ঝুঁকি জেনেও অধিক লাভের আশায় প্রতিবারের মতো এবারও আগাম টমেটো চাষ করছেন নগরীর উপকূলীয় এলাকার কৃষকরা। নগরীর পতেঙ্গা, হালিশহর ও কাট্টলী এলাকায় প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে আগাম টমেটোর চাষ করা হচ্ছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে টমেটো বাজারজাত করতে পারবেন বলে আশাবাদী এখানকার কৃষকরা।
রাসায়নিক ও ক্ষতিকর কীটনাশকমুক্ত এবং সুস্বাদু হওয়ার কারণে এখানকার উৎপাদিত টমেটোর চাহিদা থাকে আকাশচুম্বী। শীতকালে এখানে বিপুল পরিমাণ টমেটোর চাষ হয়ে থাকে। বেশি লাভের কারণে গত কয়েকবছর থেকে আগাম ফসল হিসেবে টমেটো চাষে ঝুঁকছেন এখানকার কৃষকরা। তবে আগাম চাষে ঝুঁকিও রয়েছে। গাছের যত্ন নিতে হয় সবচেয়ে বেশি। সময়মত ফলন আসে না। এছাড়া অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে জমিতে পানি জমে চারা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অপরিপক্ক অবস্থায় ফলন পেকে যাওয়ার শংকাও থেকে যায়।
গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে লাভের মুখ দেখেননি এখানকার অনেক কৃষক। এদের একজন হালিশহরের কৃষক জাহিদ বলেন, স্লুইস গেট নষ্ট থাকায় গত বছর এ সময়ে নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল আগাম টমেটোর পুরো জমি। কৃষি অফিস থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোন সহযোগিতা পাইনি। ফলে সে ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তাই এবার আর ঝুঁকি নিইনি।
তবে জাহিদের মতো বসে নেই অন্য কৃষকরা। গতকাল সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চৌচালা এলাকায় টমেটোর জমিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। এরমধ্যে গাছে ফুল ও ফল দেখা দিতে শুরু করেছে। কৃষকরা প্রতিটি চারা সোজা রাখতে সাথে কঞ্চি বেঁধে দিচ্ছেন।
এদের একজন স্থানীয় কৃষক আইনুল বলেন, আড়াই কানি জমিতে এবার আগাম টমেটো চাষ করছি। সবঠিক থাকলে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ফলন পাওয়া যাবে।
আনন্দবাজারের কৃষক মো. মহসিন বলেন, প্রায় ২ হেক্টর জমিতে আগাম টমেটোর চাষ করেছি। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আগামী ৪০ দিনের মধ্যে ফসল বিক্রি করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, রিং রোডের পূর্বপাশের খাল থেকে এখানকার কৃষকরা জমিতে পানি দিয়ে থাকেন। কিন্তু মাটি ভরাট হয়ে বর্তমানে খালটি পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে জমিতে সেচ দিতে সমস্যায় পড়ছেন এখানকার কৃষকদের।
একই এলাকার কৃষক হারুন ও নাছির ও আনোয়ার চারকানিতে, শহীদুল হোসেন, নয়ন, জাহাঙ্গীর প্রত্যেকে এক থেকে দ্ধুসঢ়;ই কানি জমিতে টমেটোর আগাম চাষ করছেন। তাদের প্রত্যেকের একই চিন্তুা জমিতে পানি সেচ দিতে পারবেন কিনা। কারণ পলি জমে পাশের খালটি ভরাট হয়ে গেছে।
কাট্টলী এলাকার কৃষক মো. ইলিয়াছ বলেন, গতবার বৃষ্টির পানিতে জমি তলিয়ে গেছিল। ঝুঁকি নিয়েই এবার দুই কানি জমিতে অগ্রিম টমেটো চাষ করছি।
ডবলমুরিং জোনের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুবেল দাশ বলেন, নিরাপদ খাদ্য হিসেবে এখানে উৎপাদিত কৃষি সবজির চাহিদা বেশি। এখানে ক্ষতিকর কোন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। এবার হালিশহর এবং কাট্টলী এলাকায় প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে আগাম টমেটো চাষ হচ্ছে বলে তিনি জানান।
পতেঙ্গা জোনের উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোসাম্মত জেবুন্নেসা বলেন, আউটার রিং রোড নির্মাণের পর থেকে কৃষি জমি কিছুটা কমে গেছে। এখানে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে সাধারণভাবে চাষাবাদ হয়। এখন প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে আগাম টমেটো চাষ শুরু হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও কিছু জমিতে টমেটোর চাষ শুরু হবে। আগাম টমেটো চাষের প্রকৃত জমির পরিমাণটা তখন পাওয়া যাবে।
ডবলমুরিং জোনের মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসার কামরুম মোয়াজ্জেমা বলেন, এবারও আগাম টমেটোর চাষ হচ্ছে। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পুরো এলাকায় আগাম টমেটো চাষের সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। চৌচালা এলাকায় খাল ভরাট হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কৃষকরা এখনও এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ দেননি। তবে স্থানীয় কৃষকরা তেমন একটা ভরসা করতে পারেন না কৃষি কর্মকর্তাদের। তাদের অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে আশ্বাস দিলেও কৃষি অফিস থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা তারা পান না।
পূর্বকোণ/আরডি