যথাযথভাবে পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ না হওয়ায় প্রতি বছর ৯৫০ কোটি ডলার মূল্যের ইলেকট্রনিক পণ্য বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে। এ পেছনে গ্রাহকদের অসচেতনতাই দায়ী বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। সম্প্রতি ইউনাইটেড নেশনস ইনস্টিটিউট ফর ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসার্চের (ইউএনআইটিএআর) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম মালয়েশিয়া টুডে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যথাযথভাবে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক বর্জ্যকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে পরিণত করা সম্ভব। এ জন্য দরকার গ্রাহক পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ।
মালয়েশিয়া টুডের প্রতিবেদন বলছে, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য যেমন খেলনা, কেবল, ইলেকট্রনিক সিগারেট, টুলস, ইলেকট্রনিক টুথব্রাশ, হেডফোন ইত্যাদি ব্যবহারের পর মানুষ ফেলে দেয়। অথচ এই পণ্যগুলোর মধ্যে থাকে লিথিয়াম, সোনা, রুপা ও তামার মতো মূল্যবান ধাতু। এসব ধাতু আবার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যায় বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি (ইভি) তৈরিতে। উদাহরণ হিসেবে লিথিয়ামের কথা বলা যায়, যা গাড়ির ব্যাটারি তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইভির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে আগামী দিনগুলোতে লিথিয়ামের চাহিদাও বাড়বে।
ইউএনআইটিএআরের গবেষণায় বলা হয়েছে, আগামী বছরগুলোতে নবায়নযোগ্য শক্তি, যোগাযোগ, মহাকাশ ও প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের সম্প্রসারণ হবে। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে শুধু ইউরোপেই তামার চাহিদা বাড়বে ছয় গুণ। কিন্তু বর্জ্য হিসেবে তামার পুনর্ব্যবহার প্রায় হয় না বললেই চলে।
ওয়েস্ট ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্ট ফোরাম নামের অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের গবেষক ম্যাগডালিনা চেরিটানোউইজ বলেন, ‘ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া ই-বর্জ্য প্রায়ই পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করা হয় না। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন দরকার। এ জন্য সচেতনতা বাড়াতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।’
গবেষকেরা বলছেন, ই-বর্জ্যের এক-তৃতীয়াংশই আসে শিশুদের ফেলে দেওয়া খেলনা থেকে। এসব খেলনার মধ্যে রয়েছে রেসিং কার, পুতুল, রোবট ও ড্রোন ইত্যাদি। সবমিলিয়ে এসব ফেলে দেওয়া খেলনার বার্ষিক বাজারমূল্য প্রায় ৭৩০ কোটি ডলার। এ ছাড়া প্রতি বছর অন্তত ৮৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ই–সিগারেট বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়।
ইউরোপের দেশগুলো ৫৫ শতাংশ ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করলেও বৈশ্বিকভাবে এ হার খুব কম। মাত্র ১৭ শতাংশ। দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকায় পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের হার আরও কম।
ফরাসি প্রতিষ্ঠান ইকোসিস্টেমের গবেষক গিউম দুপারে বলেন, সারা বিশ্বেই ই-বর্জ্যের পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের হার খুব কম। এর অর্থ হচ্ছে সচেতনতার ঘাটতি। গ্রাহক ও উৎপাদক-উভয় পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ