চট্টগ্রাম সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

পলিথিন বন্ধ হবে ‘মৃত’ জুটমিলে!

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ

নগরীর জলাবদ্ধতা সৃষ্টির জন্য পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যকে দায়ী করা হয়। খোদ মেয়রের ভাষ্য, মানুষ পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য নালা-নর্দমা ও খালে ফেলায় সেগুলো ভরাট হয়ে যায়। বৃষ্টির পানি নামতে না পেরে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। তাই জলাবদ্ধতা লাঘবে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে কড়া বার্তা দিয়ে আসছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও জেলা প্রশাসন। কিন্তু পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থা না করায় বন্ধ করা যাচ্ছে পলিথিনের রমরমা ব্যবহার।  তবে পরিবেশবাদীদের অভিমত, পলিথিন বন্ধে সহায়ক হতে পারে মৃত আমিন জুটমিল। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চালু করার উদ্যোগ ও বাজার ব্যাগ তৈরি করা হলে পলিথিনের ব্যবহার আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যাবে।

 

গত ১ জুলাই থেকে চট্টগ্রামে পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল জেলা প্রশাসক। মহানগরীতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ার কারণে পলিথিন বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। শুধু জেলা প্রশাসন নয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনও নগরীর দুটি বাজারকে পলিথিনমুক্ত বাজার ঘোষণা দেয়। বিভিন্ন বাজারে পলিথিনবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে এই দুটি সংস্থা।  চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘বাজারে চট ও কাপড়ের তৈরি ব্যাগ বিতরণ এবং ব্যবহার বাড়ানো গেলে পলিথিন বন্ধে সহায়ক হবে। এজন্য নগরবাসীকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।’

 

তিনি বলেন, ‘ডাস্টবিন ও নালা-নর্দমায় পলিথিন ফেলার বিষয়ে আগের চেয়ে মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। পলিথিন বন্ধে করপোরেশন সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। আশা করছি, সময় লাগলেও পলিথিন একদিন বন্ধ হবেই।’

 

পরিবেশবাদীরা জানান, পলিথিন বন্ধে আইন থাকলেও মানুষের মধ্যে আইন না-মানা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দায়সারা কার্যক্রমের কারণে পলিথিন বন্ধ হচ্ছে না। পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ ব্যাপকভাবে বাজারজাত করতে হবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সদিচ্ছার অভাবে তা কার্যকর হচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) চট্টগ্রামের সভাপতি প্রফেসর সিকান্দর খান পূর্বকোণকে বলেন, ‘পলিথিনের বিকল্প হিসেবে বাজারে বাজারে সুলভে পর্যাপ্ত চটের ব্যাগ সরবরাহ করতে হবে। একই সঙ্গে তা ব্যবহারে কড়া নির্দেশ ও সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মানুষ তখন অভ্যস্থ হয়ে পড়বে। সরকারের সংস্থাগুলো তা না করে শুধু ষোষণা বা হুকুম জারি করে। এখন আমাদের হচ্ছে, সারাদিন ঘোষণা শুনলাম, সন্ধ্যায় পলিথিন ব্যাগ নিয়ে ঘরে ফিরলাম।’

 

প্রবীণ শিক্ষাবিদ সিকান্দর হোসেন বলেন, ‘আমাদের তো চটের ব্যাগ ছিল। এখনো পাটকল রয়েছে। এগুলো আমাদের সম্পদ। তা চালু করার মতো মেশিন ও প্রশিক্ষিত জনবল অলস বসে রয়েছে। পাটকল চালু ও ব্যাগ তৈরি করে বাজারে সয়লাভ করা গেলেই পলিথিন বন্ধ হয়ে যাবে।’

 

পলিথিন বন্ধে বাজারে চটের বা কাপড়ের ব্যাগের ব্যবহার বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছে প্রশাসন, সিটি মেয়র ও পরিবেশবাদীরা। এজন্য নগরীর আমিন জুটমিল চালু ও চর্টের ব্যাগ উৎপাদন এবং বাজারজাত করার সুপারিশ করেছেন পরিবেশবাদীরা।

 

আমিন জুটমিল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আরিফুর রহমান বলেন, ‘মিল চালু করার জন্য শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে। মেশিন, জনবল ও অন্যান্য উপকরণ প্রস্তুত রয়েছে। দেশে পর্যাপ্ত কাঁচামালও রয়েছে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলেই আমিন জুটমিল চালু করা যাবে।’

 

জুটমিল সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০২০ সালের ১ জুলাই সরকার দেশের পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণা করে। জুটমিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সোনালী আঁশখ্যাত পাটচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলেও একসময় দেশের ঐতিহ্য পাট চাষ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বাজারের ব্যাগ তৈরির জন্য সীমিত আকারে হলেও আমিন জুটমিল চালুর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেব।’

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট