চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাণ্ডবের ঘটনায় ছাত্রলীগ দায়ী নয় বলে দাবি করছে সংগঠনটি। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদারের কাছে স্মারকলিপির মাধ্যমে এমন দাবি করেন তারা। এসময় তাণ্ডবের ঘটনায় প্রশাসন করা মামলায় ১২ ছাত্রলীগের কর্মীকে আসামি করার নিন্দা জানিয়ে ৭ দফা দাবি জানান ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু।
দাবিগুলো হলো- দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের উন্নত চিকিৎসা প্রদান করতে হবে, নিরাপরাধ ছাত্রদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে, সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিচার করা, দুর্ঘটনার গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনার সুষ্টু তদন্ত করা, শাটলের সংখ্যা ও শিডিউল বাড়ানো, শাটল ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানো এবং ক্যাম্পাস ও শাটলের নিরাপত্তা জোরদার করা।
ছাত্রলীগের স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শাটলে শিক্ষার্থী আহতের দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। শাটলের সংকট ও অপব্যবস্থাপনার দরুণ এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে গণজোয়ারে রূপ নেয়। সেই শান্তিপূর্ণ অধিকার আন্দোলনের সময় কিছু বিশৃঙ্খলাকারী আন্দোলনের মধ্যে বিশৃঙ্খলা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ভবনসহ অন্যান্য সরকারি সম্পত্তিতে ভাঙচুর চালায়।
এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশাসন মামলা করে। কিন্তু সেই মামলা দায়ের করা হয় কতিপয় নিরপরাধী এবং ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন ছাত্রলীগ কর্মীদের উপর। যা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে নিপীড়নের শামিল। নিরপরাধ এই শিক্ষার্থীদের উপর অবিচার ও ভিত্তিহীন মামলার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
সেই সাথে অনতিবিলম্বে নিরাপরাধ ছাত্রলীগ কর্মীদের হেয়প্রতিপন্ন করা মামলা হতে অব্যাহতি প্রদান করার জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল বডি মামলার সিদ্ধান্ত নেয়। আমার বক্তব্য স্পষ্ট- তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে যদি অভিযুক্তদের নাম দেওয়া হয়, তাহলে নিরাপরাধদের নাম কেন আসল? একই সাথে আমরা প্রমাণ চাওয়ায় ফুটেজ দেখাতে আগ্রহী হননি প্রশাসন। পরবর্তীতে প্রক্টর জানায় মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। পুলিশ অভিযুক্তদের নাম যোগ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার বলেন, ভাঙচুরের ঘটনায় দুইটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সত্যি কেউ নিরাপরাধ থাকলে তার শাস্তি হবে না।
প্রসঙ্গত, গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে শাটল ট্রেনের ছাদে যাতায়াত করতে গিয়ে গাছের আঘাতে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হন। এর পরপরেই শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এর মধ্যে আহত একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে জিরো পয়েন্টে অবস্থিত পুলিশ বক্স, উপাচার্যের বাসভবন, পরিবহন দপ্তরে ও শিক্ষক ক্লাবে ব্যপক ভাঙচুর চালান। এ ঘটনায় ১৪ জনকে আসামি করে অজ্ঞাত আরও ৯০০ শিক্ষার্থীকে বাদি করে মামলা করেছে প্রশাসন। মামলায় নাম উল্লেখিত ১৪ আসামির মধ্যে ১২ জনই ছাত্রলীগ কর্মী। এছাড়া এক সাবেক শিক্ষার্থী বাড়িতে থেকেও মামলার আসামি হয়েছে।
পূর্বকোণ/এএইচ