আন্তঃনগর ও এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোর দায়িত্ব থেকে নিজেদের নিরাপত্তা বাহিনী- আরএনবিকে সরিয়ে দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে এসব ট্রেনে আর দায়িত্ব পালন করছেন না আরএনবির সদস্যরা। দূরপাল্লার ট্রেনগুলো থেকে আরএনবি সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেয়ায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। ট্রেনগুলোতে অবৈধ, নিষিদ্ধ বা চোরাচালানের মালামাল পরিবহন বৃদ্ধির শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট কার্যালয়ের চাহিদার প্রেক্ষিতে ২০০৬ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে আন্তঃনগর ও এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোতে আরএনবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। ভ্রমণকালে অবৈধ, নিষিদ্ধ বা চোরাচালানের মালামাল যাতে ট্রেনে পরিবহন করা না হয় এবং এলার্ম চেইন পুলিং করে যাতে কোনো দুষ্কৃতিকারী ট্রেনে উঠতে না পারে সেজন্য আরএনবি সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
তবে ১৭ বছর পর গত ৩১ আগস্ট নতুন নির্দেশনায় ১ সেপ্টেম্বর থেকে আন্তঃনগর ও এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোতে আরএনবি সদস্য মোতায়েন পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়। আরএনবির চিফ কমান্ড্যান্ট (পূর্ব) কার্যালয়ের সহকারী কমান্ড্যান্ট (সদর) রোকনুজ্জামান খান স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়- রেলভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মাসিক পরিচালন ও পর্যালোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জিআরপি (রেলওয়ে পুলিশ) সদস্যদের সঙ্গে একটি আন্তঃনগর বা এক্সপ্রেস ট্রেনে আরএনবির ২-৩ জন সিপাহী বা হাবিলদার এবং ১ জন ইনচার্জ দায়িত্ব পালন করেন। এ জন্য তাদের মূল বেতন অনুযায়ী টিএ-ডিএ দেয়া হয়। রেশন ও ঝুঁকি ভাতা না থাকায় ট্রেনে দায়িত্ব পালন করে পাওয়া টিএ-ডিএ আরএনবি সদস্যদের আয়ের অন্যতম উৎস। এখন দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ায় আরএনবি সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
আরএনবির সদস্যরা বলছেন- একেকটি আন্তঃনগর বা এক্সপ্রেস ট্রেনে ১ হাজার পর্যন্ত যাত্রী যাতায়াত করেন। ১২-১৬টি বগি থাকে। অথচ এসব ট্রেনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন অল্প সংখ্যক জিআরপি ও আরএনবি সদস্য। জনবলের অভাবে দিন দিন ট্রেনে ছিনতাই, চুরি, মাদক চোরাচালানের ঘটনা বাড়ছে। এই অবস্থায় ট্রেনের নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে আরএনবি সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেয়ায় অপরাধ আরো বাড়বে।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে আরএনবির একজন কর্মকর্তা পূর্বকোণকে বলেন, ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সহিংসতা বাড়তে পারে। ২০১৩-১৪ সালের মতো রেললাইন অবরোধ বা জ¦ালাও-পোড়াওয়ের ঘটনা ঘটতে পারে। এসব মোকাবিলায় প্রতিটি ট্রেনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। এখন বাড়ানোর পরিবর্তে উল্টো প্রত্যাহারে কারা লাভবান হবেন জানি না।
আরএনবির আরেকজন কর্মকর্তা পূর্বকোণকে বলেন, লাগেজ ভ্যানে আরএনবির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলে নিষিদ্ধ বা চোরাচালানের মালামাল ট্রেনে পরিবহন করা কঠিন। এ কারণে আরএনবিকে সরাতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র রেলওয়েকে প্রভাবিত করতে পারে। আইন অনুযায়ী যাত্রীদের নিরাপত্তা সুরক্ষা নিশ্চিতে রেলওয়ে পুলিশকে সহায়তা করা আমাদের দায়িত্ব। এখন সেই দায়িত্ব থেকেই আরএনবি সদস্যদের সরিয়ে দেয়া হলো।
আরএনবি সদস্যদেরকে আন্তঃনগর বা এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ায় যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘিœত হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় ট্রেনে দিন দিন চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে। যাত্রী নিরাপত্তায় যেখানে বাড়তি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন দরকার- সেখানে উল্টো প্রত্যাহার দুঃখজনক।
পূর্বকোণ/পিআর