অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬ ও ১৮ ক্রিকেটার প্রাক বাছাইয়ে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গাইড লাইন অনুযায়ী বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও চট্টগ্রামের বেশ ক’জন ক্রীড়া সংগঠক জানান, প্রাক বাছাইয়ে প্রকৃত যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয়নি। যে কারণে মেধাবী ও যোগ্যদের জায়গায় প্রতিটি বয়সভিত্তিক দলই পরিণত হয়েছে ‘অনুরোধ-এর আসর’ গোছের সাজানো দলে! যদিও এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিসিবির নিয়োগপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও জেলা দলের কোচ মোমিনুল হক ও মাহবুবুল করিম মিঠু।
দু’জনে মিলে গতকাল (শুক্রবার) অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগে ৫৭ জন, অনূর্ধ্ব ১৬ বিভাগে ৫৫ জন ও অনূর্ধ্ব ১৮ বিভাগে ৫৪ জনকে বাছাই করেন। পরবর্তী প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে বিসিবি থেকে প্রেরিত ডাক্তার খেলোয়াড়দের বয়স যাচাই করে প্রাথমিক দলটি দেবেন (সম্ভবত ৩০ জনের করে) জেলা ও বিভাগীয় কোচকে। তারা দলকে অনুশীলন করিয়ে ২০ জনের স্কোয়াডে নিয়ে আসবেন, যাতে ৫ জন থাকবেন স্ট্যান্ডবাই। চট্টগ্রামের ক্রিকেটে সুদিন এখন অতীতের বিষয়।
একটা সময় টানা ৭ বারের যুব চ্যাম্পিয়ন চট্টগ্রাম এখন মাঠে নিজেদের খুঁজে ফিরছে। জেলা কিংবা বিভাগ যে কোন পর্যায়ে সাফল্যের দেখাই মিলছে না। এই যে ৩১ আগস্ট শ্রীলংকার পাল্লেকেলেতে বাংলাদেশ দল খেললো স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে, সেখানে চট্টগ্রামের কোন ক্রিকেটার কি ছিলো? ছিল না, অদূর ভবিষ্যতে দেখা মিলবে (তামিম ইকবাল, ইয়াসির আলী রাব্বী ছাড়া) তার সম্ভাবনাও প্রবল নয়। এ জন্য অনেকেই দায়ী করছেন ক্রিকেটার বাছাইয়ের কাজে অভিজ্ঞ ক্রীড়া সংগঠকদের বাইরে রাখা বা তাদের পরামর্শ না নেয়া।
সিজেকেএস ক্রিকেট কমিটির সম্পাদক আব্দুল হান্নান আকবর জানালেন, পূর্বে এ ধরনের খেলোয়াড় বাছাইয়ে ৫ সদস্যের মনোনীত প্যানেল থাকতো। কিন্তু এখন যা করা সবই করছে বিসিবি তাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে। এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আমাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, যেভাবে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে খেলোয়াড় বাছাই হচ্ছে তাতে আমি সন্তুষ্ট নই।
সিজেকেএস বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে কমিটির আহ্বায়ক ও অন্যতম ক্রীড়া সংগঠকদের একজন আলী আব্বাস বলেন, দায়িত্বে আছি বলে যে দলটি আমার কাছে পাঠানো হয় তাতে শুধু আমি স্বাক্ষর করি। তবে যে প্রক্রিয়ায় বা যেভাবে ক্রিকেটার বাছাই হচ্ছে তাতে আমার সায় নেই। বোধগম্য নয়, স্বল্প সময়ে সঠিক ও পরিকল্পিত উপায়ে যাচাই-বাছাই ছাড়া কিভাবে দল বাছাই করা হয়? ম্যাচ রেকর্ড বা অনুশীলন বাদ দিয়ে নেটে ব্যাটিং-বোলিং দেখে প্লেয়ার বাছাই করলে আর খেলোয়াড় বাছাইয়ে আন্তরিক না হলে সেটাতো তো বানরের পিঠা ভাগ করার মতই হবে! একজন ক্রিকেট সংগঠক ক্ষোভের সাথেই বলেন, গতবার এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে বাছাই করা হয়েছিল। এবার সাগরিকায় তাও আবার ইনডোরে লোকচক্ষুর অন্তরালে, কেন?
অনেকের প্রশ্ন, বিভাগীয় কোচ মোমিনুল হক ব্রাদার্স ক্রিকেট একাডেমির দায়িত্বে থেকে কিভাবে একাডেমির খেলোয়াড় বাছাই করেন। অন্যদিকে, জেলা কোচ মাহবুবুল করিম মিঠু সানরাইজ ক্রিকেট একাডেমির কোচ। দু’জনেই বিসিবির নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও বোদ্ধারা বলছেন চলমান বাছাই প্রক্রিয়া কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
সার্বিক বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে কথা হয় জেলা কোচ মাহবুবুল করিম মিঠু’র সাথে। তিনি বলেন, আমরা (মোমিনুল হকসহ) শতভাগ স্বচ্ছ থেকে ক্রিকেটার বাছাইয়ের চেষ্টা করি। কারণ, এরাই একদিন চট্টগ্রামের ক্রিকেটের পতাকা বহন করবে। চেষ্টা করি সেরা খেলোয়াড়টিকে সুযোগ দিতে। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি।
প্রায় একইসুরে কথা বললেন মোমিনুল হক। তিনি বলেন, দুই- আড়াইশ’ ক্রিকেটার থেকে আমাদের ৫০ এর আশপাশে ক্রিকেটার বাছাই করতে হয়। তিনটি ধাপ অতিক্রম করে আমরা সেরাদের বাছাই করার চেষ্টা করি। যারা বাদ পড়েছেন তাদের খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক। তবে যে প্রক্রিয়ায় ক্রিকেটার বাছাই করা হয়েছে তাতে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই।
পূর্বকোণ/আরডি