চট্টগ্রাম রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

দালালের মাধ্যমে স্বপ্নের লিবিয়া যেতে পারলেও ভাগ্যে জুটেনি কর্মসংস্থান

বাঁশখালী সংবাদদাতা

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারা, জলদী ও কাথরিয়া এলাকার ৯ প্রবাসীকে মধ্য প্রাচ্যের দেশ লিবিয়ায় আটকে রেখে নির্যাতন ও দফায় দফায় মুক্তিপণ হিসেবে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জনপ্রতি ১০-১২ লাখ টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে স্বপ্নের লিবিয়া যেতে পারলেও তাদের ভাগ্যে জুটেনি কোন কর্মসংস্থান। মা বাবা ও পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে প্রবাসে পাড়ি জমিয়ে এখন উল্টো ওই ৯ প্রবাসী পরিবারের যন্ত্রণা এবং বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে দেশের প্রকৃত ভিসা পাসপোর্ট না থাকায় দেশেও ফিরতে পারছে না এই হতভাগা প্রবাসীরা। ফলে লিবিয়ার পাহাড়ে পাহাড়ে অনেকটা অনিশ্চিত মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা।

 

স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে প্রবাসে গিয়ে আটকে পড়া ৯ প্রবাসী হলেন- বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার শহিদ উল্লাহর ছেলে রুকনুল ইসলাম আরিয়াত, একই এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে মো. মোরশেদুল আলম, আহমদ কবিরের ছেলে মোহাম্মদ কাউছার মিয়া, আবদুল মোনাফের ছেলে আজগর হোসাইন, আবদুল মজিদের ছেলে গিয়াস উদ্দিন, মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আশেক ও তার ভাই ইব্রাহিম, বাঁশখালী পৌরসভার উত্তর জলদী ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত ওমর আলীর ছেলে আইয়ুব আলী ও কাথরিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বাগমারা এলাকার আবু আহমদের ছেলে মোহাম্মদ করিম।

 

বর্তমানে তারা লিবিয়ায় বেনগাজি শেরা অ্যালবাম এলাকার পাহাড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে জানা গেছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকেলে এই ৯ প্রবাসীর স্ব স্ব পরিবারের পক্ষে তাদের স্বজনদের দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনিক সহযোগিতা ও সরকারি হস্তক্ষেপ চেয়ে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে।

 

লিখিত আবেদন ও লিবিয়ায় আটকে থাকা ৯ প্রবাসীর পরিবার সূত্র জানায়, বাঁশখালীর গণ্ডামারা, কাথরিয়া ও জলদী এলাকার এই ৯ প্রবাসী স্থানীয় মানব পাচারকারী দালাল কাথরিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে মোহাম্মদ রমিজ, একই এলাকার দুলা মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও গণ্ডামারা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার নুর হোসেনের ছেলে হেলালের মাধ্যমে ১০-১২ লাখ টাকার বিনিময়ে লিবিয়া যান। চুক্তি অনুযায়ী তাদের প্রত্যেককে ভাল বেতনে চাকরি ও কর্মসংস্থানের কথা থাকলেও স্থানীয় মানব পাচারকারী দালালরা তাদের সে দেশের মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়। লিবিয়ায় স্থানীয় মাফিয়া ও সন্ত্রাসীরা তাদের বিভিন্নস্থানে আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে ওই ৯ প্রবাসীর মাধ্যমে দেশে স্বজনদের কাছে মোবাইলে মুক্তিপণ দাবি করে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে দেশীয় দালালদের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হলেও ওই ৯ প্রবাসীকে দেশে ফেরার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি তাদের লিবিয়াতেও কোন কাজ কর্ম কিংবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়নি। এমতাবস্থায় দীর্ঘ এক-দেড় বছর ধরে বাংলাদেশি ৯ প্রবাসী সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

 

প্রবাসী রুকুনুল ইসলাম আরিয়াতের পিতা শহিদ উল্লাহ জানান, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি সন্তানদের কোন মতে দেশে ফিরিয়ে আনতে। দেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে মুক্তিপণ দিয়েও আমরা আমাদের সন্তানদের দেশে ফিরানোর কোন ব্যবস্থা করতে পারিনি। আমরা আর চাকরি কিংবা কর্মসংস্থান চাই না। সন্তানদের মুখ দেখতে চাই।

 

তিনি জানান, স্থানীয় দালালরাই আমাদের সন্তান এবং স্বজনদের জীবন দুর্বিষহ করে দিল। ভাল বেতন ও ভাল সুযোগ সুবিধার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েও আমরা সন্তানদের জীবন আজ হুমকির মুখে।

 

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন আক্তার জানান, এই বিষয়ে আমরা লিখিত আবেদন পেয়েছি। লিবিয়ায় আটকে পড়া ৯ প্রবাসীকে দেশে ফিরাতে প্রশাসনিকভাবে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে।

 

পূর্বকোণ/অভি/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট