চট্টগ্রাম রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫

সচ্ছলতার স্বপ্ন ‘বস্তায় আদা চাষ’

সীতাকুণ্ডের কৃষিতে নতুন সংযোজন

সৌমিত্র চক্রবর্তী

২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১:০৮ অপরাহ্ণ

‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।’ কৃষিখাতের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে পরিত্যক্ত জমিতে চাষাবাদে কৃষকদের ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করছেন সীতাকুণ্ডের কৃষি কর্মকর্তারা। তাদের তৎপরতা ও সহযোগিতায় বাড়ির আঙিনা ও পরিত্যক্ত জমিতে শুরু হয়েছে নানারকম সবজি ও ফল চাষ। যার মধ্যে অন্যতম ‘বস্তায় আদা চাষ’। ইতোমধ্যে উপজেলার বেশ কয়েকজন কৃষক প্রথমবারের মতো এভাবে আদা চাষ করেছেন। তাদের সফলতায় আগামীতে এ পদ্ধতির চাষাবাদ আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

 

উপজেলা কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কৃষিসমৃদ্ধ সীতাকুণ্ডে এবার নতুন এক পদ্ধতিতে আদা চাষ হয়েছে। মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের সহায়তায় পরিত্যক্ত জায়গায় নতুন এ পদ্ধতিতে প্রায় এক একর জমি পরিমাণ আদা চাষ হয়েছে। এতে কৃষকরা লাখ লাখ টাকা বাড়তি আয় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

 

‘বস্তায় আদা চাষ’ নিয়ে কথা হয় উপজেলার নুনাছড়া গ্রামের কৃষক আবু তাহেরের সাথে। তিনি জানান, আগে বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতির কথা তার জানা ছিল না। কৃষি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ধারণা দেওয়ার পর তিনি ভাবলেন পরিত্যক্ত জায়গায় আদা চাষ করে যদি লাভবান হওয়া যায় তবে তো বাড়তি আয়ের একটি সুবর্ণ সুযোগ হলো। সে ভাবনা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ১০০টি জিও ব্যাগে আদা চাষ করেন।

 

তিনি আরও জানান, কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত হাতে-কলমে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করায় গাছগুলো চমৎকার হয়েছে। তিনি আশা করছেন প্রতি বস্তায় আড়াই থেকে তিন কেজি করে আদা হবে। সে হিসেবে এক শ বস্তায় আদা হবে ৩০০ কেজির মতো। এ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো আদা হবে। যার মধ্যে খরচ বাদ দিলেও ৩৫-৪০ হাজার টাকা লাভ হবে। যা অন্যান্য আয়ের সাথে যোগ হলে তার সংসার আরও সচ্ছল হবে।

 

আবু তাহের আরও বলেন, বস্তায় আদৌ আদা চাষ হবে কিনা এ নিয়ে আমি সংশয়ে ছিলাম। এখন ভালো চাষ হয়েছে। প্রতি বস্তা থেকে আশানুরূপ আদা পাবো বলে আশা করছি। তাই আগামী বছর এক হাজার বস্তায় আদা চাষ করব বলে ঠিক করেছি।

 

একইভাবে বস্তায় আদা চাষ করেছেন বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়ার কৃষক এহসান হাবীব চৌধুরী ও টেরিয়াইলের কৃষক মো. নবী। তারা জানান, আগে ধান, শিম, টমেটো, কাঁচা মরিচ, লাউ, কুমড়া, বরবটি, কাঁকরোল, করলাসহ নানান শস্য ও সবজি উৎপাদন করতেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার তারা পরীক্ষামূলকভাবে বস্তায় আদা চাষ করেছেন।

 

এ পদ্ধতির সুফল বলতে গিয়ে কৃষক নবী জানান, বাড়ির সামনে কিংবা পিছনে সবারই কিছু জায়গা পতিত অবস্থায় থাকে। যদি একটি বড় আম, জাম বা অন্য কোন ফলের গাছ থাকে তবে তার নিচের জায়গাটা খালিই পড়ে থাকে। সে খালি জায়গায় আমরা বস্তায় আদা চাষ করতে পারি। আবার কোনরকম প্রয়োজনে বস্তাগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যায়। তাতে জায়গাটি যেমন স্থায়ীভাবে আবদ্ধ হয়ে যায় না, তেমনি অব্যহৃত জায়গায় আদা চাষে হাজার হাজার টাকা বাড়তি আয় হবে।

 

তারা আরও জানান, একটি বস্তায় ৭০-৮০ গ্রাম আদার বীজ বপন করা হয়। কিন্তু এখান থেকে আড়াই-তিন কেজি পর্যন্ত আদা উৎপাদন হবে। আগামী বছর তারা আরও বেশি পরিমাণ জমিতে আদা চাষ করবেন বলে জানান।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের সহায়তায় ছায়াযুক্ত পরিত্যক্ত জমিগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কৃষকদের বস্তায় আদা চাষের পরামর্শ প্রদান করেছি আমরা। এতে আবু তাহের, নবী, এহসানসহ কৃষকরা বস্তায় এক একর জমি পরিমাণ আদা চাষ করেছেন। সবাই সফল হয়ে বাড়তি আয় করায় আগামীতে এ চাষ আরও বাড়বে বলে আমাদের বিশ্বাস।

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন