চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সংঘর্ষের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। গতকাল শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে মুঠোফোনে কল করে তিনি এই ক্ষোভ জানান।
এসময় সুজন বলেন, ছাত্রলীগের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের হাত ধরেই। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ছাত্রলীগের সে গৌরবময় ইতিহাসকে ভূলুণ্ঠিত করছে কতিপয় ছাত্রনেতা। কয়দিন পর পর চবি’র পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে তারা। বছরের পর বছর ধরে পড়ালেখার নামে ক্যাম্পাসে থেকে ক্যাম্পাসকে তাদের স্বার্থ হাসিলের ঠিকানায় পরিণত করেছে। তাদের এহেন আচরণে দল ও সরকার চরমভাবে বিব্রত। তাদের এসব সংঘর্ষের সাথে সাধারণ ছাত্রদের কোন সম্পর্ক নেই। মূলত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই তাদের এসব সংঘাত ও সংঘর্ষ বলে মনে করেন চবি’র সাবেক এই শিক্ষার্থী। এতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা সেশন জটে পড়ছে। এসব সন্ত্রাসীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকসহ বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত। নচেৎ ছাত্র না হয়েও বছরের পর বছর কীভাবে ক্যাম্পাসে তারা আধিপত্য বিস্তার করছে সে প্রশ্নও রাখেন তিনি। কিছু সংখ্যক ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীচক্র সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলের জন্য তারা সর্বদা ক্যাম্পাস এবং সংগঠনকে ব্যবহার করে ছাত্রলীগকে কলুষিত করছে। তাদের এহেন কর্মকাণ্ডে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতংকে এবং অভিভাবকগণ সন্তানদের জন্য উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকেন। অথচ এমন হওয়ার কথা ছিল না? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে সবসময় দিকনির্দেশনা দেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ অতীতের যে কোন সরকারের তুলনায় বাড়িয়েছেন। সরকারের এতোসব গ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে এসব নামসর্বস্ব ছাত্রনেতা। তাদের লাগাম টেনে ধরা এখন সময়ের দাবি।
আগামী নির্বাচন পর্যন্ত চবি ছাত্রলীগের সকল কর্মকাণ্ড স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি। সুজন বলেন, ছাত্রলীগ সবসময় অত্যাচারী সরকারের খড়গের নীচে থেকে তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। বিভিন্ন স্বৈরাচারী সরকারের আমলে ছাত্রলীগের অগণিত নেতা-কর্মী মামলা-হামলার শিকার ও পঙ্গু হয়েছে, জীবন দিয়েছে। কিন্তু কোনদিন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে আপোস করেনি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সুজনের সাথে কথা বলেন। তিনি সুজনের বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করে বলেন, ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুকে লালন-পালন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মেধা ও মননের সংগঠন ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে সেভাবে তৈরি হতে হবে। ছাত্রলীগ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসগুলোতে একসময়ের অস্ত্রের ঝনঝনানি, টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্যসহ নানা অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ সর্বদা কাজ করছে। যেখানেই শিক্ষা বহির্ভূত কর্মকা কিংবা সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটবে ছাত্রলীগ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। সেইসাথে চবি’তে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ছাত্রলীগ। সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে কেউ কোন অপরাধ করে পার পাবে না।
পূর্বকোণ/আরডি