ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের শক্তির সামনে আফগানিস্তানের দেওয়া লক্ষ্যটাকে একেবারেই সহজসাধ্য মনে হচ্ছিল। রোহিত শর্মার রেকর্ডের বান ছোটানো সেঞ্চুরিতে লক্ষ্যটা হয়ে গেল ‘১০০ রান কিছুই না।’
রোহিতের ৮৪ বলে ১৩১ রানের পর আর কী-ই বা বাকি থাকে লক্ষ্যে পৌঁছানোর? যা-ই ছিল, অধিনায়কের বিধ্বংসী ইনিংসের পাশাপাশি ওপেনার ইশান কিষাণের ফিফটি ছুঁইছুঁই এবং তিনে নেমে কোহলির ফিফটি পেরোনো ইনিংসে ভারত লক্ষ্যটা পেরিয়ে গেছে ৮ উইকেট হাতে রেখে। আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫২ বল হাতে রেখে জয়টা রানরেটে যা এগিয়ে দিয়েছিল, আজ রানরেটে আরও উচ্চলম্ফ দিয়েছে ভারত। জিতেছে ৯০ বল হাতে রেখে।
ইনিংসের শুরু থেকেই চার-ছক্কা হাঁকানো শুরু করে রোহিত। প্রথম পাঁচ ওভারের মধ্যে ৪টি চার আর এক ছক্কায় ‘ইন্টেন্ট’ বুঝিয়ে দিয়েছেন। তখন আফগান বোলাররা কী আর বুঝতে পেরেছিলেন, ওটা ছিল আসলে হাত মকশো! কী ঝড় তুলেছেন রোহিত, সেটা বোঝা যেতে পারে একটা তথ্যে প্রথম দশ ওভারে ভারত তুলেছে ৯১ রান, তাতে রোহিতের ওপেনিং সঙ্গী ইশান কিষাণের অবদান ১১, রোহিতের রান ততক্ষণে ৪৩ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৬!
ফিফটি তো ৩০তম বলেই করে ফেলেছেন, যা এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি। তবে ওসব ছোটখাটো রেকর্ড নিয়ে হিসাবের তখন সময় নেই। দশ ওভার শেষে ৭৬ রানে থাকা রোহিতের ততক্ষণে আরও দুটি রেকর্ড ভাঙা হয়ে গেছে। চার ছক্কার তৃতীয়টিতে পেরিয়ে গেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্রিস গেইলের সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড (গেইলের ৫৫৩, রোহিতের ৫৫৪)। তারও আগে ইনিংসে ২৩ রান করতেই বিশ্বকাপে ১০০০ রান হয়ে গেছে রোহিতের, তাতে বিশ্বকাপে দ্রুততম হাজার রানের রেকর্ডের শীর্ষে বসেছেন ডেভিড ওয়ার্নারের পাশে (১৯ ইনিংস)।
অতঃপর রোহিতের সেঞ্চুরি হইল! মাত্র ৬৩ বল লাগল তাতে, এবং এতেও একটা রেকর্ড ভারতের হয়ে বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরি। তার কিছুক্ষণ ১১২ বলে ১৫৬ রানের উদ্বোধনী জুটিটা ভাঙল কিষাণ হাল ছেড়ে দেয়ায় (৪৭ বলে ৪৭), কিন্তু রোহিত অন্যপ্রান্তে অবিচল। কোহলি অন্য প্রান্তে এসে সিঙ্গেল নিয়ে নিয়ে রোহিতকে বারবার স্ট্রাইক দিচ্ছিলেন, তাঁরও বুঝি রোহিতের মার দেখার লোভ হচ্ছিল।
রোহিতও মেরেই গেছেন। শেষ পর্যন্ত রশিদ খানকে সুইপ করার চেষ্টায় যখন বোল্ড হয়ে ফিরছেন, ৮৪ বলে ১৬ চার আর ৫ ছক্কায় ১৩১ রানের ইনিংসে দিল্লির গ্যালারির স্ট্যান্ডিং ওভেশান আদায় করে নিয়েছেন। ভারতের জয়-হার নিয়ে উদ্বায়ু প্রশ্ন-টশ্ন তো তারও অনেক আগেই হাওয়া। রোহিত আউট হওয়ার সময়েই তো ভারতের রান হয়ে গেছে ২৫.৪ ওভারে ২০৫!
বাকি কাজটা কোহলির আর কী লাগে! শ্রেয়াস আইয়ারকে (২৩ বলে ২৫) সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন রানের জুটিতে ভারতকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন, তার আগে ম্যাচের ‘ফুটনোট’ হয়ে থাকার মতো একটা ফিফটিও তুলে নিয়েছেন। নিজের মাঠে কোহলি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন ৫৬ বলে ৬ চারে ৫৫ রানে।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ