চট্টগ্রাম উপকূলে আউটার রিং রোড চালুর পর থেকে পাল্টে যেতে শুরু করেছে পুরো এলাকার দৃশ্যপট। এর আগে টোল রোড চালুর পর দু’পাশে ট্রাক টার্মিনাল, গ্যারেজ, গোডাউনসহ নানা স্থাপনা গড়ে উঠে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারিয়েছে ঐ সড়কটি। আর তাই রিং রোড নির্মাণ শুরুর পর শঙ্কা ছিল উজাড় হয়ে যাবে উপকূলের সবুজ বেষ্টনী। কংক্রিটের স্থাপনায় হারিয়ে যাবে সৈকতের সৌন্দর্য। কিন্তু সে শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে বন বিভাগের উপকূলীয় বনায়ন প্রকল্প। সড়কটি চালু হওয়ার পর ২০২১ সালে উপকূলে নতুনভাবে বনায়ন শুরু করে বনবিভাগ। যা এখনও অবধি চলছে। আউটার রিং রোডকে ঘিরে গড়ে উঠা এসব বনায়নের ফলে দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠছে উপকূলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
গতকাল সকালে উপকূলীয় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানে বেশ বড় হয়ে উঠছে রাধা-কৃষ্ণচূড়া, আকাশমনি, ঝাউ, বাবলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। আবার কিছু কিছু জায়গায় গাছের চারা এখনও বেশ ছোট। তারপরও সবুজে যেন ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। কাট্টলী এলাকায় প্রাতভ্রমণে এসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা জামাল হোসেন। উপকূলের এ বনায়নে বেশ খুশি। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর আগেও ইটভাটার কারণে এ এলাকায় আসতে পারতাম না। ইটভাটা উচ্ছেদ করে গড়ে তোলা হয়েছে বন। এখন প্রতিদিন এখানে এসে প্রাণ ভরে নি:শ্বাস নিতে পারি। সলিমপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে দুইবছর আগে লাগানো চারাগুলো। এর মধ্যে জোয়ারের পানি আসায় একপাল গরু সৈকত এলাকা থেকে বাগানের দিকে আসতে থাকে। তবে দায়িত্বরত বনপ্রহরী দ্রুত এদের অন্যপথে সরিয়ে দেয়। পাহারার দায়িত্বে থাকা অভিশেখ বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের পালিত বিভিন্ন গবাদিপশু প্রতিদিন সকালে সৈকত এলাকায় ছেড়ে দেয়া হয়। সৈকতের ঘাস তাদের প্রধান খাদ্য। দিন শেষে এসব পশু আবারো দলবেধে ফিরে যায়। এসব গবাদি পশুর আসা-যাওয়ার সময় যাতে বাগানের ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য নজর রাখতে হয় সবচেয়ে বেশি। সুযোগ পেলেই এসব গবাদিপশু ঢুকে গাছের ক্ষতি করে।
এর আগে বনায়ন রক্ষা করতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। যাতে করে এলাকার মানুষকে সচেতন করা যায়। কিন্তু স্থানীয় কিছু বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা এখনো তৈরি হয়নি। স্থানীয় সংগঠক বিজয় বলেন, এসব গাছ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু সমাজের কিছু মানুষের কাছে এখনও সচেতনতা তৈরি হয়নি। গবাদিপশু চরানোর পাশাপাশি পাহারায় নিযুক্ত কর্মচারীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে গাছের ডাল, পাতা ভেঙে নিয়ে আসছে। এতে করে হুমকির মধ্যে পড়ছে এ বনায়ন। এদিকে বিভিন্ন স্থানে সড়কের দুপাশে এবং ডিভাইডারের মধ্যে রোপণ করা গাছগুলোও দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। কিন্তু নিয়মিত পরিচর্যা না থাকায় আগাছা বেড়ে এসব গাছ ঠিকমত বেড়ে উঠতে পারছে না।
আউটার রিং রোডের পাশে আরও নতুন বনায়ন সৃষ্টির কাজ চলছে। এরমধ্যে চলতি বছরে নতুনভাবে চারটি স্পটে ১০ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। উপকূলীয় বন বিভাগের কাট্টলী বিট অফিসার আমিরুল ইসলাম বলেন, উত্তর কাট্টলী, উত্তর হালিশহর ও আকমল আলী রোড এলাকার চারটি স্পটে এবার নতুন করে গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। উপকূলীয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং সৈকত এলাকার সৌন্দর্যবর্ধনে রোপণ করা হচ্ছে এসব গাছের চারা। গাছ পরিচর্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে বরাদ্দ চাওয়া হবে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে গাছ পরিচর্যার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে সদ্য দায়িত্ব পাওয়া চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘দু’তিন দিন আগে দায়িত্ব নিয়েছি। এখনও পুরো এলাকাটি ঘুরে দেখা হয়নি। তবে বনায়ন রক্ষায় সবরকম ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তিনি বন বিভাগের রোপণ করা এসব গাছ রক্ষায় স্থানীয়দের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, পরিপূর্ণ বনায়ন করা গেলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন উপকূলের বাসিন্দারা।
পূর্বকোণ/পিআর