দু’পাশে অপরিকল্পিত স্থাপনার কারণে একসময়ের গতির সড়ক বন্দর টোল রোড এখন ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরির অঘোষিত টার্মিনালে পরিণত হয়েছে। রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকা এসব গাড়ির কারণে বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ছোটখাট যানজট লেগেই থাকে। বর্তমানে এর পশ্চিম পাশে নির্মিত আউটার রিং রোড গতির সড়ক হিসেবে চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের কাছে বেশ পরিচিত এবং আকর্ষণীয়। কিন্তু নবনির্মিত এই সড়কটি ঘিরেও একইভাবে গড়ে উঠছে বেশ কিছু অপরিকল্পিত স্থাপনা। যার কারণে স্বল্প সময়ের মধ্যে এ সড়কটি টোল রোডের মতোই যানজটপূর্ণ ও ধীরগতির সড়কে পরিণত হওয়ার শঙ্কায় পড়েছে। গতকাল আউটার রিং রোড ঘুরে দেখা গেছে, উত্তর হালিশহর চৌচালা সড়কের উত্তরে চৌধুরী পাড়া সংযোগ সড়ক থেকে মাত্র ৫ শ গজের মধ্যে আউটার রিং রোডের পূর্বপাশে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে ৭টি সংযোগ সড়ক। এর মধ্যে কয়েকটি ট্রাক টার্নিমাল চালু করা হয়েছে এবং কয়েকটিতে মাটি ভরাট করে টার্মিনাল অথবা গ্যারেজ নির্মাণের জন্য উপযুক্ত করা হচ্ছে। সড়ক চালুর সময় চৌচালা থেকে পূর্বপাশের পুরো জায়গাজুড়ে লোহার পাত দিয়ে ঘেরা দিয়েছিল সিডিএ। কিন্তু কোন প্রকার অনুমোদন না নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে রাতের আঁধারে লোহার পাত কেটে মাটি ভরাট ও সড়ক নির্মাণ করে এসব স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। মূল সড়কের সাথে আড়াআড়িভাবে সংযুক্ত থাকার কারণে এসব ব্যক্তিগত সড়ক দিয়ে বড় গাড়ি উঠানামা করার সময় দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়ছে। পাশাপাশি গতিহীন হয়ে পড়ছে মূল সড়কে চলাচলকারী যানবাহন। অথচ নগরীর যানজট কমানো ও বিমানবন্দর এলাকায় দ্রুত যাতায়াতের জন্য এ সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
বর্তমানে এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার গাড়ি চলাচল করছে। আগামীতে কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে এ সড়কে চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যা আরও অনেকগুণ বেড়ে যাবে। অথচ তার আগেই অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণে হুমকির মুখে পড়েছে সড়কটি।
শুধু এই এলাকায় নয়, পুরো আউটার রিং রোড ঘিরে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এসব অবৈধ ও অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করা না গেলে অদূর ভবিষ্যতে অকার্যকর সড়কে পরিণত হবে আউটার রিং রোড। এর প্রকৃত সুফল পাবে না চট্টগ্রামের বাসিন্দারা।
নির্মাণের পর থেকে আউটার রিং রোড দিয়ে চলাচল করে আসছেন ইপিজেডে কর্মরত কাট্টলী এলাকার বাসিন্দা সামু চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রথম দিকে কাট্টলী থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ইপিজেড এলাকায় পৌঁছে যেতাম। কিন্তু ধীরে ধীরে সময় যেন বেড়ে যাচ্ছে। রাস্তার পাশ থেকে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান উঠানামার কারণে গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে। বর্তমানে যে হারে স্থাপনা হচ্ছে তাতে টোল রোডের মতোই গতিহীন হয়ে পড়বে এ সড়ক। উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ এলাকায় চলছে সর্ববৃহৎ প্রকল্প বে-টার্মিনাল নির্মাণের কাজ। এটা চালু হলে পাল্টে যাবে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যের চিত্র। আর সে আশাতেই একশ্রেণির মানুষ কোন প্রকার অনুমোদন না নিয়ে যত্রতত্র গড়ে তুলছে এসব স্থাপনা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক এবং সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আমরা সর্বোচ্চ গতির বিষয়টি নিশ্চিত করে এ সড়কটি নির্মাণ করেছি। এ ধরনের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ হলে সড়কটি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এতে রাস্তাটির নির্মাণের উদ্দেশ্যই ভেস্তে যাবে। তিনি আরও বলেন, লোহার তৈরি রাস্তার সীমানা প্রাচীর কেটে রাস্তা নির্মাণের বিষয়ে আমরা পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করেছি।
তবে তিনি জানান, আউটার রিং রোডের পতেঙ্গা থেকে ইপিজেড পর্যন্ত চারলেন এবং ইপিজেড থেকে রাসমনি ঘাট পর্যন্ত দুই লেনের সার্ভিস রোড নির্মাণ করা হবে। এ ব্যাপারে প্রকল্প জমা দেয়া হয়েছে। মূল সড়ক থেকে দুই তিন ফুট নিচে রাস্তার পূর্বপাশে সার্ভিস রোড নির্মাণের কাজ শুরু হলে এসব অপরিকল্পিত সড়ক ও স্থাপনা ভেঙে ফেলা হবে। তখন সার্ভিস রোড থেকে নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া কোন গাড়ি মূল সড়কে উঠতে পারবে না।
পূর্বকোণ/পিআর