, পাঞ্জাবি, ছোটবাচ্চাদের পোশাক তৈরি ও রঙের কাজ করি। আবার ক্লের, এন্টিক, কাঠের গহনা তৈরি করে তার উপর রঙের কাজ করি। এসব গহনার বেশ চাহিদা আছে মেয়েদের মধ্যে। প্রথম মাসে ৭শ টাকা আয় হয়। তারপর প্রতিমাসে বাড়তে থাকে। এখন সব মিলিয়ে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। এখন একটি কসমেটিক্সের দোকানের ইচ্ছে আছে।

 

৫ হাজার টাকার
শাড়ির ব্যবসা এখন
লাখ ছাড়াল জুলির

 

মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় ঘরে বসেই শুরু করেছেন নারীদের দেশীয় শাড়ির ব্যবসা। অনলাইন মাধ্যমকে অবলম্বন করে সেই পাঁচ হাজার টাকা থেকে প্রায় তিন লাখ টাকার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে ফারজানা ইয়াছমিন জুলির দেশীয় শাড়ির ব্যবসা। তাঁর সাথে কথা বলে জানা যায়, এইচএসসি পাশ করার পরই বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল একটা ভালো চাকরি করার। যেহেতু এইচএসসি কোনো ভালো চাকরির আশা করা ভুল। সেখান থেকেই স্বপ্ন পুরণের পথে হাঁটার চেষ্টা করি।

 

জুলি বলেন, কাজ শেষে বেকার সময়টা অনলাইনে কাটাই। নানারকম জিনিস দেখে আইডিয়া জন্মায়। স্বামীর দেওয়া পাঁট হাজার টাকায় কিছু কাপড় কিনি। এরপর ‘ফারজানা’স কালেকশন’ নামের একটি ফেসবুক পেজ খুলি। পাশাপাশি ‘স্বদেশী পণ্যের ই-কর্মাস’ নামের একটি গ্রুপের মডারেটর হই। ফেসবুক মাধ্যমকে অবলম্বন করে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নের দিকে হাঁটছি।

 

জুলি আরও বলেন, আমি আর আমার দুই বান্ধবী মিলে নারীদের দেশীয় শাড়ি নিয়ে কাজ করছি। এখন আমাদের একটি ছোট পরিসরে কারখানাও আছে। এ মুহূর্তে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বেশি আয় হচ্ছে। পরিবারের সহায়তায় কাজটি সহজ হয়ে গেছে।

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন