চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

তীব্র লোডশেডিংয়ে হাঁসফাঁস

কেড়ে নিচ্ছে রাতের ঘুম ­­­ভোগান্তি দিনের কাজেও

নিজস্ব প্রতিবেদক

৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১২:০১ অপরাহ্ণ

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১২টার ঘরে। সারাদিনের কর্মক্লান্তি শেষে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলেন বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। ঘুমে বন্ধ হয়ে আসছিল দুই চোখ। ঠিক তখনই চলে যায় বিদ্যুৎ। লোডশেডিংয়ে মঙ্গলবার রাতের ঘুম শিকেয় ওঠে তার। শুধু বাকলিয়া এলাকা নয়- নগরজুড়েই  এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে রাতে। একবার বিদ্যুৎ গেলে আসতে লাগছে কয়েক ঘণ্টা। মধ্যরাতেও লোডশেডিংয়ের কারণে নগরবাসীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ভোগান্তি হচ্ছে বেশি। অসুস্থ হয়ে পড়ছে তারা। আর রাতের ঘুম না হওয়ায় চাকরিজীবীদের প্রভাব পড়ছে কর্মক্ষেত্রে। এছাড়া দিনের মধ্যে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কল-কারখানার কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চিকিৎসা সেবায় বিঘ্ন ঘটছে।

 

যে পরিমাণ বিদ্যুৎ দেশে উৎপাদন হয়- তার চার ভাগের এক ভাগ আসে জ¦ালানি তেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে। জ্বালানি স্বল্পতার কারণে এখন এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অধিকাংশ প্রায় বন্ধ থাকছে। এতে উৎপাদন কমে গেছে। জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। এরমধ্যে গত মঙ্গলবার পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে থাকা এসএস পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ থাকায় সংকট আরো বেড়েছে।

 

দেশে গত এক যুগে কেবল ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদই এক লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের খবর নিয়ে যখন নানা প্রশ্ন উঠছে- তখন জ্বালানি সংকটের কারণে ভয়াবহ লোডশেডিং হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদও জানাচ্ছেন অনেকে। দ্রুত জ¦ালানি তেল আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

 

লোডশেডিংয়ের কারণে বাচ্চাদের পড়াশোনা, ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানিয়েছেন খুলশী এলাকার গ্রাহক আব্দুর রহিম। তিনি পূর্বকোণকে জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে আইপিএসও চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না। মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। সে পড়তে পারছে না।

 

টেরিবাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ঈসমাইল পূর্বকোণকে জানান, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায় সমস্যা হচ্ছে তার। অন্ধকারে গ্রাহকরা দোকানে আসছে না।

 

পিডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- গতকাল বুধবার জন্মাষ্টমীর কারণে সরকারি ছুটি থাকায় অফিস-আদালত বন্ধ ছিল। এ কারণে দিনের বেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল সর্বোচ্চ ১৪শ’ মেগাওয়াট। বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১১শ’ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ ৩শ’ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল দিনে। তবে সন্ধ্যার পর পাওয়ার পিকিং প্ল্যান্ট চালুর পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়।

 

পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পূর্ব) অশোক কুমার চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, রাত ১১টার পর পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যায়। জ্বালানি তেলের সংকটের কারণে দিনে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুরোদমে চালু রাখা যাচ্ছে না। এ কারণে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। চট্টগ্রামকে লোডশেডিং মুক্ত রাখতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

 

গ্রাহকরা কৃচ্ছ সাধন করলে চলমান পরিস্থিতির কিছুটা উন্নয়ন ঘটবে বলে মনে করেন পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পশ্চিম) শহীদুল ইসলাম মৃধা। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, গরমে এসির ব্যবহার বেড়েছে। ১টি এসির বিদ্যুৎ দিয়ে ১০টি ফ্যান চালানো সম্ভব। কিন্তু বিনা প্রয়োজনে অফিসে-বাসায় এসি ব্যবহার হচ্ছে। এটি এড়ানো গেলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট