চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪

বার্মা কলোনির ‘ত্রাস’ সাইফুল

গত ৩০ আগস্ট ইমরান নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে মৃত ভেবে ফেলে যান সাইফুল ও তার বাহিনী

নাজিম মুহাম্মদ

৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ

তারা তিন সহোদর। একজন গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করছেন। অন্য দুইজন মামলার আসামি হয়ে পলাতক রয়েছেন। তবে নগরীর বায়েজিদ এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে কথায় কথায় মানুষকে মারধর, কুপিয়ে আহত করার কাজ থেকে বিরত থাকেননি। পুরো এলাকায় অনুসারীদের নিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। এই তিন সহোদর হলেন- বায়েজিদ এলাকার বার্মা কলোনির ‘ত্রাস’ সাইফুল, তার দুই ভাই- সবুজ ও ফাহিম। সর্বশেষ গত ৩০ আগস্ট বায়েজিদ হিলভিউ আবাসিক এলাকার দুই নম্বর রোডে দিনে-দুপুরে ইমরান হোসেন নামে এক যুবককে কুপিয়ে আহত করেন বার্মা সাইফুলের লোকজন। ইমরান বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় ইমরান বাদী হয়ে ১৪ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করে বায়েজিদ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

 

পুলিশ এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করছে। তবে সাইফুল ও তার ভাই ফাহিম ঘটনার পর থেকে পলাতক বলে দাবি করেছে পুলিশ। সাইফুল বায়েজিদ থানার বার্মা কলোনির মো. নুরুর আমিনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে বায়েজিদ ও পাঁচলাইশ থানায় মামলা রয়েছে ২১টি। আহত ইমরান জানান, কয়েকদিন আগে সাইফুলের অনুসারীদের বিরুদ্ধে তার বন্ধু মনছুর বায়েজিদ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ইমরানকে স্বাক্ষী করা হয়। এতে সাইফুল ক্ষিপ্ত হন। গত ৩০ আগস্ট মেয়ে ঈষাকে বাওয়া স্কুলের পাশে কোচিং সেন্টারে দিয়ে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। বেলা আনুমানিক ১টার সময় বায়েজিদ হিলভিউ আবাসিক এলাকায় দুই নম্বর রোডে আরিফ হোটেলের সামনে পৌঁছালে পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাইফুল ও তার ভাই ফাহিম তাদের অনুসারীদের নিয়ে ইমরানের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এরপর ইমরানকে একাধিক ছুরিকাঘাত করে। ইমরান মারা গেছে মনে করে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে আশপাশের লোকজন মুমূর্র্ষ ইমরানকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায়।

 

স্থানীয় লোকজন জানান, বায়েজিদ বার্মা কলোনি, হিলভিউ, রংপুর কলোনি, ফরেস্ট গেট, মান্দার টিলা, আমিন কলোনি, আলিনগর, নবীনগরসহ পুরো এলাকা অনুসারীদের নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন তিন সহোদর সাইফুল, ফাহিম ও সবুজ। সবুজ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। ওই এলাকায় কেউ কোন ধরনের নির্মাণ কাজ করলে সাইফুলকে চাঁদা দিতে হয়। মাদক বিক্রির নিয়ন্ত্রণও তার হাতে।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্মা কলোনির বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, পুরো এলাকার মাদক বেচাকেনা নিয়ন্ত্রণ করেন সাইফুল।  বায়েজিদ থানার পাশেই মান্দার টিলা এলাকা। ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন সাইফুলের ভাই ফাহিম। বার্মা কালোনির মোড়, হিলভিউ আবাসিকের এক থেকে নয় নম্বর রোড হয়ে শান্তিনগর পর্যন্ত মাদক বেচাকেনার নিয়ন্ত্রক সাইফুল। মাদক বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন আগে অনুসারীদের নিয়ে শেখ জামাল ক্লাব ভাংচুর করেন সাইফুল। ২০২১ সালের ১৬ জুন পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে আহত হয়ে গ্রেপ্তার হন সাইফুল। জামিনে বের হয়ে ফের চাঁদাবাজি, মাদক বেচাকেনায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করে হত্যার হুমকি দেন।

 

বায়েজিদ থানার ওসি ফেরদৌস জাহান জানান, ইমরান হত্যা চেষ্টা মামলায় এজাহারভুক্ত আরাফাত ও মানিক নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে দেলোয়ার হোসেন সোহেল নামে আরো এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

ওসি ফেরদৌস বলেন, সাইফুল, ফাহিম ও সবুজ তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। সবুজ বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। ইমরান হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের হওয়ার পর সাইফুল ও ফাহিম পলাতক রয়েছে। আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট